কুরআন দ্বারা প্রমাণঃ

১। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُمْ بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

অর্থঃ “এবং সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা তারই অনুসরণ করছে এবং সুলাইমান কুফুরী করেননি কিন্তু শয়তানরাই কুফুরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারূত-মারত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিতো, এবং তারা উভয়ে কাউকেও ওটা শিক্ষা দিতো না, যে পর্যন্ত তারা না বলতো যে, আমরা পরীক্ষা স্বরূপ, অতএব তুমি কুফরী করো না; অনন্তর যাতে স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করতো এবং তারা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তদ্বারা কারও অনিষ্ট সাধন করতে পারতো না এবং তারা ওটাই শিক্ষা করছে যাতে তাদের ক্ষতি হয় এবং তাদের কোন উপকার সাধিত হয় না এবং নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্যে পরকালে কোনই অংশ নেই এবং যার বিনিময়ে তারা যে আত্ম-বিক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট, যদি তারা তা জানতো!" (সূরা বাকারাঃ ১০২)

২। মহান আল্লাহ বলেনঃ

قَالَ مُوسَىٰ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَكُمْ أَسِحْرٌ هَٰذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ

অর্থঃ “মূসা বললেনঃ তোমরা কি এ হক সম্পর্কে এমন কথা বলছো, যখন ওটা তোমাদের নিকট পৌছলো? এটা কি যাদু? অথচ যাদুকররা তো সফলকাম হয় না!" (সূরা ইউনুসঃ ৭৭)

৩। মহান আল্লাহ বলেনঃ

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

অর্থঃ “অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করলো, তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ যাদু এটাই; নিশ্চয়ই আল্লাহ এখনই এটাকে বানচাল করে দিবেন; (কেননা) আল্লাহ এমন বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ সম্পন্ন হতে দেন না। আর আল্লাহ স্বীয় অঙ্গীকার অনুযায়ী হক প্রতিষ্ঠিত করে দেন, যদিও পাপাচারীরা তা অপ্রীতিকর মনে করে " (সূরা ইউনুসঃ ৮১-৮২)

৪ । তিনি আরো বলেনঃ

فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَىٰ قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَىٰ وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ

অর্থঃ “মূসা (আলাইহিস সালাম) তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলো। আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমিই প্রবল। তোমার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করো, এটা তারা যা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে, তারা যা করেছে তা তো শুধু যাদুকরের কৌশল; যাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না।" (সূরা ত্ত্বো-হাঃ ৬৭-৬৯)

৫ । মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ

অর্থঃ “তখন আমি মূসা-এর নিকট এই প্রত্যাদেশ পাঠালামঃ তুমি তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ কর, মূসা (আলাইহিস সালাম) তা নিক্ষেপ করলে ওটা একটা বিরাট সাপ হয়ে সহসা ওদের অলীক (মিথ্যা) সৃষ্টিগুলোকে গিলে ফেলল। পরিশেষে যা হক ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো, আর যা কিছু বানানো হয়েছিল তা বাতিল প্রমাণিত হলো। আর ফিরাউন ও তার দলবলের লোকেরা মুকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে গেল। যাদুকরগণ তখন সিজদায় পড়ে গেল। তারা পরিস্কার ভাষায় বললোঃ আমরা বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি অকপটে ঈমান আনলাম। (জিজ্ঞেস করা হলো— কোন বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি? তারা উত্তরে বললো) মূসা ও হারূনের প্রতিপালকের প্রতি।” (সূরা আরাফঃ ১১৭-১২২)

৬। মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

অর্থঃ “বলঃ আমি আশ্রয় নিচ্ছি উষার স্রষ্টার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, অনিষ্ট হতে অন্ধকার রাত্রির যখন তা’ আচ্ছন্ন হয় এবং গিরায় ফুকদান কারিণীর এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতেও যখন সে হিংসা করে।" (সূরা ফালাকঃ ১-৫)

ইমাম কুরতুবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ অর্থাৎ ঐ সমস্ত যাদুকারিনীর যারা সুতার গ্রন্থীতে ফুৎকার দেয় যখন তারা মন্ত্র পড়ে তাতে। (তাফসীর কুরতুবীঃ ২০/২৫৭)

হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ এর তাফসীরে মুজাহিদ, ইকরিমাহ, হাসান, কার্তাদাহ ও জাহহাক বলেনঃ যাদুকারিনীদের। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ৪/৫৭৩)

ইবনে জারীর আততাবারী বলেনঃ অর্থাৎ ঐ সমস্ত যাদুকারিনীর অনিষ্ট হতে যারা সুতার গ্রন্থীতে ফুৎকার দেয় তখন তারা তার উপর মন্ত্র পড়ে। (তাফসীর আল-কাসেমীঃ ১০/৩০২)

কুরআনের অনেক আয়াতসমূহ যাদুর বর্ণনা এসেছে যা যাদুর অস্তিত্বের প্রমাণ

হাদীস দ্বারা প্রমাণঃ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ যুৱাইক বংশের লাবীদ ইবনে আ'সাম নামে এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে যাদু করে যার পরিণামে আল্লাহ রাসূলের কাছে মনে হয় যে, কোন কাজ করেছেন অথচ তিনি সেটি করেননি। অতঃপর একদিন অথবা এক রাতে তিনি আমার কাছে ছিলেন তিনি প্রার্থনার পর প্রার্থনা করলেন অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি কি জান যে, আল্লাহ তায়ালা আমার সেই বিষয় সমস্যার সমাধান করেছেন যে বিষয়ে আমি সমাধান চেয়েছিলাম? আমার কাছে দুই ব্যক্তি আসলেন তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন পায়ের কাছে বসলেন। অতঃপর তাদের একজন অপর জনকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ

লোকটির কিসের ব্যাথা?

দ্বিতীয়জন উত্তরে বললেনঃ লোকটিকে যাদু করা হয়েছে।

প্রথম ব্যক্তি বললেনঃ কে যাদু করেছে?

দ্বিতীয়জন বললেনঃ লাবীদ বিন আসাম।

প্রথমজন জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি দিয়ে যাদু করেছে?

দ্বিতীয়জন বললেনঃ চিরুনী, মাথা বা দাড়ির চুল ও পুরুষ খেজুর গাছের মোচার খোসা দ্বারা।

প্রথমজন বলেনঃ তা কোথায়? দ্বিতীয়জন বলেনঃ জারওয়ান কূপে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত কূপে সাহাবাদের কতিপয়কে নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা কূপের পানি যেন মেহদী মিশ্রিত এবং কূপের পার্শ্বের খেজুর গাছের মাথাগুলি যেন শয়তানদের মাথা। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেন আপনি তা বের করে ফেললেন না? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দিয়েছেন, তাই আমি অপছন্দ করি যে খারাপ বিষয়টি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিব। পরিশেষে উক্ত যাদুকে ঢেকে ফেলার আদেশ হয়। (বুখারীঃ ১০/২২২ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ১৪/১৭৪ নববীসহ)

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ ইয়াহুদী জাতি (আল্লাহ তাদের প্রতি লা'নত করুন) তাদের সর্বশেষ যাদুকর লাবীদ ইবনে আসামের সাথে একমত হয় যে, সে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি যাদু করবে আর তারা তাকে তিন দিনার প্রদান করবে। যার ফলে এই বদবখত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কতিপয় চুলের উপর যাদু করে। বলা হয়ে থাকে একজন ছোট বালিকা যার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে যাতায়াত ছিল তার মাধ্যমে সে উক্ত চুল অর্জন করে এবং সে চুলগুলিতে তার জন্য যাদু করতঃ গিরা দেয় আর এ যাদু রেখে দেয় জারওয়ান নামক কূপে।

হাদীসের সকল বর্ণনা অনুপাতে বুঝা যায় যে, এ যাদু স্বামী-স্ত্রী কেন্দ্রিক যাদু ছিল, যার ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এমন ধারণা হতে যে, তিনি তার কোন স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হবেন; কিন্তু যখন তার নিকটবতী হতেন তখন তা আর সম্ভব হতো না। এ যাদু তার জ্ঞান, আচার-আচরণ বা তার কার্যক্রমে কোন প্রভাব বিস্তার করেনি; বরং যা উল্লেখ করা হয়েছে সে ক্ষেত্রেই ক্রিয়াশীল ছিল ।

এ যাদু কতদিন ক্রিয়াশীল ছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন ৪০ দিন কেউ অন্যমত পোষণ করেন। (আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত)। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় রবের নিকট কাকুতি মিনতি করে দু'আ করতে থাকেন। যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তার দু'আ কবুল করে দু'জন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। একজন তার শিয়রে বসেন, অন্যজন বসেন তার পায়ের পার্শ্বে। অতঃপর একজন অপরজনকে বলেনঃ তার কি হয়েছে? অপরজন উত্তর দেন তিনি যাদুগ্রস্ত। প্রথমজন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয়জন বলেনঃ লাবীদ ইবনে আ'সাম ইয়াহুদী। অতঃপর তিনি (ফেরেশতা) বর্ণনা দিলেন যে, সে চিরনী ও নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কতিপয চুলে যাদু করে, তা পুরুষ খেজুর গাছের মোচার খোলে রাখে, যেন তা কঠিনভাবে ক্রিয়াশীল হয়। অতঃপর সে তা জারওয়ান নামক কূপে পাথরের নিচে পুতে দেয়। এরপর যখন উভয় ফেরেশতা দ্বারা নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবস্থার রহস্যের

উদঘাটন হয়ে গেল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন তা বের করে পুতে ফেলার নির্দেশ দেন। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।

হাদীসের সমস্ত বর্ণনার ভিত্তিতে ফুটে ওঠে যে, উক্ত ইয়াহুদী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক আকারের যাদুর আশ্রয় নিয়েছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হত্যা করা। আর সর্বজন বিদিত যে, হত্যা করারও যাদু হয়ে থাকে; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে তাদের চক্রান্ত হতে রক্ষা করেন। যার ফলে তাকে সর্ব নিম্নস্তরের যাদুতে পরিণত করে দেন। আর এটিই হলো আল্লাহর

হেফাযত।