আল-ফিকহুল আকবর আল-ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

আমরা দেখেছি যে, মুশরিকগণ মূলত ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক করত বা বিভিন্নভাবে গাইরুল্লাহকে ইবাদত করত। এখানে কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত এ সকল শিরক অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।

৪. ৪. ২. ১. সাজদা

সাজদা ইবাদতের একটি সর্বজনীন প্রকাশ। চাঁদ, সূর্য, প্রতিমা, ইত্যাদি সকল উপাস্যকে সাজদার মাধ্যমে ইবাদত করে মুশরিকগণ। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সাজদা করতে নিষেধ করে আল্লাহ বলেন:


لا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ


‘‘তোমরা সূর্যকে সাজদা করো না, চন্দ্রকেও নয়, সাজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর।’’[1]

আমরা পরবর্তী আলোচনায় দেখব যে, সাজদা, উৎসর্গ ইত্যাদি ইবাদতের উদ্দেশ্যও ‘দু‘আ’ বা ‘ডাকা’। যাকে ডাকা হচ্ছে তিনি যেন খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি সাড়া দেন সেজন্যই সাজদা। এজন্য মহান আল্লাহ বলেন:


وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا


‘‘এবং সাজদার কর্মগুলো বা সাজদার স্থানসমূহ আল্লাহরই জন্য; সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।’’[2]

আল্লামা ইবনু আবেদীন শামী ‘হাশিয়াতু রাদ্দিল মুহতার গ্রন্থে বলেন:


وَالسُّجُوْدُ أَصْلٌ لأَنَّهُ شُرِعَ عِبَادَةً بِلاَ قِيَامٍ كَسَجْدَةِ التِّلاَوَةِ، وَالْقِيَامُ لَمْ يُشْرَعْ عِبَادَةً وَحْدَهُ، حَتَّى لَوْ سَجَدَ لِغَيْرِ اللهِ تَعَالَى يَكْفُرُ بِخِلاَفِ الْقِيَامِ.


‘‘সাজদাই মূল; কারণ দাঁড়ানো ছাড়াই শুধু সাজদা শরীয়তে ইবাদত বলে গণ্য, যেমন তিলাওয়াতের সাজদা। দাঁড়ানো এককভাবে ইবাদত হিসেবে শরীয়তে নির্ধারিত নয়। এজন্য যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য সাজদা করে তবে সে কাফির বলে গণ্য হবে, দাঁড়ানোর বিষয়টি তদ্রূপ নয়।’’[3]

তিনি আরো বলেন:


تَقْبِيلِ الأَرْضِ بَيْنَ يَدَيْ الْعُلَمَاءِ وَالْعُظَمَاءِ فَحَرَامٌ وَالْفَاعِلُ وَالرَّاضِي بِهِ آثِمَانِ لأَنَّهُ يُشْبِهُ عِبَادَةَ الْوَثَنِ وَهَلْ يَكْفُرَانِ: عَلَى وَجْهِ الْعِبَادَةِ وَالتَّعْظِيمِ كُفْرٌ وَإِنْ عَلَى وَجْهِ التَّحِيَّةِ لا وَصَارَ آثِمًا مُرْتَكِبًا لِلْكَبِيرَةِ


‘‘আলিম ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সামনে ভূমি-চুম্বন বা জমিন-বুসী করা হারাম। যে ব্যক্তি তা করে এবং যে তাতে রাজি থাকে উভয়েই পাপী; কারণ তা মূর্তিপূজার অনুকরণ। এখন প্রশ্ন হলো: এরূপ ভূমি-চুম্বন-কারী এবং তাতে সন্তুষ্ট ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে কিনা? যদি ইবাদত ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য তা করে তবে তা কুফর। আর যদি সালাম বা সম্ভাষণ প্রদানের জন্য করে তবে কুফর হবে না, এরূপ ব্যক্তি কবীরা গোনাহে লিপ্ত পাপী বলে গণ্য হবে।’’[4]

[1] সূরা (৪১) ফুস্সিলাত: ৩৭ আয়াত।

[2] সূরা (৭২) জিন্ন: ১৮ আয়াত।

[3] ইবনু আবিদীন, হাশিয়াতু রাদ্দিল মুহতার ১/৪৮০, ৬/৪২৬।

[4] ইবনু আবিদীন, হাশিয়াতু রাদ্দিল মুহতার ৬/৩৮৩।