অবৈধভাবে কেউ কাউকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করলে তার শাস্তি হচ্ছে, ক্বিসাস্ তথা হত্যার পরিবর্তে হত্যা অথবা দিয়াত তথা ক্ষতিপূরণ স্বরূপ শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সম্পদ। তবে এ ব্যাপারে হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা রাজি থাকতে হবে অথবা আপোস-মীমাংসার মাধ্যমে নির্ধারিত সম্পদ। অনুরূপভাবে হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা হত্যাকারীকে একেবারে ক্ষমাও করে দিতে পারে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِيْ الْقَتْلَى، الْـحُرُّ بِالْـحُرِّ، وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ، وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى، فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيْهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْـمَعْرُوْفِ وَأَدَآءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ، ذَلِكَ تَخْفِيْفٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ، فَمَنِ اعْتَدَى بَعْدَ ذَلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيْمٌ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর নিহতদের ব্যাপারে ক্বিসাস্ তথা হত্যার পরিবর্তে হত্যা নির্ধারণ করা হলো। স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী। তবে কাউকে যদি তার ভাই (মৃত ব্যক্তি) এর পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা করে দেয়া হয় তথা মৃতের ওয়ারিশরা ক্বিসাসের পরিবর্তে দিয়াত গ্রহণ করতে রাজি হয় তবে ওয়ারিশরা যেন ন্যায় সঙ্গতভাবে তা আদায়ের ব্যাপারে তাগাদা দেয় এবং হত্যাকারী যেন তা সদ্ভাবে আদায় করে। এ হচ্ছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে লঘু সংবিধান এবং (তোমাদের উপর) তাঁর একান্ত করুণা। এরপরও কেউ সীমালংঘন করলে তথা হত্যাকারীকে হত্যা করলে তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’’। (বাক্বারাহ্ : ১৭৮)
ক্বিসাস সত্যিকারার্থে কোন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। বরং তাতে এমন অনেকগুলো ফায়েদা রয়েছে যা একমাত্র বুদ্ধিমানরাই উদ্ঘাটন করতে পারেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা ক্বিসাসের ফায়েদা বা উপকার সম্পর্কে বলেন:
«وَلَكُمْ فِيْ الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَّآ أُوْلِيْ الْأَلَبَابِ، لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ»
‘‘হে জ্ঞানী লোকেরা! ক্বিসাসের মধ্যেই তোমাদের সকলের বাস্তব জীবন লুক্কায়িত আছে। (কোন হত্যাকারীর উপর ক্বিসাসের বিধান প্রয়োগ করা হলে অন্যরা এ ভয়ে আর কাউকে হত্যা করবে না। তখন অনেকগুলো তাজা জীবন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে) এতে করে হয়তো বা তোমরা আল্লাহ্ভীরু হবে’’। (বাক্বারাহ্ : ১৭৯)
আ’য়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَحِلُّ قَتْلُ مُسْلِمٍ إِلاَّ فِيْ إِحْـدَى ثَلَاثِ خِصَالٍ: زَانٍ مُحْصَنٍ فَيُرْجَمُ، وَرَجُلٍ يَقْتُلُ مُسْلِمًا مُتَعَمِّدًا فَيُقْتَلُ، وَرَجُلٍ يَخْرُجُ مِنَ الْإِسْلَامِ فَيُحَارِبُ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَيُقْتَلُ أَوْ يُصْلَبُ أَوْ يُنْفَى مِنَ الْأَرْضِ.
‘‘তিনটি কারণের কোন একটি কারণ ছাড়া অন্য যে কোন কারণে কোন মুসলিমকে হত্যা করা জায়িয নয়। উক্ত তিনটি কারণ হচ্ছে: ব্যভিচারী বিবাহিত স্বাধীন পুরুষ। তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। কেউ কোন মুসলিমকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তাকে তার পরিবর্তে হত্যা করা হবে। কেউ ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তাকে হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসি দেয়া হবে অথবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে তাড়ানো হবে তথা তাকে কোথাও স্থির হতে দেয়া যাবে না’’।
(আবূ দাউদ ৪৩৫৩ নাসায়ী : ৭/৯১; হা’কিম : ৪/৩৬৭)
আবূ শুরাইহ্ খুযা’য়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيْلٌ بَعْدَ مَقَالَتِيْ هَذِهِ فَأَهْلُهُ بَيْنَ خِيْرَتِيْنِ: إِمَّا أَنْ يَأْخُذُوْا الْعَقْلَ أَوْ يَقْتُلُوْا.
‘‘আমার এ কথার পর কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা হলে তার ওয়ারিশরা দু’টি অধিকার পাবে। দিয়াত গ্রহণ করবে অথবা হত্যাকারীকে হত্যা করবে’’। (আবূ দাউদ ৪৫০৪; তিরমিযী ১৪০৬)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ قُتِلَ فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظْرَيْنِ: إِمَّا أَنْ يُعْقَلُ، وَإِمَّا أَنْ يُّقَادَ أَهْلُ الْقَتِيْلِ.
‘‘কাউকে হত্যা করা হলে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশরা দু’টি অধিকার পাবে। তার মধ্য থেকে ভেবেচিন্তে তারা উত্তমটিই গ্রহণ করবে। তার দিয়াত নেয়া হবে অথবা তার ওয়ারিশদেরকে তার ক্বিসাস্ নেয়ার সুবিধা দেয়া হবে’’।
(বুখারী ১১২; মুসলিম ১৩৫৫; আবূ দাউদ ৪৫০৫; তিরমিযী ১৪০৬)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيْلٌ فَهُوَ بِخَيْرِ النَّظْرَيْنِ: إِمَّا أَنْ يَّعْفُوَ وَإِمَّا أَنْ يَقْتَلَ.
‘‘কাউকে হত্যা করা হলে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশরা দু’টি অধিকার পাবে। তার মধ্য থেকে ভেবেচিন্তে তারা উত্তমটিই গ্রহণ করবে। হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিবে অথবা তাকে হত্যা করবে’’। (তিরমিযী ১৪০৫)
তবে বিচারকের দায়িত্ব হচ্ছে, তিনি সর্বপ্রথম হত্যাকৃতের ওয়ারিশদেরকে ক্ষমার পরামর্শ দিবেন।
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ رُفِعَ إِلَيْهِ شَيْءٌ فِيْهِ قِصَاصٌ إِلاَّ أَمَرَ فِيْهِ بِالْعَفْوِ.
‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ক্বিসাস্ সংক্রান্ত কোন ব্যাপার উপস্থাপন করা হলে তিনি সর্বপ্রথম ক্ষমারই আদেশ করতেন’’।
(আবূ দাউদ ৪৪৯৭; ইব্নু মাজাহ্ ২৭৪২)
পিতা-মাতা অথবা দাদা-দাদী তাদের কোন সন্তানকে হত্যা করলে তাদেরকে তার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না।
’উমর বিন্ খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يُقَادُ الْوَالِدُ بِالْوَلَدِ.
‘‘পিতা-মাতা অথবা দাদা-দাদীকে তাদের সন্তান হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না’’।
(তিরমিযী ১৪০০; ইব্নু মাজাহ্ ২৭১২; আহমাদ : ১/২২ ইব্নুল জারূদ্, হাদীস ৭৮৮ বায়হাক্বী : ৮/৩৮)
তবে তাদেরকে সন্তান হত্যার দিয়াত অবশ্যই দিতে হবে এবং তারা হত্যাকৃতের ওয়ারিসি সম্পত্তি হিসেবে উক্ত দিয়াতের কোন অংশই পাবে না।
এ ছাড়াও হত্যাকারী ব্যক্তি হত্যাকৃত ব্যক্তির যে কোন ধরনের ওয়ারিশ হলেও সে উক্ত ব্যক্তির ওয়ারিসি সম্পত্তির কিছুই পাবে না। এমনকি দিয়াতের কোন অংশও নয়।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الْقَاتِلُ لَا يَرِثُ.
‘‘হত্যাকারী ব্যক্তি কোন মিরাসই পাবে না’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬৯৫)
হত্যাকারী কোন মুসলিমকে কোন কাফির হত্যার পরিবর্তে ক্বিসাস্ হিসেবে হত্যা করা যাবে না। বরং তাকে উক্ত হত্যার পরিবর্তে দিয়াত দিতে হবে।
‘আলী, আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يُقْتَلُ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ.
‘‘কোন মুসলিমকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না’’।
(বুখারী ১১১; আবূ দাউদ ৪৫৩০; তিরমিযী ১৪১২ নাসায়ী : ৮/১৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৭০৮, ২৭০৯, ২৭১০ আহমাদ্ : ১/১২২; হা’কিম : ২/১৫৩)
হত্যাকারী যে কোন পুরুষকে যে কোন মহিলা হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে। অনুরূপভাবে হত্যাকারী ব্যক্তি যেভাবে হত্যাকৃত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ঠিক সেভাবেই হত্যাকারীকে হত্যা করা হবে।
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
إِنَّ يَهُوْدِيًّا رَضَّ رَأْسَ جَارِيَةٍ بَيْنَ حَجَرَيْنِ، قِيْلَ: مَنْ فَعَـلَ هَذَا بِكِ، أَفُلَانٌ؟ أَفُلَانٌ، حَتَّى سُمِّيَ الْيَهُوْدِيُّ، فَأَوْمَأَتْ بِرَأْسِهَا، فَأُخِذَ الْيَهُوْدِيُّ فَاعْتَرَفَ، فَأَمَرَ بِهِ النَّبِيُّ فَرُضَّ رَأْسُهُ بَيْنَ حَجَرَيْنِ.
‘‘জনৈক ইহুদি ব্যক্তি দু’টি পাথরের মাঝে এক আন্সারী মেয়ের মাথা রেখে তা পিষে দিলে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কে সে ব্যক্তি যে তোমার সাথে এমন ব্যবহার করলো? ওমুক না ওমুক। একে একে অনেকের নামই তার সামনে উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষে তার সামনে ইহুদিটির নাম উল্লেখ করা হলে সে মাথা দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞাসাকারীর প্রতি সমর্থন জানায় এবং ইহুদিটিকে পাকড়াও করা হলে সে তা স্বীকারও করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপভাবে তার মাথা পিষে দেয়ার আদেশ জারি করেন এবং তাঁর আদেশ যথোচিত কার্যকরী করা হয়’’।
(বুখারী ২৪১৩; মুসলিম ১৬৭২; আবূ দাউদ ৪৫৩৫; ইব্নু মাজাহ্ ২৭১৫, ২৭১৬)
হত্যাকারী ছাড়া অন্য কাউকে কারোর হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلاَّ عَلَيْهَا، وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرَى»
‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী। কোন পাপীই অন্যের পাপের বোঝা নিজে বহন করবে না’’। (আন্‘আম : ১৬৪)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُوْمًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا، فَلَا يُسْرِفْ فِّيْ الْقَتْلِ، إِنَّهُ كَانَ مَنْصُوْرًا»
‘‘কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার ওয়ারিশকে আমি (আল্লাহ্) ক্বিসাস্ গ্রহণের অধিকার দিয়ে থাকি। তবে (হত্যার পরিবর্তে) হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। (যেমন: হত্যাকারীর পরিবর্তে অন্য নির্দোষকে হত্যা, হত্যাকারীর সঙ্গে অন্য নিরপরাধকেও হত্যা অথবা হত্যাকারীকে অমানবিকভাবে হত্যা করা ইত্যাদি)। কারণ, তার এ কথা জেনে রাখা উচিৎ যে, ক্বিসাস্ নেয়ার ব্যাপারে তাকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রা’ঈল : ৩৩)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আম্র (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
إِنَّ أَعْتَى النَّاسِ عَلَى اللهِ ثَلَاثَةٌ: مَنْ قَتَلَ فِيْ حَرَمِ اللهِ، أَوْ قَتَـلَ غَيْرَ قَاتِلِهِ، أَوْ قَتَلَ لِذُحْلِ الْجَاهِلِيَّةِ.
‘‘মানব জাতির মধ্য থেকে তিন ব্যক্তিই আল্লাহ্ তা‘আলার সঙ্গে সব চাইতে বেশি গাদ্দারী করে থাকে। তারা হচ্ছে: (মক্কা-মদীনার) হারাম এলাকায় কাউকে হত্যাকারী। যে ব্যক্তি হত্যাকারীর পরিবর্তে অন্যকে হত্যা করে। শত্রুতাবশত: অন্যকে হত্যাকারী। যা বরবর যুগের নিয়ম ছিলো’’।
(আহমাদ : ২/১৭৯, ১৮৭ ইব্নু হিববান : ১৩/৩৪০)
‘আমর বিন্ আ’হ্ওয়াস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিদায় হজ্জের দিবসে নিম্নোক্ত কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন:
أَلَا لَا يَجْنِيْ جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ، وَلَا يَجْنِيْ وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ، وَلَا مَوْلُوْدٌ عَلَى وَالِدِهِ.
‘‘যে কোন অপরাধী অপরাধের জন্য সে নিজেই দায়ী। অন্য কেউ নয়। অতএব পিতার অপরাধের জন্য সন্তান দায়ী নয়। অনুরূপভাবে সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাও দায়ী নন’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৭১৯)
কেউ কাউকে এমন বস্ত্ত দিয়ে হত্যা করলে যা কর্তৃক সাধারণত কেউ কাউকে হত্যা করে না সে জন্য তাকে অবশ্যই দিয়াত দিতে হবে। এ জাতীয় হত্যা ‘‘তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যা’’ নামে পরিচিত। এ হত্যার সাথে ইচ্ছাকৃত হত্যার কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ, তাতে হত্যার সামান্যটুকু ইচ্ছা অবশ্যই পাওয়া যায়। তবে উক্ত হত্যাকে নিরেট ইচ্ছাকৃত হত্যা এ কারণেই বলা হয় না যে, যেহেতু তাতে এমন বস্ত্ত ব্যবহার করা হয়নি যা কর্তৃক সাধারণত কাউকে হত্যা করা হয়। অনুরূপভাবে এ জাতীয় হত্যাকান্ডে ক্বিসাস্ নেই বলে ভুলবশত: হত্যার সঙ্গেও এর সামান্যটুকু সাদৃশ্য থেকে যায়।
কারোর হত্যাকারীর পরিচয় পাওয়া সম্ভবপর না হলেও তার দিয়াত দিতে হয়। কারণ, কোন মুসলিমের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেয়া হবে না। তবে সরকারই সে দিয়াত বহন করবে। সে জন্য কাউকে হত্যা করা যাবে না। যেমন: কোন ভিড় শেষ হওয়ার পর সেখানে কাউকে মৃত পাওয়া গেলে।
কোন ব্যক্তি কারোর ক্বিসাস্ অথবা দিয়াত বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করলে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার অভিশাপ নিপতিত হয়।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ قُتِلَ عِمِّيًّا أَوْ رِمِّيًّا بِحَجَرٍ أَوْ سَوْطٍ أَوْ عَصًا فَعَقْلُهُ عَقْلُ الْـخَطَإِ، وَمَنْ قُتِلَ عَمْدًا فَهُوَ قَوَدٌ، وَمَنْ حَالَ دُوْنَهُ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلاَ عَدْلٌ.
‘‘যার হত্যাকারীর পরিচয় মিলেনি অথবা যাকে পাথর মেরে কিংবা লাঠি ও বেত্রাঘাতে হত্যা করা হয়েছে তার দিয়াত হচ্ছে ভুলবশত হত্যার দিয়্যাত। তবে যাকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করা হয়েছে তার শাস্তি হবে ক্বিসাস্। যে ব্যক্তি উক্ত ক্বিসাস্ বা দিয়াত বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার পক্ষ থেকে কোন প্রকার তাওবা অথবা ফিদ্য়া (ক্ষতিপূরণ) গ্রহণ করা হবে না। অন্য অর্থে, তার পক্ষ থেকে কোন ফরয ও নফল ইবাদাত গ্রহণ করা হবে না’’।
(আবূ দাউদ ৪৫৪০, ৪৫৯১ নাসায়ী : ৮/৩৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৮৫)