কারামত (الكرامة) শব্দটির অর্থ ‘ভদ্রতা’, ‘সম্মাননা’ বা ‘সম্মান-চিহ্ন’। ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী ফরয ও নফল ইবাদত পালনকারী কোনো ব্যক্তি থেকে যদি কোনো অলৌকিক কর্ম প্রকাশিত হয় তবে তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘কারামাত’ বলা হয়।

কুরআন মাজীদে এরূপ অলৌকিক কর্মকেও ‘আয়াত’ বলা হয়েছে। পূর্ববর্তী যুগের একজন ‘ওলী’-র পদস্খলন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:


وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آَتَيْنَاهُ آَيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ


‘‘তাদেরকে সে ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও যাকে আমি ‘আয়াত’ বা অলৌকিক নিদর্শন দিয়েছিলাম, অতঃপর সে তা থেকে বিচ্যুত হয়, ফলে শয়তান তাকে তার অনুসারী বানিয়ে নেয় এবং সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’’[1]

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরগণ পূর্ববর্তী যুগের বিভিন্ন ওলীর কথা উল্লেখ করেছেন যাদেরকে আল্লাহ ‘কারামাত’ দান করেন, কিন্তু আল্লাহর হুকুম অমান্য করায় তারা বিপথগামী হয়ে যান। এ থেকে আমরা দেখি যে, ওলীদের কারামতকেও কুরআনে ‘আয়াত’ বলা হয়েছে। আমরা আরো দেখি যে, একজন নেককার মানুষ বিলায়াত ও কারামাত লাভের পরেও বিভ্রান্ত হতে পারেন। ‘কারামত’ প্রকাশিত হওয়া ওলী হওয়ার প্রমাণ নয়। বরং ঈমান ও তাকওয়া, অর্থাৎ পাপবর্জন ও অনবরত ফরয ও নফল ইবাদত পালন করতে থাকই বেলায়াতের একমাত্র চিহ্ন।

দ্বিতীয়-তৃতীয় হিজরী শতাব্দী থেকে মুসলিম উম্মাহর আলিমগণ নবীগণের অলৌকিক কর্মকে ‘মুজিযা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ নুবুওয়াতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাফিরদের অক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তাদের মাধ্যমে তা প্রকাশ করেন। অনুরূপভাবে তাঁরা ওলীদের অলৌকিক কর্মকে ‘কারামত’ নামে আখ্যায়িত করেছেন, যেন মানুষ বুঝতে পারে যে, এরূপ অলৌকিক কর্ম ওলীর কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নয়, বরং একান্তই আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ইকরাম’ বা সম্মাননা মাত্র।[2]

‘‘ওলীগণের কারামত সত্য’’ অর্থ ওলীগণ থেকে অলৌকিক কর্ম প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। যদি কোনো মুমিন মুত্তাকী মানুষ থেকে কোনো অলৌকিক কার্য প্রকাশ পায় তাহলে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্মাননা বা কারামত বলে বুঝতে হবে। তা অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া মু‘তাযিলী ও অন্যান্য বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের আকীদা। কুরআনে বিভিন্ন স্থানে নবী ছাড়াও অন্যান্য মুমিন মুত্তাকী মানুষের অলৌকিক কর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে এরূপ কারামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

[1] সূরা (৭) আ’রাফ: ১৭৫ আয়াত।

[2] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৩০-১৩৩।