হাদীস ও সাহাবীগণের বক্তব্যের আলোকে ঐতিহাসিকগণ একমত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ৪ কন্যা ছিলেন: যাইনাব (রা), রুকাইয়া (রা), উম্মু কুলসূম (রা) ও ফাতিমা (রা)। তাঁরা নুবুওয়াতের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন, নুবুওয়াতের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে মদীনায় হিজরত করেন এবং মদীনায় ইন্তেকাল করেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জ্যেষ্ঠা কন্যা যাইনাব (রা)। তিনি নবুওয়াতের বছর দশেক আগে জন্মগ্রহণ করেন। খালাত ভাই ‘‘আবুল আস ইবনুর রাবীয়’’-এর সাথে মক্কায় তাঁর বিবাহ হয়। যাইনাব ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনায় হিজরত করেন। তাঁর স্বামী আবুল আস কাফির অবস্থায় মক্কায় থেকে যান। মক্কা বিজয়ের পূর্বে তিনি মদীনায় যেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং উভয়ে মদীনায় দাম্পত্য জীবন অব্যাহত রাখেন। যায়নাব (রা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় ৮ হিজরী সালে- প্রায় ৩৩ বৎসর বয়সে- মদীনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্বামী আবুল আস রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওফাতের পরের বৎসর ১২ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
যায়নাব (রা) আলী নামে এক পুত্র এবং উমামা নামে এক কন্যা জন্মদান করেন। পুত্র আলী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় মক্কা বিজয়ের পরে ইন্তেকাল করেন। মক্কা বিজয়ের সময় আলী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উটের পিঠে তাঁর পিছনে বসে ছিলেন। কন্যা উমামাকেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অত্যন্ত আদর করতেন। বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি উমামাকে কাঁধে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করেন। সাজদার সময় তাকে নামিয়ে রাখতেন এবং সাজদা থেকে উঠলে আবার ঘাড়ে নিতেন। ফাতিমার (রা) ওফাতের পরে আলী (রা) উমামাকে বিবাহ করেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দ্বিতীয়া কন্যা রুকাইয়া (রা)। নুবুওয়াতের ৭ বৎসর পূর্বে তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। মক্কায় আবূ লাহাবের পুত্র উতবার সাথে তাঁর বিবাহ হয়। যখন সূরা আবূ লাহাব নাযিল হয় তখন ক্রুদ্ধ আবূ লাহাবের নির্দেশে উতবা তাঁকে তালাক দেন। এরপর উসমান (রা)-এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। উসমানের সাথে তিনি ইথিওপিয়ায় হিজরত করেন। এরপর তিনি মদীনায় হিজরত করেন। দ্বিতীয় হিজরী সালে বদর যুদ্ধের সময়ে তিনি মদীনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বদরে ছিলেন। তাঁর অসুস্থতার কারণেই উসমান বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারেন নি। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল প্রায় ২২/২৩ বৎসর। রুকাইয়ার গর্ভে উসমান (রা)-এর আব্দুল্লাহ নামে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। বছর ছয়েক বা তার কম বয়সে এ পুত্র মৃত্যুবরণ করে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তৃতীয়া কন্যা উম্মু কুলসূম (রা)। নবুওয়াতের কয়েক বৎসর পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মক্কায় আবূ লাহাবের অন্য পুত্র উতাইবার সাথে তার বিবাহ হয় এবং দাম্পত্য জীবন শুরুর আগেই উতাইবা তাঁকে পরিত্যাগ করে। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে হিজরত করেন। রুকাইয়া (রা)-এর ইন্তেকালের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মু কুলসূমকে উসমান (রা)-এর সাথে বিবাহ দেন। ৩ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসে উসমানের সাথে তাঁর বিবাহ হয় বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন। ৯ হিজরী সালে প্রায় ২৭/২৮ বৎসর বয়সে মদীনায় তাঁর ওফাত হয়। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কনিষ্ঠা কন্যা ফাতিমা (রা)। তিনি নুবুওয়াতের কয়েক বৎসর আগে বা নুবুওয়াত লাভের পরের বৎসর জন্মগ্রহণ করেন। হিজরতের পরে দ্বিতীয় (অথবা তৃতীয়) হিজরী সালে আলী (রা)-এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। হাসান, হুসাইন ও মুহসিন নামে তিন পুত্র ও যাইনাব, উম্মু কুলসূম ও রুকাইয়া নামে তিন কন্যা সন্তান তাঁরা লাভ করেন। মুহসিন জন্মসময়ে মৃত্যুবরণ করেন। হাসান, হুসাইন, উম্মু কুলসূম ও যাইনাব পরিণত বয়সে বিবাহশাদি করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বংশধর বলতে তাঁদের সন্তানদেরকেই বুঝানো হয়। ১১শ হিজরী সালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ওফাতের ৬ মাস পরে ২৪/২৫ বৎসর বয়সে ফাতিমা (রা) ইন্তেকাল করেন।[1]