ঈমান-ইসলাম পরস্পর সম্পৃক্ত শব্দ। অন্য একটি প্রাসঙ্গিক শব্দ ‘‘দীন’’। ইমাম আবূ হানীফা এখানে এ পরিভাষাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন। ‘আমন’ শব্দ থেকে ঈমান শব্দটির উৎপত্তি। আম্ন (أمن) অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা, আস্থা বা বিশ্বস্ততা। ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ: নিরাপত্তা প্রদান, আস্থা স্থাপন, বিশ্বাস করা, সত্যতা স্বীকার করা, বিশ্বস্ততায় আস্থা স্থাপন করা, ইত্যাদি।[1] সাধারণভাবে আরবীতে অদৃশ্য কোনো বিষয়ে কারো বক্তব্য বা তথ্য সত্য বলে বিশ্বাস করাকে ‘‘ঈমান’’ বলা হয়।
‘ইসলাম’ শব্দটি ‘সালাম’ (سلم) শব্দ থেকে গৃহীত। এর অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা, সমর্পণ ইত্যাদি। ইসলাম অর্থ আনুগত্য, আত্মসমর্পণ বা শান্তিস্থাপন। ইবন ফারিস বলেন: ‘‘শব্দটির মূল অর্থ সুস্থতা ও নিরাপত্তা।... ইসলামও এ অর্থ থেকেই। ইসলাম অর্থ আনুগত্য বা আত্মসমর্পণ; এর ফলে অবাধ্যতা থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যায়।[2] এভাবে আমরা দেখছি যে, আভিধানিক ভাবে ‘‘ঈমান’’ বিশ্বাসের দিক এবং ‘‘ইসলাম’’ কর্মের দিক। তবে ব্যবহারিক ভাবে ঈমান ও ইসলাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
আভিধানিকভাবে ‘দীন’ অর্থ ‘আনুগত্য’ অথবা ‘যে সকল বিধান-ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষ আনুগত্য প্রকাশ করে’। আর এ অর্থেই পারিভাষিকভাবে ‘‘দীন’’ বলতে বুঝানো হয় ‘ধর্ম’ বা ‘ধর্মীয় বিধিবিধান ও ব্যবস্থার সমষ্টি’ যেগুলোর মাধ্যমে স্রষ্টার আনুগত্য ও উপাসনা করা হয়।[3] শব্দটির মূল অর্থ বিষয়ে প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ইবন ফারিস বলেন: ‘‘এর মূল অর্থ ... আনুগত্য, বিনয় ও হীনতা। দীন অর্থ আনুগত্য। ... হুকুম, হিসাব বা বিচার অর্থে দীন ব্যবহৃত হয়। তার মধ্যেও আনুগত্যের অর্থ রয়েছে’’।[4]
ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি যে, ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) ‘তাওহীদ’ বা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসকেই ‘‘দীন’’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর পূর্বে ও পরে আরো অনেক তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ী ও পরবর্তী মুফাস্সির ‘‘দীন’’ অর্থ ‘‘তাওহীদ’’ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ ‘‘তাওহীদ’’-ই দীনের মূল। তবে সাধারণভাবে দীন বলতে তাওহীদ-সহ ইসলামের সকল বিধিবিধানের সমষ্টি বুঝানো হয়। ইসলামের বিশ্বাস বিষয়ক দিকটিকে ‘‘ঈমান’’, কর্ম বিষয়ক দিকটিকে ‘‘ইসলাম’’ এবং বিশ্বাস, কর্ম ও সকল বিধিবিধানের সমষ্টিকে ‘‘দীন’’ বলা হয়। এ বিষয়েই ইমাম আযম বলেছেন: ‘‘ইসলাম অর্থ আল্লাহর নির্দেশের জন্য আত্মসমর্পণ করা এবং অনুগত হওয়া। আভিধানিকভাবে ঈমান ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে বাস্তবে ও ব্যবহারে ইসলাম ছাড়া কোনো ঈমান হয় না এবং ঈমান ছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ... ঈমান, ইসলাম ও সমস্ত শরীয়তকে একত্রে দীন বলা হয়।’’
[2] ইবন ফারিস, মু’জামু মাকায়ীসিল লুগাহ ৩/৯০।
[3] ড. ইবরাহীম আনীস ও অন্যান্য, আল-মুজামুল ওয়াসীত ১/৩০৭।
[4] ইবন ফারিস, মুজামু মাকায়ীসিল লুগাহ ২/৩১৯-২০।