এই অধ্যায়ে ইনশাআল্লাহ যাদুর দ্বারা আক্রান্ত রোগের প্রকারভেদ ও এর প্রতিকার কুরআন ও হাদীসের আলোকে কি পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব। প্রকাশ থাকে যে, এ অধ্যায় ও অন্যান্য অধ্যায়ে চিকিৎসা বিষয়ে আরো অনেক এমন বিষয়ও পাওয়া যাবে যা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বিশেষ কোন চিকিৎসার ব্যাপারে সরাসরি সাব্যস্ত নয় তবে সেই মৌলিক সূত্রের অন্তর্ভুক্ত পাওয়া যাবে যা কুরআন ও হাদীসে সাব্যস্ত। যেমনঃ কোন এক চিকিৎসা একটি আয়াত বা বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াতে থাকতে পারে। সুতরাং তা সবগুলিই নিম্নের আয়াতের নির্দেশনার আওতায় ।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ
অর্থঃ “আর আমার অবতরণ করা কুরআনের আয়াতে মু'মিনদের জন্যে আরোগ্য এবং রহমত রয়েছে।" (সূরা ইসরাঃ ৮২)
কোন কোন ইমাম বলেনঃ আয়াতে শিফা বা আরোগ্য বলতে আভ্যন্তরীণ আরোগ্যকে বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ সংশয়, শিরক, কুফর ইত্যাদি রোগের আরোগ্য। কেউ বলেনঃ দৈহিক ও আত্মিক উভয় রোগের আরোগ্য।
অন্য এক হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয়, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কাছে আগমন করলেন; সে সময় তার কাছে এক রমণী বসা ছিলেন, যে তার ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে চিকিৎসা করছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “তাকে আল্লাহর কিতাব দ্বারা চিকিৎসা কর । (নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১৯৩১)
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের কোন বিশেষ অংশের মাধ্যমে চিকিৎসার নির্দেশ না দিয়ে সাধারণ ভাবে কুরআনের কথা উল্লেখ করেছেন। তাদ্বারা বুঝা গেল যে, সমস্ত কুরআন আরোগ্য অর্জনের উপায়। বাস্তবতার আলোকে প্রমাণিত যে, কুরআন শুধুমাত্র, যাদু, বদনজর ও হিংসারই চিকিৎসা নয়; বরং দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরও চিকিৎসা রয়েছে এতে ।
কেউ যদি বলেঃ আগ্রহী যুবকবৃন্দ যেই সব আয়াত দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চিকিৎসা করেছেন সেই সব আয়াতের মাধ্যমেই চিকিৎসা করতে চায়, তাই নব প্রজন্মের অবগতির জন্যে সহীহ বুখারীর নিম্নের হাদীসটি পেশ করছি।
আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি সাহাবাদের সাথে ছিলেন। তারা একত্রে এক উপত্যকা ভ্রমণ করছিলেন। সেই উপত্যকার বাসিন্দার কাছে আতিথিয়তার আবেদন জানালেন; কিন্তু তারা তা গ্রহণ করল না। অতঃপর গোত্র প্রধানকে কোন বিষাক্ত প্রাণী দংশন করল। তখন সেখানের লোকজন দৌড়ে সাহাবাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমন আছে যে ঝাড়-ফুক জানে?
উত্তরে আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ যে আমি জানি তবে আমি ঝাড়-ফুক করব না যতক্ষণ না তোমরা এর প্রতিদান নির্ধারণ করবে। প্রতিদান নির্ধারণ হওয়ার পর তিনি ঝাড়লেন এবং অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠল। এরপর তারা সাহাবাদেরকে ছাগল দিলেন। তারা ছাগল নিয়ে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট উপস্থিত হয়ে আল্লাহর রাসূলের কাছে সব ঘটনা খুলে বললেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবু সাঈদ খুদরী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কিভাবে ঝাড়-ফুক করেছিলে? উত্তরে বললেন সূরা ফাতেহা পড়ে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কিভাবে জানতে পারলে যে সূরা ফাতেহার মাধ্যমে চিকিৎসা করলে আরোগ্য লাভ হয়? আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার এই বিষয়ে কোন আপত্তি করেননি; বরং এর প্রশংসাই করেছেন।
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকার পরেও ঝাড়-ফুক করেছেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা সমর্থন করে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঝাড়-ফুকের সাধারণত কিছু মৌলিক পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, কিছু লোক নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল যে আমরা জাহিলিয়াতের যুগে ঝাড়-ফুক করতাম। তিনি বললেন সেই সব মন্ত্র আমার কাছে পেশ কর। ঝাড়-ফুক করাতে নিষেধ নেই যদি তাতে কোন শিরকযুক্ত বাক্য না থাকে। এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঝাড়-ফুক বৈধ তা কুরআন ও হাদীস দিয়ে হোক অথবা অন্য দুআর মাধ্যমে হোক এমনি জাহেলিয়্যাত যুগের ঝাড়-ফুক দিয়ে ও যদি তাতে শিরক না থাকে।