সূরা আরাফে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ، قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ، وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ، فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ، فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ، وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ، قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ، رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ
যাদুকররা বলল, হে মূসা আপনি (প্রথম) নিক্ষেপ করবেন না হয় আমরা নিক্ষেপ করব। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, নিক্ষেপ কর। এরপর যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন লোকদের দৃষ্টিকে যাদু করল এবং তাদেরকে ভীত করে তুলল। আর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে নির্দেশ দিলাম যে, আপনি আপনার লাঠিটি নিক্ষেপ করুন। অতঃপর মুহুর্তেই সেই লাঠি (সাপে পরিণত হয়ে) তাদের সমস্ত যাদু বস্তুগুলো গিলে ফেলল। অতঃপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হল আর তাদের কৃতকর্ম ধ্বংস হয়ে গেল। সেখানেই তারা পরাজিত হল এবং তারা লাঞ্ছিত হল। আর যাদুকর সকলেই সেজদায় লুটিয়ে পড়ল। তারা বলল আমরা বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি বিশ্বাস স্থান করেছি মূসা ও হারুণের প্রভুর প্রতি ঈমান এনেছি। (সূরা আরাফঃ ১১৫-১২২)
আর সূরা ত্বা-হায় আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَىٰ، قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَىٰ
অর্থঃ “ সেই যাদুকরগণ বলল হে মূসা আপনি প্রথম নিক্ষেপ করবেন না কি আমরা প্রথম নিক্ষেপ করব। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন বরং তোমরাই প্রথম নিক্ষেপ কর। অতঃপর মুহুর্তেই তাদের রশি ও লাঠিসমূহ তাদের যাদুর দ্বারা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট মনে হয় যে ওগুলো দৌড়াচ্ছে। (সূরা ত্বা-হাঃ ৬৫,৬৬)
১। মানুষ কোন স্থিতিশীলবস্তুকে চলতে দেখতে পায়, আবার চলমানকে আচল জড় পদার্থের মত দেখতে পায়।
২। বড় ধরণের বস্তুকে ছোট আর ছোটকে বড় দেখতে পায়।
৩। একটি বস্তু অন্য কোন বস্তুতে রূপান্তরিত দেখা। যেমনঃ মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সময়কালের যাদুর দ্বারা রশি আর লাঠিকে অজগর সাপের রূপে দেখতে পেয়েছিল।
যাদুকর সাধারণ বা সবার কাছে পরিচিত কোন বস্তু সামনে নিয়ে আসে। অতঃপর নিজে শিরকযুক্ত মন্ত্র পড়ে শয়তানের কাছে প্রার্থনা করে। অতঃপর শয়তানের সাহায্যে সেই বস্তুটি অন্য কোন রূপ দিয়ে দেখানো হয়। এমনি এক ঘটনা এক ব্যক্তি আমার কাছে বর্ণনা করেছে, এক যাদুকর লোকজনের সামনে ডিম রেখে খুব দ্রুত ঘুরায়। অন্য একটি ঘটনা বর্ণনা করল যে, যাদুকর দু'পাথরকে পরস্পর সংঘর্ষ করে দেখতে দেখা যায় দুই ছাগল লড়ে। এসবের উদ্দেশ্য হল মানুষকে অবাক করে তাদের থেকে অর্থ লুটিয়ে নেয়া।
কখনও আবার যাদুকর এই প্রকার যাদুকে অন্য প্রকার যাদুর জন্যে কাজে লাগায়। যেমনঃ স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের যাদু দ্বারা সুন্দরী স্ত্রীকে কুৎসিত রূপে দেখতে পায় তার স্বামী। আর আসক্তকারী যাদুতে কুৎসিত স্ত্রী সুন্দরীরূপে দেখতে পায় তার স্বামী। আর এ প্রকার যাদু অন্য প্রকারগুলি হতে ভিন্ন যাকে ভেল্কিবাজি বলা হয়। আর সাধারণত হাতের ম্যার-প্যাচের উপর নির্ভর করে।
এই যাদুকে প্রত্যেক এমন নেক কাজ দ্বারা ভঙ্গ করা যায়, যার দ্বারা শয়তানকে তাড়ানো হয়। যেমনঃ
(১) আযান,
(২) আয়াতুল কুরসী,
(৩) শয়তান বিতাড়িতকারী দু'আ-দরূদ ও
(৪) বিসমিল্লাহ বলা। তবে এসব কিছু ওযু অবস্থায় করতে হবে।
ভেল্কিবাজি যাদুর ক্ষেত্রে উক্ত ব্যবস্থা নেয়ার পরও যদি তা নষ্ট না হয়, সে আসলে যাদুকর নয়।
এক যাদুকরের কুরআনকে ঘুরানোঃ
মিশরের এক যাদুকর কুরআন ঘুরিয়ে তার তেলেসমাতি জাহের করত লোকজনের সামনে। কুরআনে এক সূতা বেঁধে সেটাকে চাবির সাথে বেঁধে দিত এরপর কুরআন উপরে উঠিয়ে লটকিয়ে রেখে কিছু মন্ত্র পড়ে কুরআনকে বলত ডানে ঘুর আর কুরআন ডানে ভন ভন করে ঘুরত, বামে ঘুরতে বললে বামে ঘুরত। এভাবে মানুষ ফিতনায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম কেননা কুরআনের সাথে এ যাদু। আমি যাদুকরকে চ্যালেঞ্জ করে বললাম আমার সামনে যাদু দেখাতে পারবে না। লোকজন আমার কথা শুনে অবাক হল। আমার সাথে এক যুবক ছিল তাকে অন্য প্রান্তে বসতে বললাম। আমি আমার সাথীকে বললাম বার বার আয়াতুল কুরসী পড়তে থাক। এবার সে আয়াতুল কুরসী পড়তে লাগল। আর আমিও অন্য প্রান্তে আয়াতুল কুরসী পড়তে লাগলাম। অন্যদিকে যাদুকর তার যাদুমন্ত্র শেষ করে কুরআনকে বলল যে, ডান দিকে ঘুর এবার আর ঘুরছে না। দ্বিতীয়বার সে তার যাদুমন্ত্র পড়ে বলল বামে ঘুর; কিন্তু তার যাদু বিফলে গেল। কুরআন নিজ স্থানে অবস্থান করছে। এভাবে আল্লাহ তায়ালা যাদুকরকে লোক সমাগমের সম্মুখে অপদস্ত করেছেন ।
وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ
অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাকেই সাহায্য করে যে, আল্লাহর আনুগত্য করে।" (সূরা হজ্জঃ ৪০)