এই অধ্যায়ে ইনশাআল্লাহ যাদুর দ্বারা আক্রান্ত রোগের প্রকারভেদ ও এর প্রতিকার কুরআন ও হাদীসের আলোকে কি পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব। প্রকাশ থাকে যে, এ অধ্যায় ও অন্যান্য অধ্যায়ে চিকিৎসা বিষয়ে আরো অনেক এমন বিষয়ও পাওয়া যাবে যা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বিশেষ কোন চিকিৎসার ব্যাপারে সরাসরি সাব্যস্ত নয় তবে সেই মৌলিক সূত্রের অন্তর্ভুক্ত পাওয়া যাবে যা কুরআন ও হাদীসে সাব্যস্ত। যেমনঃ কোন এক চিকিৎসা একটি আয়াত বা বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াতে থাকতে পারে। সুতরাং তা সবগুলিই নিম্নের আয়াতের নির্দেশনার আওতায় ।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ
অর্থঃ “আর আমার অবতরণ করা কুরআনের আয়াতে মু'মিনদের জন্যে আরোগ্য এবং রহমত রয়েছে।" (সূরা ইসরাঃ ৮২)
কোন কোন ইমাম বলেনঃ আয়াতে শিফা বা আরোগ্য বলতে আভ্যন্তরীণ আরোগ্যকে বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ সংশয়, শিরক, কুফর ইত্যাদি রোগের আরোগ্য। কেউ বলেনঃ দৈহিক ও আত্মিক উভয় রোগের আরোগ্য।
অন্য এক হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয়, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কাছে আগমন করলেন; সে সময় তার কাছে এক রমণী বসা ছিলেন, যে তার ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে চিকিৎসা করছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “তাকে আল্লাহর কিতাব দ্বারা চিকিৎসা কর । (নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১৯৩১)
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের কোন বিশেষ অংশের মাধ্যমে চিকিৎসার নির্দেশ না দিয়ে সাধারণ ভাবে কুরআনের কথা উল্লেখ করেছেন। তাদ্বারা বুঝা গেল যে, সমস্ত কুরআন আরোগ্য অর্জনের উপায়। বাস্তবতার আলোকে প্রমাণিত যে, কুরআন শুধুমাত্র, যাদু, বদনজর ও হিংসারই চিকিৎসা নয়; বরং দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও চিকিৎসা রয়েছে এতে ।
কেউ যদি বলেঃ আগ্রহী যুবকবৃন্দ যেই সব আয়াত দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চিকিৎসা করেছেন সেই সব আয়াতের মাধ্যমেই চিকিৎসা করতে চায়, তাই নব প্রজন্মের অবগতির জন্যে সহীহ বুখারীর নিম্নের হাদীসটি পেশ করছি।
আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি সাহাবাদের সাথে ছিলেন। তারা একত্রে এক উপত্যকা ভ্রমণ করছিলেন। সেই উপত্যকার বাসিন্দার কাছে আতিথিয়তার আবেদন জানালেন; কিন্তু তারা তা গ্রহণ করল না। অতঃপর গোত্র প্রধানকে কোন বিষাক্ত প্রাণী দংশন করল। তখন সেখানের লোকজন দৌড়ে সাহাবাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমন আছে যে ঝাড়-ফুক জানে?
উত্তরে আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ যে আমি জানি তবে আমি ঝাড়-ফুক করব না যতক্ষণ না তোমরা এর প্রতিদান নির্ধারণ করবে। প্রতিদান নির্ধারণ হওয়ার পর তিনি ঝাড়লেন এবং অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠল। এরপর তারা সাহাবাদেরকে ছাগল দিলেন। তারা ছাগল নিয়ে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট উপস্থিত হয়ে আল্লাহর রাসূলের কাছে সব ঘটনা খুলে বললেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু সাঈদ খুদরী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কিভাবে ঝাড়-ফুক করেছিলে? উত্তরে বললেন সূরা ফাতেহা পড়ে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কিভাবে জানতে পারলে যে সূরা ফাতেহার মাধ্যমে চিকিৎসা করলে আরোগ্য লাভ হয়? আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার এই বিষয়ে কোন আপত্তি করেননি; বরং এর প্রশংসাই করেছেন।
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকার পরেও ঝাড়-ফুক করেছেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা সমর্থন করে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঝাড়-ফুকের সাধারণত কিছু মৌলিক পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, কিছু লোক নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল যে আমরা জাহিলিয়াতের যুগে ঝাড়-ফুক করতাম। তিনি বললেন সেই সব মন্ত্র আমার কাছে পেশ কর। ঝাড়-ফুক করাতে নিষেধ নেই যদি তাতে কোন শিরকযুক্ত বাক্য না থাকে। এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঝাড়-ফুক বৈধ তা কুরআন ও হাদীস দিয়ে হোক অথবা অন্য দুআর মাধ্যমে হোক এমনি জাহেলিয়্যাত যুগের ঝাড়-ফুক দিয়ে ও যদি তাতে শিরক না থাকে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ ۚ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
অর্থঃ “তারা সেই সব বিষয়ের অনুগত হয়ে গেল যেই সব বিষয় শয়তান সুলায়মান (আলাইহিস সালাম)-এর শাসনামলে পাঠ করত। অথচ সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) কখনও কুফুরি করেননি; বরং শয়তান কুফুরী করত এবং শয়তান লোকদের যাদু শিক্ষা দিত এবং বাবেলে হারুতমারুতের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিখত। আর সেই দুই ফেরেশতা কাউকে কোন কিছু শিখাতো না যতক্ষণ না তারা সতর্ক করে দিত যে, আমরা তোমাদের জন্যে পরীক্ষাস্বরূপ । সুতরাং তোমরা কুফুরি করো না। তবুও তারা তাদের কাছ থেকে এমন বিষয় শিক্ষা নিত যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো হয়। আর তারা আল্লাহ হুকুম ব্যতীত কাউকে কোন ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। আর তারা অলাভজনক ক্ষতিকর বিষয়গুলোর শিক্ষা নিত। অথচ তারা জানত যে নিশ্চয় যে ব্যক্তি এই সব ক্রয় করে নিবে তাদের জন্যে আখেরাতে কোন অংশ নেই। আর কত নিকৃষ্ট বিষয় তারা ক্রয় করেছে যদি তা তারা উপলব্ধি করত। (সূরা বাকারাঃ ১০২)
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন, ইবলীস তার আসন পানিতে (সমুদ্রে) রাখে এবং সে তার বাহিনীকে অভিযানে প্রেরণ করে আর সর্বাপেক্ষা প্রিয় সেই শয়তান হয়, যে সবার থেকে বেশি ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। অভিযান শেষে সকলেই অভিযানের সফলতা সরদার শয়তানের কাছে পেশ করতে থাকে। অতঃপর সরদার বলে, তোমরা কেউ কোন বড় ধরনের কাজ করে আসতে পারনি। অতঃপর সরদারের কাছে এক ছোট শয়তান এসে বলে, আমি অমুক ব্যক্তিকে ততক্ষণ পর্যন্ত ত্যাগ করিনি যতক্ষণ না আমি তার ও তার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছি। এরপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শয়তানের সরদার সেই ছোট শয়তানকে তার নিকটতম করে নেয় ও বলে, তুমি কতইনা উত্তম। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, বড় শয়তান ছোট শয়তানের সাথে আলিঙ্গন করে। (মুসলিম)
এ প্রকারের পরিচয়ঃ
এটি যাদুর এমন এক কর্ম যা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ বা দু’বন্ধুর মাঝে বা দু'অংশীদারের মাঝে হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।
যাদুর মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটানোর প্রকারভেদঃ
১ । মা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো।
২। পিতা ও সন্তানের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো
৩। দু'ভাইয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো।
৪ । বন্ধুদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো।
৫ । ব্যবসায় শরীকদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো।
৬ স্বামী ও স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটানো। আর এই প্রকারটি সর্বাপেক্ষা ভয়ানক এবং তা বেশি প্রচলিত।
বিচ্ছেদের যাদুর আলামত
১ । হঠাৎ ভালবাসা থেকে শক্রতায় পরিণত হওয়া ।
২। উভয়ের মাঝে অধিক সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া।
৩ । পরস্পর ক্ষমা না চাওয়া ও ক্ষমা না করা।
৪। অতিমাত্রায় মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়া যদিও তা সামান্য ব্যাপারকে কেন্দ্র করে।
৫। স্ত্রীর সৌন্দর্য অসুন্দরে পরিণত হওয়া। যদিও সে খুবই সুন্দরী হোক স্বামীর কাছে নিকৃষ্ট মনে হওয়া। আর স্ত্রীর কাছে স্বামী নিকৃষ্ট উপলব্ধি হওয়া।
৬। যাদুগ্রস্তের নিকট অপর জনের প্রত্যেক কৰ্মই অপছন্দ হওয়া।
৭। যাদুগ্ৰস্ত অপর পক্ষের বসার স্থানকে অপছন্দ করা। যেমনঃ স্বামী গৃহের বাইরে খুব ভাল করে ঘরে প্রবেশ করলেই অন্তরে অতিসংকীর্ণতা বোধ করে। ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছন্নতার যাদুর ফলে যাদুগ্ৰস্ত অপরজনকে কুদৃষ্টিতে দেখবে বা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখবে বা এ ধরনের অন্যান্য বিচ্ছেদ সৃষ্টিকারী বিষয়ে পতিত হবে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৪)
যখন কোন ব্যক্তি যাদুকরের কাছে গিয়ে বলে যে, অমুক অমুক ব্যক্তির মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিন। তখন যাদুকর তাকে সেই ব্যক্তির নাম ও তার মায়ের নাম জানাতে বলে। এছাড়া সেই ব্যক্তির কাপড়, টুপি, চুল ইত্যাদি নিয়ে আসতে বলে। আর যদি এসবগুলো পাওয়া সম্ভব না হয়, তবে সেই ব্যক্তির রাস্তায় যাদু করা পানি ঢেলে দেয়া হয় যে রাস্তায় উদ্দিষ্ট ব্যক্তি চলাফেরা করে। আর সেই পানি অতিক্রম করা মাত্রই যাদুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায়। অথবা এমনও করা হয় যে, খাদ্যদ্রব্য যাদু করে খেতে দেয়া হয়।
এর চিকিৎসা তিনটি স্তরে করতে হবেঃ
প্রথম স্তরঃ চিকিৎসার পূর্বের স্তরঃ
১। সেই ঘরে ঈমানী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেমনঃ সর্বপ্রথম সেই ঘরকে সকল প্রকার ছবি থেকে পবিত্র করতে হবে যেন ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারে।
২। সেই ঘরকে সকল প্রকার গান-বাজনা থেকে পবিত্র করতে হবে।
৩। সেই ঘরের কেউ শরীয়তের বিধান অমান্য করবে না। যেমনঃ পুরুষ সোনা পরবে না আর মহিলা বেপর্দা থাকবে না এবং কোন ব্যক্তি ধুমপান করবে না।
৪। অসুস্থ ব্যক্তির সাথে তাবীজ-কবচ, কড়ি বা এধরণের কিছু থাকলে তা খুলে জ্বালিয়ে দিবে।
৫। পরিবারের সকলকেই বিশুদ্ধ আকীদায় বিশ্বাসী হিসেবে তৈরি করা। যেন সবাই এর জন্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাথে সম্পর্ক না রাখে।
৬। অসুস্থ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হবে তার অবস্থা নির্ণয় ও তার লক্ষণ বুঝার জন্য যেমনঃ তোমার স্ত্রীকে কি কখনও তোমার নিকট ঘৃণা লাগে? তোমাদের মাঝে কি সাধারণ ও সামান্য বিষয় নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি হয়? তুমি কি ঘরের বাহিরে আনন্দ উপলব্ধি করো? আর যখনই ঘরে প্রবেশ করো তখনই কি সমস্যা অনুভব হয়? সহবাসের সময় কি কারে বিরক্ত বোধ হয়? ঘুমের মাঝে কি তাদের উভয়ের মধ্যে কেউ অস্থিরতা অনুভব বা ভীতিজনক স্বপ্ন দেখতে পায়?
চিকিৎসক উপরোক্ত প্রশ্নাবলী থেকে দু'টি বা ততোধিক যদি সঠিক হয় তবে চিকিৎসা শুরু করবে।
৭। চিকিৎসা আরম্ভ করার পূর্বে নিজে এবং সহযোগী উভয়েই ওযু করে নিবে।
৮। অসুস্থ রোগী যদি মহিলা হয়ে থাকে, তবে পর্দা অবস্থায় না হলে চিকিৎসা করবে না।
৯ । কোন এমন মহিলার চিকিৎসা করবে না, যে শরীয়ত পরিপন্থী পোশাকে রয়েছে যেমনঃ মুখ খোলা, সুগন্ধি ব্যবহৃত অবস্থায় বা নখ বড় করে কাফের মহিলা সদৃশ রয়েছে।
১০। মহিলার চিকিৎসা তার মাহরামের (একান্ত আপনজন) উপস্থিতিতে হতে হবে।
১১ । মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ তার সাথে থাকতে পারবে না।
১২। সফলতার জন্যে নিজকে সকল কলুষতা ও অন্যের প্রতি সকল আস্থা থেকে মুক্ত রাখবে। আর একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে ও তার উপরেই আস্থা রাখবে।
চিকিৎসক তার হাত রোগীর মাথায় রাখবে এবং তার কানের কাছে এই সব দু'আ ও আয়াত সতর্কতার সাথে এবং বিশুদ্ধ ও স্বজোরে পড়বে।
১।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
অর্থঃ “অভিশপ্ত শয়তান থেকে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং এর অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহর কাছে। অতি দয়ালু ও করুণাময় আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি সমস্ত বিশ্বের প্রতিপালক। যিনি অত্যন্ত দয়ালু ও করুণাময় । বিচার দিনের মালিক । আমরা কেবল তোমারি ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই প্রার্থনা করি। হে প্রভু আমাদের সরল পথ দেখাও, সেই সব ব্যক্তিদের পথ যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছ। সেই সব ব্যক্তির পথ নয় যাদের উপর তোমার অভিশাপ রয়েছে, আর পথভ্রষ্টদের পথ । (সূরা ফাতেহা)
২।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ، الم، ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ، الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ، وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ، أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থঃ “দয়ালু ও করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। (ذلك الكتاب) এই কিতাবে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। পরহেযগারদের জন্যে হেদায়াত (পথ-প্রদর্শক)। যারা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে ও আমার দেয়া সম্পদ হতে (মানব কল্যাণে) ব্যায় করে। আর যারা আপনার প্রতি অবতীর্ণ বিষয়ের (কুরআনের) উপর এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। তারাই এমন লোক যারা নিজ প্রভুর পক্ষ থেকে (পথ প্রদর্শিত) হেদায়াতপ্রাপ্ত এবং তারাই সফলতার অধিকারী। (সূরা বাকরাঃ ১-৫)
৩।
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
অর্থঃ “এবং সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা তারই অনুসরণ করছে এবং সুলাইমান কুফুরী করেননি কিন্তু শয়তানরাই কুফুরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারুত-মারুত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিতো, এবং তারা উভয়ে কাউকেও ওটা শিক্ষা দিতো না, যে পর্যন্ত তারা না বলতো যে, আমরা স্বরূপ, অতএব তুমি কুফরী করো না; অনন্তর যাতে স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করতো এবং তারা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তদ্বারা কারও অনিষ্ট সাধন করতে পারতো না এবং তারা ওটাই শিক্ষা করছে যাতে তাদের ক্ষতি হয় এবং তাদের কোন উপকার সাধিত হয় না এবং নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্যে পরকালে কোনই অংশ নেই এবং তদ্বিনিময়ে তারা যে আত্ম-বিক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট, যদি তারা তা জানতো!" (সূরা বাকারাঃ ১০২) এ আয়াতটি বেশি বেশি পড়বে।
৪।
وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ مَاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
অর্থঃ এবং তোমাদের মা’বুদ একমাত্র আল্লাহ; সেই সর্বদাতা ও করুণাময় ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা'বূদ নেই। নিশ্চয় নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের পরিবর্তনে, জাহাজসমূহের চলাচলে— যা মানুষের লাভজনক এবং সম্ভার নিয়ে সমুদ্রে চলাচল করে, আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে মৃত্যুর পর পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থ নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় সত্য জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা বাকারাঃ ১৬৩-১৬৪)
৫।
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
অর্থঃ “আল্লাহ তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি চিরজীবন্ত ও সবার রক্ষণা-বেক্ষণকারী, তন্দ্রা ও নিদ্রা তাকে স্পর্শ করে না, নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু রয়েছে সব তারই এমন কে আছে যে তার অনুমতি ব্যতীত তার নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন; তিনি যা ইচ্ছে করেন তা ব্যতীত তার অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না; তার কুরসী নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল পরিব্যপ্ত হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাকে পরিশ্রান্ত করে না এবং তিনি সমুন্নত, মহীয়ান!" (সূরা বাকরাঃ ২৫৫)
৬।
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
অর্থঃ “রাসূল তার প্রতিপালক হতে তার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করেন এবং মু’মিনগণও (বিশ্বাস করেন); তারা সবাই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর তার ফেরেশতাগণের উপর, তার গ্রন্থসমূহের উপর এবং তার রাসূলগণের উপর। আমরা তার রাসূলগণের মধ্যে কাউকেও পার্থক্য করি না, তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও স্বীকার করলাম, হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা আপনারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনারই দিকে চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তন।
কোন ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সাধ্যের অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেন না; কারণ সে যা উপার্জন করেছে তা তারই জন্যে এবং সে যা (অন্যায়) করেছে তা তারই উপর বর্তায়। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা না জেনে ভুল করি তজ্জন্যে আমাদেরকে দোষারোপ করবেন না, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের পূর্ববতীগণের উপর যেরূপ ভার অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তদ্রুপ ভার অর্পণ করবেন না; হে আমাদের প্রভু, যা আমাদের শক্তির অতীত ঐরূপ ভার বহনে আমাদেরকে বাধ্য করবেন না এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদের দয়া করুন; আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।" (সূরা বাকারাঃ ২৮৫)