হুযাইফা ইবনু আসীদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরাফাতের মাঠে (বিদায় হজ্জের সময়ে) অবস্থান করছিলেন। আমরা তাঁর থেকে নিচু স্থানে অবস্থান করছিলাম। তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমরা কি আলোচনা করছ? আমরা বললাম: কিয়ামাতের আলোচনা করছি। তিনি বলেন:


إِنَّ السَّاعَةَ لا تَكُونُ حَتَّى تَكُونَ عَشْرُ آيَاتٍ خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ فِي جَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَالدُّخَانُ وَالدَّجَّالُ وَدَابَّةُ الأَرْضِ وَيَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَطُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنَارٌ تَخْرُجُ مِنْ قُعْرَةِ عَدَنٍ تَرْحَلُ النَّاسَ، ونُزُولُ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ...


‘‘দশটি আয়াত বা নিদর্শন না ঘটা পর্যন্ত কিয়ামাত হবে না: (১) পূর্ব দিকে ভূমিধ্বস (ভূপৃষ্ঠ যমীনের মধ্যে ডুবে যাওয়া), (২) পশ্চিমদিকে ভূমিধ্বস, (৩) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, (৪) ধুম্র, (৫) দাজ্জাল, (৬) ভূমির প্রাণী, (৭) ইয়াজূজ-মাজূজ, (৮) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (৯) এডেনের ভূগর্ভ থেকে অগ্নি নির্গত হয়ে মানুষদেরকে তাড়িয়ে নেওয়া এবং (১০) মরিয়ম-পুত্র ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ।’’[1]

এ সকল আলামতের বিস্তারিত বর্ণনায় অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত। কুরআন কারীমে কোনো আলামতের বিষয়ে ইঙ্গিত বা উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ বলেন:


وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِنَ الأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآَيَاتِنَا لا يُوقِنُونَ


‘‘যখন ঘোষিত শাস্তি তাদের নিকট আসবে তখন আমি যমিন হতে বের করব এক জীব যা তাদের সাথে কথা বলবে, এ জন্য যে মানুষ আমার নিদর্শনে অবিশ্বাসী।’’[2]

কুরআনের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঈসা (আঃ)-এর পুনরাগমনের পর সকল কিতাবী তাঁর বিষয়ে সঠিক জ্ঞান ও ঈমান লাভ করবেন। আল্লাহ বলেন:


وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلا اتِّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا


‘‘আর ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মরিয়ম-তনয় ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের (ইহূদীদের) এ উক্তির জন্য। অথচ তারা তাকে হত্যা করে নি, ক্রুশবিদ্ধও করে নি; কিন্তু তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল তারা নিশ্চয় এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। নিশ্চিত যে তারা তাকে হত্যা করে নি। বরং আল্লাহ্ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামাতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে।’’[3]

ইয়াজুজ মাজুজের বিষয়ে আল্লাহ বলেন:


حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَإِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ أَبْصَارُ الَّذِينَ كَفَرُوا يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِينَ


‘‘এমন কি যখন য়া’জুজ ও মা’জুজকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং তারা প্রতি উচ্চভূমি হতে ছুটে আসবে। অমোঘ প্রতিশ্রুতকাল আসন্ন হলে সহসা কাফিরদিগের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে, তারা বলবে ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে উদাসীন; না, আমরা সীমালঙ্ঘনকারীই ছিলাম’।’’[4]

[1] মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২২২৫-২২২৬ (কিতাবুল ফিতান, বাবু ফিল আয়াতিল্লাতি তাকূনু কাবলা)

[2] সূরা (২৭) নামল: ৮২ আয়াত।

[3] সূরা (৪) নিসা: ১৫৭-১৫৯ আয়াত।

[4] সূরা (২১) আম্বিয়া: ৯৬-৯৭।