এক মহিলা তার স্বামীকে অত্যন্ত ঘৃণা করত। যার উপর যাদুর প্রভাব ও আলামত অনেক স্পষ্ট ছিল। এমনকি সে তার স্বামী এবং তার বাড়ির সংসারকে চরম ঘৃণা করত। আর তার স্বামীকে খুব ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে দেখত। পরিশেষে তার স্বামী তাকে এমন এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে গেল; যে কুরআনে কারীমের মাধ্যমে চিকিৎসা করে। সেখানে জিন কথা বলা শুরু করল ও বললঃ সে যাদুকরের মাধ্যমে এসেছে, তার দায়িত্ব হলো এ লোকটি ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটান। এরপর চিকিৎসক তাকে অনেক পিটাই করল; কিন্তু তারপরও কোন ফল হল না; এমন কি মহিলার স্বামী আমাকে বলল, সে সেই চিকিৎসকের কাছে দীর্ঘ একমাস ব্যাপী যেতে থাকে। পরিশেষে একদিন সেই জ্বিন আবদার করল যে, এই ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়, যদিও এক তালাক তবে আমি তাকে ছেড়ে যাব। দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, সেই ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এক তালাক দিয়ে দেয়। এরপর আবার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিল। ফলে মাঝখানে এক সপ্তাহ সম্পূর্ণরূপে মহিলাটি সুস্থ থাকল। এরপর মহিলার উপর পূর্বের অবস্থা ফিরে আসল। এরপর সেই ব্যক্তি তার স্ত্রীকে আমার কাছে নিয়ে আসল। আমি যখন কুরআন পড়তে লাগলাম তখন সে বেহুশ হয়ে গেল। আর নিম্নের কথোপকথন জ্বিন ও আমার মাঝে চলতে লাগল যা আমি অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করছিঃ

আমি জ্বিনকে বললাম যে, তোমার নাম কি?

সে উত্তরে বললঃ শাকওয়ান।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ তোর ধর্ম কি?

সে উত্তরে বললঃ খ্রিস্টান ধর্ম।

আমি জানতে চাইলাম এই মহিলাকে কেন আক্রমণ করেছিস?

উত্তরে বললঃ স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের জন্যে।

আমি বললাম আমি তোমাকে একটি প্রস্তাব দিচ্ছি তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ কর তবে আলহামদু লিল্লাহ। নতুবা তোমার ইচ্ছা।

জ্বিন বললঃ তুমি নিজেকে কষ্টে ফেল না।

আমি এই মহিলা থেকে বের হব না। এর পূর্বেও ওর স্বামী অনেকের কাছে চিকিৎসার জন্যে গিয়েছে, কোন কাজ হয়নি। আমি জিনকে বললাম আমি তোমাকে মহিলা থেকে বের হতে বলছি না।

জ্বিন বললঃ তবে তুমি কি চাও আমার কাছে? আমি বললাম যে, আমি চাই তোমার নিকট ইসলাম পেশ করতে। যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ কর তবে আলহামদুলিল্লাহ না হয় ইসলাম গ্রহণে কোন জোর জবরদস্তি নেই। অনেকক্ষণ কথা বলাবলির পর সে ইসলাম গ্রহণ করল। আলহামদুলিল্লাহ সেই জ্বিন মুসলমান হয়ে গেল। আমি জ্বিনকে বললাম যে, তুমি কি সত্যিই ইসলাম গ্রহণ করেছ না কি তুমি আমাকে ধোকা দিচ্ছ? জ্বিন উত্তর করলঃ তুমি আমাকে জবরদস্তি করতে পার না। আমি প্রকৃতপক্ষেই ইসলাম গ্রহণ করেছি। তবে মহিলা থেকে বের হয়ে যেতে তোমার আর কি বাধা? সে বলল যে, এই সময় খ্রিস্টান জ্বিনের এক দল আমার সামনে রয়েছে আর আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হয়ত মেরে ফেলবে। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি বললাম তোমাকে তাদের থেকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। যদি তুমি আমাকে কথা দাও যে তুমি সত্যিই মুসলমান হয়েছ। তবে আমি তোমাকে এক এমন শক্তিশালী অস্ত্র দিব যে, তাদের কেউ তোমার কাছেই আসতে পারবে না।

জ্বিন বললঃ তবে এখনই দিন।

আমি বললামঃ হ্যাঁ দিব তবে আরও কথা আছে যে, তুমি যদি সত্যিকার অর্থে মুসলমান হয়ে থাক তবে তোমার তাওবা কেবল তখনই গ্রহণীয় হবে যখন তুমি এই মহিলাকে ছেড়ে যাবে এবং অন্যায় পাপ থেকে বিরত থাকবে । জ্বিন বললঃ হ্যাঁ আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি; কিন্তু যাদুকরদের থেকে আমি কিভাবে মুক্তি পাব। অতঃপর আমি বললাম এটা সহজ বিষয়; কিন্তু তোমাকে আমার কথা মানতে হবে।

জ্বিন বললঃ ঠিক আছে আমি বললাম তুমি আমাকে বল, যাদু করে কোথায় রাখা হয়েছে।

জ্বিন উত্তর দিলঃ যে ঘরে মহিলাটি বাস করে সেই ঘরের আঙ্গনায় কিন্তু আমি নির্দিষ্ট স্থান নির্ণয় করতে পারব না, কেননা সেখানে এক জ্বিনকে যাদুর হেফাযতের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর যখনই সেই স্থান কেউ জানতে পারে তখন সেই জ্বিন যাদুকে স্থানান্তরিত করে। আমি বললাম তোমার এই যাদুকরের সাথে কত কাল থেকে সম্পর্ক?

আমার সঠিক স্মরণ নেই জ্বিন কি উত্তর দিয়েছিল তবে এতটুকু স্মরণ আছে যে, সে দশ অথবা বিশ বছর বলেছিল। আরও সে বলেছিল যে, সে এর পূর্বেও তিনটি মহিলাকে আক্রমণ করেছে। আর সে তিন মহিলা সম্পর্কে ঘটনা খুলে বলেছে। যখন তার কথায় আমি বিশ্বস্ত হলাম তখন আমি বললাম। এবার আমি তোমাকে যেই অস্ত্র দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলাম তা তুমি নিয়ে নাও। জ্বিন বলল সেটা কি? তখন আমি উত্তর দিলাম যে, তা হল আয়াতুল কুরসি। যখনই তোমার নিকট কোন জ্বিন আসতে চাইবে তোমাকে আঘাত করার জন্যে তুমি সেই আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করবে; তাহলে সেই জ্বিন পালিয়ে যাবে।

আমি জিনকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কি আয়াতুল কুরসি মুখস্ত আছে? উত্তরে বললঃ হ্যাঁ কেননা এই মহিলা আয়াতুল কুরসি বেশি বেশি পড়ত তাই শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে গেছে। সে বললঃ আমি যাদুকর থেকে কিভাবে মুক্তি পাব? আমি বললাম তুমি এই মহিলা থেকে বের হয়ে মক্কায় চলে যাও এবং সেখানে মুসলমান জ্বিনদের মাঝে বসবাস কর। জ্বিন বললঃ আমাকে কি আল্লাহ সত্যি সত্যিই ক্ষমা করে দিবেন? কেননা আমি এই মহিলার প্রতি অনেক অন্যায় অত্যাচার করেছি এবং আরও তিন মহিলাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি বললামঃ তোমাকে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই ক্ষমা করবেন। সূরা যুমারে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

অর্থঃ “বল হে আমার বান্দাগণ! যারা (পাপ করে) নিজের উপর অন্যায় করেছে, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হইও না, কেননা আল্লাহ তায়ালা সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।" (সূরা যুমারঃ ৫৩)

অতঃপর সে কেদে ফেলল এবং বলল যখন আমি এই মহিলাকে ছেড়ে চলে যাব তখন আমার পক্ষ থেকে এই মহিলার কাছে আমাকে ক্ষমা করে দেয়ার আবদার করবেন। কেননা আমি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। সে ওয়াদা করল এবং মহিলার ভিতর থেকে বের হয়ে গেল।

এরপর আমি কিছু কুরআনের আয়াত পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে সেই ব্যক্তিকে দিয়ে বললাম যে, এই পানি আঙ্গনায় ছিটিয়ে দিবেন। এরপর কিছু দিন পর সেই ব্যক্তি আমাকে জানাল যে, তার স্ত্রী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ । (এতে আমার কোন কৃতিত্ব নেই, সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে।)