৯. রামাদানের রাতে তারাবীহ / ৯. ১. কিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদ

৯. ১. কিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদ

তারাবীহ (التراويح) বহুবচন, একবচন তারবীহাহ (الترويحة)। এর অর্থ প্রশান্তি, আরাম, বিনোদন, শিথিলায়ন, শিথিল হয়ে বসা (refreshment, soothing, easing, relief, relaxation, recreation) ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় রামাদান মাসের রাত্রির কিয়ামুল্লাইল বা রাতের সালাতকে ‘‘তারাবীহ’’ বলা হয়।

কিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদের গুরুত্ব আমি ‘‘রাহে বেলায়াত’’ গ্রন্থে আলোচনা করেছি। এখানে সংক্ষেপে বলা যায় যে, কিয়ামুল্লাইল (قيام الليل) অর্থ রাতের কিয়াম বা রাত্রিকালীন দাঁড়ানো। সালাতুল ইশার পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের উন্মেষ পর্যন্ত সময়ে যে কোনো নফল সালাত আদায় করলে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ বা ‘সালাতুল্লাইল’ অর্থাৎ রাতের দাঁড়ানো বা রাতের সালাত বলে গণ্য। ‘তাহাজ্জুদ’ অর্থ ঘুম থেকে উঠা। রাতে ঘুম থেকে উঠে ‘‘কিয়ামুল্লাইল’’ আদায় করাকে ‘‘তাহাজ্জুদ’’ বলা হয়। কেউ যদি ইশার সালাত আদায় করে রাত ৯টা বা ১০টায় ঘুমিয়ে পড়েন এবং ১১/১২টায় উঠে নফল সালাত আদায় করেন তবে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি ইশার পরে না ঘুমিয়ে রাত ২/৩ টার দিকে কিছু নফল সালাত আদায় করেন তবে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ বলে গণ্য হলেও ‘তাহাজ্জুদ’ বলে গণ্য নয়।

ইসলামের অন্যতম নফল ইবাদত কিয়ামুল্লাইল। প্রথম রাতে বা শেষ রাতে, ঘুমানোর আগে বা ঘুম থেকে উঠে অন্তত কিছু নফল সালাত আদায় করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একটু ঘুমিয়ে উঠে ‘তাহাজ্জুদ’-রূপে কিয়ামুল্লাইল আদায় করলে তার সাওয়াব ও মর্যাদা বেশি। রাতের শেষভাগে তা আদায় করা সর্বোত্তম। কুরআন মাজীদে কোনো নফল সালাতের উল্লেখ করা হয় নি, এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতেরও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয় নি। কিন্তু কিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদের সালাতের কথা বারংবার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ও মুমিন জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিয়ামুল্লাইল বা সালাতুল্লাইলের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এত বেশি নির্দেশনা দিয়েছেন যে, এ বিষয়ে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলি একত্রিত করলে একটি বৃহদাকৃতির পুস্তকে পরিণত হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদকে যে গুরুত্ব দিয়েছেন, অন্য কোনো নফল বা সুন্নাত সালাতের সে গুরুত্ব দেন নি। তিনি কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে তাকিদ দিতেন। কেউ আদায় না করলে আপত্তি করতেন। এ বিষয়গুলি বিবেচনা করলে সারা বৎসরই ‘কিয়ামুল্লাইল’ সুন্নাতে মুআক্কাদা বলে গণ্য হয়। তবে ফকীহগণ সাধারণভাবে ‘কিয়ামুল্লাইল’-কে নফল পর্যায়ের সুন্নাত বা ‘সুন্নাতে গাইর মুআক্কাদা’ বলে গণ্য করেছেন।