এরপর ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেছেন:

‘‘মহান আল্লাহ স্রষ্টা ছিলেন সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই। তিনি রিয্কদাতা ছিলেন সৃষ্টিকে রিয্ক প্রদানের পূর্ব থেকেই। আর আখিরাতে মহান আল্লাহ পরিদৃষ্ট হবেন। জান্নাতের মধ্যে অবস্থানকালে মুমিনগণ তাঁকে দর্শন করবেন তাদের নিজেদের চর্মচক্ষু দ্বারা। এ দর্শন সকল তুলনা ও স্বরূপ-প্রকৃতি নির্ধারণ ব্যতিরেকে। মহান আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোনো দূরত্ব হবে না।’’

এখানে তিনি মহান আল্লাহর বিশেষণের অনাদিত্ব বিষয়টি আবারো উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি আখিরাতে আল্লাহর দর্শন বিষয়ক আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা উল্লেখ করেছেন।

জান্নাতে মহান আল্লাহর দর্শনই হবে মুমিনগণের শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত। কুরআন-হাদীসে বারবার এ নিয়ামতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:


وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ


‘‘সেদিন কোনো কোনো মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’’[1]

আখিরাতে মহান আল্লাহর দর্শনের বিষয়ে বর্ণিত হাদীসগুলি বহু-সংখ্যক বা ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের। এক হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন:


إنَّ أُنَاسًا فِي زَمَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ نَعَمْ هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ بِالظَّهِيرَةِ ضَوْءٌ لَيْسَ فِيهَا سَحَابٌ قَالُوا لا قَالَ وَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ضَوْءٌ لَيْسَ فِيهَا سَحَابٌ قَالُوا لا


‘‘নবী (ﷺ)-এর যুগে কিছু মানুষ বলে, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি কিয়ামাতের দিন আমাদের প্রতিপালককে দেখব? তখন নবী (ﷺ) বলেন: হ্যাঁ। দ্বিপ্রহরের সময় আলোকোজ্জ্বল আকাশে যদি কোনো মেঘ না থাকে তবে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়? তারা বলেন: না। তিনি বলেন: পুর্ণিমার রাতে আলোকোজ্জ্বল আকাশে যদি কোনো মেঘ না থাকে তাহলে কি চাঁদ দেখতে তোমরা বাধাগ্রস্ত হও? তারা বলেন: না।’’[2]

অন্য হাদীসে আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বলেন,


قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ إِذَا كَانَتْ صَحْوًا قُلْنَا لا قَالَ فَإِنَّكُمْ لا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ يَوْمَئِذٍ إِلا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَتِهِمَا


‘‘আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি কিয়ামাতের দিন আমাদের প্রতিপালককে দেখব? তিনি বলেন, আকাশ পরিষ্কার থাকলে সূর্য বা চন্দ্র দেখতে কি তোমাদের কোনো কষ্ট হয়? আমরা বললাম: না। তিনি বলেন: সেদিন তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে তোমাদের কোনো কষ্ট বা অসুবিধা হবে না, ঠিক যেমন চন্দ্র ও সূর্য দেখতে অসুবিধা হয় না।’’[3]

অন্য হাদীসে জারীর ইবন আব্দুল্লাহ (রা) বলেন:


كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةً يَعْنِي الْبَدْرَ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لا تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ


‘‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ছিলাম। রাতটি ছিল পূর্ণিমার রাত। তিনি চাঁদের দিকে তাকালেন এবং বললেন: তোমরা যেভাবে এ চাঁদকে দেখছ, কোনোরূপ অসুবিধা হচ্ছে না, সেভাবেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখবে।’’[4]

এ সকল আয়াত ও হাদীসের আলোকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করেন যে, জান্নাতে মুমিনগণ মহান আল্লাহকে দর্শন করবেন।

খারিজী, মু’তাযিলী ও সমমনা কোনো কোনো ফিরকা আখিরাতে মহান আল্লাহর দর্শনের কথা অস্বীকার করে। কুরআনের কিছু আয়াত ও কিছু যুক্তি তাদের দলিল। মহান আল্লাহ বলেন:


لا تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ


‘‘তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত; এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত।’’[5]

অন্যত্র তিনি বলেন:


وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ


‘‘কোনো মানুষের জন্যই সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে, অথবা এমন দূত প্রেরণ করবেন, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।’’[6]

মূসা (আঃ) যখন আল্লাহকে দেখতে চান তখন আল্লাহ বলেন:


لَنْ تَرَاني


‘‘তুমি আমাকে দেখবে না।’’[7]

এ সকল আয়াতের ভিত্তিতে তারা দবি করেন যে, মহান আল্লাহকে আখিরাতে দর্শন করা সম্ভব নয়; কারণ তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন। তারা আরো যুক্তি পেশ করেন যে, মহান আল্লাহ স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধ্বে। তাঁকে দেখা যাবে বলে বিশ্বাস করার অর্থ তাঁকে স্থান বা দিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে বিশ্বাস করা। এছাড়া মহান আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি কোনো কিছুর সাথে তুলনীয় নন। তাঁকে দেখা যাবে বলে বিশ্বাস করার অর্থই তাঁকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা। এ সকল যুক্তির ভিত্তিতে তারা এ বিষয়ক আয়াত ও হাদীস বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও আপত্তির মাধ্যমে বাতিল করে দেন।

‘আহলুস সুন্নাত’ এ বিষয়ে তাঁদের মূলনীতির অনুসরণে সকল আয়াত ও হাদীস সমানভাবে বিশ্বাস করেন। কুরআনের দ্ব্যর্থহীন আয়াতগুলোর ভিত্তিতে তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবীতে কেউ মহান আল্লাহকে দেখতে পারে না। একইভাবে কুরআন ও হাদীসের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্যের ভিত্তিতে তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, আখিরাতে মুমিনগণ মহান আল্লাহর দর্শন লাভে ধন্য হবেন। উভয়ের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। মানবীয় জ্ঞানে আখিরাতে আল্লাহর দর্শন অসম্ভব নয়। কাজেই আখিরাতের দর্শনের খুঁটিনাটি বিষয় মানবীয় কল্পনা দিয়ে অনুধাবনের চেষ্টা করা বা তা অস্বীকার করা বিভ্রান্তি বৈ কিছুই নয়।

ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) উপরের বক্তব্যে এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস ব্যাখ্যা করেছেন। ইমাম সায়িদ নাইসাপূরী লিখেছেন:


في رسالة أبي حنيفة - رضي الله عنه - إلى بعض الناس: وأما قولك: إني أزعم أن الرب تعالى لا ينظر إليه أهلُ الجنة، سبحان الله العظيم! كيف تأتى بِما لستُ له من القائلين، الله تعالى يقول "وجوه يومئذ ناضرة إلى ربّها ناظرة" فلو قلتَ: لا ينظرون، كنتَ تقول: الله من الكاذبين. ولكنك حرّفتَ عليّ قولي: إن نظرهم إلى الله تعالى لا يشبهه نظرُ الخلق إلى الخلق


‘‘আবূ হানীফা রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে পত্র লিখেন। এ পত্রে তিনি বলেন: আপনি আমার নামে বলেছেন যে, আমি নাকি বলেছি, জান্নাতবাসীগণ মহান প্রতিপালক আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। সুবহা-নাল্লাহিল আযীম!! আমি যা বলি নি সে কথা আপনি আমার নামে কিভাবে বললেন! মহান আল্লাহ বলেন: ‘সেদিন কোনো কোনো মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’ এখন যদি আপনি বলেন যে, ‘মুমিনগণ তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে না’ তবে আপনি মূলত বললেন যে, আল্লাহ মিথ্যা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে আপনি আমার কথাকে বিকৃত করেছেন। আমি বলেছি যে, মহান আল্লাহর প্রতি মুমিনদের তাকিয়ে থাকা সৃষ্টির দিকে সৃষ্টির তাকিয়ে থাকার সাথে তুলনীয় নয়।’’[8]

এ বিষয়ে ইমাম তাহাবী বলেন:


وَالرُّؤْيَةُ حَقٌّ لأَهْلِ الْجَنَّةِ، بِغَيْرِ إِحَاطَةٍ وَلا كَيْفِيَّةٍ، كَمَا نَطَقَ بِهِ كِتَابُ رَبِّنَا: "وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ" وَتَفْسِيرُهُ عَلَى مَا أَرَادَ اللَّهُ تَعَالَى وَعَلِمَهُ، وَكُلُّ مَا جَاءَ فِي ذَلِكَ مِنَ الْحَدِيثِ الصَّحِيحِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَهُوَ كَمَا قَالَ، وَمَعْنَاهُ عَلَى مَا أَرَادَ، لا نَدْخُلُ فِي ذَلِكَ مُتَأَوِّلِينَ بِآرَائِنَا وَلا مُتَوَهِّمِينَ بِأَهْوَائِنَا، فَإِنَّهُ مَا سَلِمَ فِي دِينِهِ إِلاَّ مَنْ سَلَّمَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ ﷺ . وَرَدَّ عِلْمَ مَا اشْتَبَهَ عَلَيْهِ إِلَى عَالِمِهِ. وَلا تَثْبُتُ قَدَمُ الإِسْلامِ إِلاَّ عَلَى ظَهْرِ التَّسْلِيمِ وَالاسْتِسْلاَمِ. فَمَنْ رَامَ عِلْمَ مَا حُظِرَ عَنْهُ عِلْمُهُ، وَلَمْ يَقْنَعْ بِالتَّسْلِيمِ فَهْمُهُ، حَجَبَهُ مَرَامُهُ عَنْ خَالِصِ التَّوْحِيدِ وَصَافِي الْمَعْرِفَةِ وَصَحِيحِ الإِيمَانِ، فَيَتَذَبْذَبُ بَيْنَ الْكُفْرِ وَالإِيمَانِ، وَالتَّصْدِيقِ وَالتَّكْذِيبِ، وَالإِقْرَارِ وَالإِنْكَارِ، مُوَسْوَسًا تَائِهًا، زَائِغًا شَاكًّا، لا مُؤْمِنًا مُصَدِّقًا، وَلا جَاحِدًا مُكَذِّبًا. وَلا يَصِحُّ الإِيمَانُ بِالرُّؤْيَةِ لأَهْلِ دَارِ السَّلامِ لِمَنِ اعْتَبَرَهَا مِنْهُمْ بِوَهْمٍ، أَوْ تَأَوَّلَهَا بِفَهْمٍ، إِذْ كَانَ تَأْوِيلُ الرُّؤْيَةِ وَتَأْوِيلُ كُلِّ مَعْنًى يُضَافُ إِلَى الرُّبُوبِيَّةِ بِتَرْكِ التَّأْوِيلِ وَلُزُومِ التَّسْلِيمِ، وَعَلَيْهِ دِينُ الْمُسْلِمِينَ. وَمَنْ لَمْ يَتَوَقَّ النَّفْيَ وَالتَّشْبِيهَ زَلَّ وَلَمْ يُصِبِ التَّنْزِيهَ؛ فَإِنَّ رَبَّنَا جَلَّ وَعَلاَ مَوْصُوفٌ بِصِفَاتِ الْوَحْدَانِيَّةِ، مَنْعُوتٌ بِنُعُوتِ الْفَرْدَانِيَّةِ، لَيْسَ فِي مَعْنَاهُ أَحَدٌ مِنَ الْبَرِيَّةِ.


‘‘জান্নাতবাসীদের জন্য আল্লাহ পাকের দর্শন লাভ সত্য। তা হবে বিনা পরিবেষ্টনে এবং আমাদের বোধগম্য কোনো ধরন বা প্রকৃতি ব্যতীত। আমাদের প্রতিপালকের গ্রন্থে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে: ‘‘সে দিন অনেকের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের পানে দৃষ্টিমান থাকবে।’’[9] এ কথা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা যা ইচ্ছা করেছেন এবং যা তিনি জেনেছেন তা-ই এর ব্যাখ্যা। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সহীহ হাদীসে যা বর্ণিত আছে তা যেভাবে তিনি বলেছেন সে ভাবেই গ্রহণ করতে হবে এবং এর দ্বারা তিনি যে উদ্দেশ্য করেছেন তা স্বীকার করে নিতে হবে। এতে আমরা নিজেদের মতামত অনুসারে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে বা নিজেদের প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোনো অর্থের অনুপ্রবেশ ঘটাব না। কারণ, দ্বীনের ব্যা্পারে কেবল সে ব্যক্তিই ভ্রান্তি ও পদস্খলন থেকে নিরাপদ থাকতে পারে যে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট নিজেকে সমর্পন করে এবং তাঁর নিকট সংশয়যুক্ত বিষয়ের সঠিক জ্ঞান এর জ্ঞাতার উপর ছেড়ে দেয়। পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও বশ্যতা স্বীকার ব্যতিরেকে কারো ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন কোনো জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট হবে যা জানা তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং যার বুদ্ধি আত্মসমর্পনের মাধ্যমে তুষ্ট হয় না সে খালেস তাওহীদ, পরিচ্ছন্ন জ্ঞান ও বিশুদ্ধ ঈমান থেকে দূরে থাকবে। এমতাবস্থায়, সে কুফরী ও ঈমান, সমর্পণ ও অস্বীকৃতি এবং গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের মাঝামাঝি প্রবঞ্চিত, ওয়াসওয়াসাগ্রস্ত দিশাহারা ও সংশয়ী হয়ে দোটানায় দোদুল্যমান থেকে যায়। সে না হয় পূর্ণ সমর্পক মুমিন এবং না হয় দৃঢ় অবিশ্বাসী কাফির।

জান্নাতবাসীদের মহান আল্লাহর দর্শন লাভ সম্পর্কে এমন লোকের ঈমান বিশুদ্ধ হবে না, যে এটাকে তার পক্ষে বিশেষ কল্পনা দিয়ে অনুধাবনের চেষ্টা করবে বা স্বীয় জ্ঞানানুসারে এর অপব্যাখ্যা করবে। কারণ, আল্লাহর দর্শন এবং তাঁর রুবুবিয়্যাত সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা হলো এর ব্যাখ্যা থেকে বিরত থাকা এবং তা অবিকৃতভাবে গ্রহণ করা। এ নীতির উপরই মুসলিমদের ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। আর যে ব্যক্তি (আল্লাহর গুণাবলীর ক্ষেত্রে) অস্বীকৃতি ও তুলনা করা হতে আত্মরক্ষা না করবে তার অবশ্যই পদস্খলন ঘটবে এবং সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতায় বিশ্বাস স্থাপনে ব্যর্থ হবে। কেননা, আমাদের মহামহিম প্রভু অনন্য অতুলনীয় গুণাবলির দ্বারা বিশেষিত এবং একত্বের বিশেষণে বিভূষিত। বিশ্বলোকের কেউ তাঁর গুণে গুণান্বিত নয়।’’[10]

[1] সূরা (৭৫) কিয়ামা: ২২-২৩ আয়াত।

[2] বুখারী, আস-সহীহ ১/২৭৭; ৬/২৭০৪ (কিতাবু সিফাতিস সালাত, বাবু ফাদলিস সুজূদ, কিতাবুত তাওহীদ, বাবু উজূহুন ইয়াওমা..); মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৬৩-১৬৭, ৪/২২৭৯ (কিতাবুল ঈমান, বাবু মারিফাতি তারিকির রুইয়াতি, কিতাবুয যুহদি ওয়ার রাকাইক, বাবু-১)।

[3] বুখারী, আস-সহীহ ৬/২৭০৬ কিতাবুত তাওহীদ, বাবু উজূহুন ইয়াওমা..); মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৬৭ (কিতাবুল ঈমান, বাবু মারিফাতি তারিকির রুইয়াতি)।

[4] বুখারী, আস-সহীহ ১/২০৩ (কিতাবু মাওয়াকীতুস সালাত, বাবু ফাদলি সালাতিল আসর); মুসলিম,আস-সহীহ ১/৪৩৯ (কিতাবুল মাসাজিদি, বাবু ফাদলি সালাতাইস সুবহি ওয়াল আসর)।

[5] সূরা (৬) আন‘আম: ১০৩ আয়াত।

[6] সূরা (৪২) শূরা: ৫১ আয়াত।

[7] সূরা (৭) আরাফ: ১৪৩ আয়াত।

[8] সায়িদ নাইসাপূরী, আল-ই’তিকাদ, পৃষ্ঠা ১৪৩।

[9] সুরা (৭৫) কিয়ামাহ: ২২-২৩ আয়াত।

[10] তাহাবী, আল-আকীদাহ, পৃ. ১০।