হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
৭. সতী-সাধ্বী মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া

সতী-সাধ্বী মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া আরেকটি কঠিন অপরাধ তথা কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْـمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوْا فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ»

‘‘নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী সরলমনা মু’মিন মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) রয়েছে মহা শাস্তি’’। (নূর : ২৩)

কোন সতী-সাধ্বী মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার শাস্তি:

যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারেনি তাদের প্রত্যেককে আশিটি করে বেত্রাঘাত করা হবে, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তখন থেকে তাদের পরিচয় হবে ফাসিক।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْـمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوْا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَآءَ، فَاجْلِدُوْهُمْ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً، وَلَا تَقْبَلُوْا لَـهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا، وَأُوْلَآئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ، إِلاَّ الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوْا، فَإِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ»

‘‘যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তা হলে তোমরা ওদেরকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করো, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’। (নূর : ৪-৫)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَـمَّا نَزَلَ عُذْرِيْ ؛ قَامَ رَسُوْلُ اللهِ  عَلَى الْـمِنْبَرِ، فَذَكَرَ ذَلِكَ، وَتَلَا الْـقُرْآنَ، فَلَمَّا نَزَلَ ؛ أَمَرَ بِرَجُلَيْنِ وَامْرَأَةٍ ؛ فَضُرِبُوْا حَدَّهُمْ.

‘‘যখন আমার পবিত্রতা সম্পর্কে কুর‘আন নাযিল হলো তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তা সাহাবাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। অতঃপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে দু’জন পুরুষ তথা হাস্সান বিন্ সাবিত আন্সারী ও মিস্ত্বাহ্ বিন্ উসাসাহ্ এবং একজন মহিলা তথা হা’ম্নাহ্ বিন্ত জা’হাশকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করতে আদেশ করেন। অতএব তাদেরকে সে পরিমাণ বেত্রাঘাত করা হয়’’।

(আবূ দাউদ ৪৪৭৪; তিরমিযী ৩১৮১; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১৫)

যারা নিজ স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ তারা ছাড়া এ ব্যাপারে অন্য কোন সাক্ষী নেই তা হলে তাদের প্রত্যেকেই চার চার বার এ কথা সাক্ষ্য দিবে যে, সে নিশ্চিয়ই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক যদি সে এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। মহিলাটিও এ ব্যাপারে চার চার বার সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই তার স্বামী মিথ্যাবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, নিশ্চয়ই তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব পতিত হোক যদি তার স্বামী এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَالَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ أَزْوَاجَهُمْ وَلَمْ يَكُنْ لَّـهُمْ شُهَدَآءُ إِلاَّ أَنْفُسُهُمْ فَشَهَادَةُ أَحَدِهِمْ أَرْبَعُ شَهَادَاتٍ بِاللهِ، إِنَّهُ لَـمِنَ الصَّادِقِيْنَ، وَالْـخَامِسَةُ أَنَّ لَعْنَةَ اللهِ عَلَيْهِ إِنْ كَانَ مِنَ الْكَاذِبِيْنَ، وَيَدْرَؤُا عَنْهَا الْعَذَابَ أَنْ تَشْهَدَ أَرْبَعَ شَهَادَاتٍ بِاللهِ، إِنَّهُ لَمِنَ الْكَاذِبِيْنَ، وَالْخَامِسَةَ أَنَّ غَضَبَ اللهِ عَلَيْهَا إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِيْنَ».

‘‘যারা নিজ স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো অথচ তাদের সপক্ষে তারা ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী নেই তা হলে তাদের প্রত্যেককে চার চার বার এ বলে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, সে নিশ্চয়ই সত্যবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক সে যদি এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে সে এ ব্যাপারে চার চার বার সাক্ষ্য দিলে যে, তার স্বামী নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব পতিত হোক যদি তার স্বামী এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকে’’। (নূর : ৬-৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যভিচারের অপবাদকে গুরুতর অপরাধ বলে সাব্যস্ত করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«وَتَحْسَبُوْنَهُ هَيِّنًا، وَهُوَ عِنْدَ اللهِ عَظِيْمٌ»

‘‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছো; অথচ তা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খুবই গুরুতর অপরাধ’’। (নূর : ১৫)

অপবাদ সর্বসাকুল্যে দু’ প্রকার:

১. যে অপবাদে শরীয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন: ব্যভিচার কিংবা সমকামের প্রকাশ্য অপবাদ অথবা কারোর বংশীয় পরিচয় অস্বীকার করা।

২. যে অপবাদে শরীয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণের কোন শাস্তি নেই। তবে এমতাবস্থায় অপবাদীকে শিক্ষামূলক কিছু শাস্তি অবশ্যই দেয়া হবে। যেমন: উক্ত ব্যাপারসমূহের অস্পষ্ট অপবাদ অথবা অন্য কোন ব্যাপারে অপবাদ।

যে যে কারণে অপবাদকারীকে বেত্রাঘাত করতে হয় না:

সর্বমোট চারটি কারণের যে কোন একটি কারণ পাওয়া গেলে অপবাদকারীকে আর বেত্রাঘাত করতে হয় না। যা নিম্নরূপ:

১. যাকে অপবাদ দেয়া হলো সে অপবাদকারীকে ক্ষমা করে দিলে।

২. যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে সে অপবাদকারীর অপবাদকে স্বীকার করলে।

৩. অপবাদকারী অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে কোন প্রমাণ দাঁড় করালে।

৪. পুরুষ নিজ স্ত্রীকে অপবাদ দিয়ে নিজকে লা’নত করতে রাজি হলে।

বিধানগতভাবে কাউকে অপবাদ দেয়া তিন প্রকার:

১. হারাম। অপবাদটি একেবারে মিথ্যে অথবা বানোয়াট হলে।

২. ওয়াজিব। কেউ নিজ স্ত্রীকে ঋতুমুক্তা তথা পবিত্রাবস্থায় কারোর সাথে ব্যভিচার করতে দেখলে। অথচ সে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর তার স্ত্রীর সাথে একবারও সহবাস করেনি এবং উক্ত ব্যভিচার থেকে সন্তানও জন্ম নিয়েছে।

৩. জায়িয। কেউ নিজ স্ত্রীকে কারোর সাথে ব্যভিচার করতে দেখলে। অথচ উক্ত ব্যভিচার থেকে কোন সন্তান জন্ম নেয়নি। এমতাবস্থায় সে নিজ স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিতে পারে অথবা তাকে অপবাদ না দিয়ে এমনিতেই তালাক্ব দিয়ে দিতে পারে। এমতাবস্থায় তালাক্ব দেয়াই সর্বোত্তম। কারণ, অপবাদ দিলে তার স্ত্রী অপবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মিথ্যা কসম খাবে অথবা অপবাদ স্বীকার করে অপমানিতা হবে। আর এমনিতেই তালাক্ব দিয়ে দিলে এসবের কোন ঝামেলাই থাকবে না।

কেউ কাউকে তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করেছে বলে অপবাদ দিলে এ ব্যাপারে তাকে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে অথবা সে নিজকে লা’নত করবে। তা না হলে তার স্ত্রী এবং যাকে তার সাথে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই উক্ত অপবাদের বিচার চাওয়ার অধিকার রাখবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: হিলাল বিন্ উমাইয়াহ্ (রাঃ) শারীক বিন্ সা’হ্মা’ (রাঃ) কে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করেছে বলে অপবাদ দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

الْبَيِّنَةُ أَوْ حَدٌّ فِيْ ظَهْرِكَ.

‘‘সাক্ষী-প্রমাণ দিবে। নতুবা তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হবে’’। (বুখারী ২৬৭১)