আল-ফিকহুল আকবর আল-ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

এরা মুসলিমদের সাথে তাওহীদুর রুবূবিয়্যাতের অধিকাংশ বিষয়ে একমত। তারা বিশ্বাস করে যে, বিশ্বের বৃহৎ বিষয়গুলো পরিচালনার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই। এছাড়া যে বিষয়গুলো তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন এবং অন্য কাউকে কোনো এখতিয়ার বা ক্ষমতা প্রদান করেন নি সে সকল বিষয়ও তিনি পরিচালনা করেন। অন্যান্য বিষয়ে তারা মুসলিমদের সাথে একমত নয়। তারা দাবি করে যে, তাদের পূর্ববর্তী নেককার বুজুর্গগণ আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করেছিলেন, ফলে আল্লাহ তাদেরকে ‘উলূহিয়্যাত’ বা ‘উপাস্যত্ব’ প্রদান করেন। এভাবে তারা অন্যান্য বান্দাদের ‘ইবাদত’ লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছেন। যেমনভাবে রাজাধিরাজ মহারাজের খাদিম বা সেবক তার সেবা ও ভক্তি করে যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তখন মহারাজ সে খাদিমকেও রাজত্ব উপঢৌকন প্রদান করেন বা তাকে একটি বিশেষ এলাকার ‘সামন্ত’ রাজা বানিয়ে দেন। তখন সে রাজ্যের পরিচালনার দায়ভার এ সামন্ত রাজার উপরেই বর্তায়। আর উক্ত রাজ্যের প্রজাদের দায়িত্ব হয়ে যায় এ রাজার আনুগত্য করা।

তারা বলে, এ সকল বুজুর্গের ইবাদত না করে শুধু আল্লাহর ইবাদত করলে তা কবুল হবে না। এ ছাড়া আল্লাহ অতি মহান ও অতি ঊর্ধ্বে। তাঁর নৈকট্যের জন্য সরাসরি তাঁর ইবাদত কোনো কাজে আসবে না। বরং এ সকল বুজুর্গের ইবাদত করলে তারা আল্লাহর নৈকট্য পাইয়ে দিতে পারেন। তারা বলে, এরা শুনেন, দেখেন, তাদের উপাসকদের জন্য সুপারিশ করেন, তাদের বিষয়াদি পরিচালনা করেন এবং তাদের সাহায্য করেন। ....

.... হে পাঠক, মুশরিকদের আকীদা ও কর্ম সম্পর্কে এ সকল বিবরণের সত্যতা সম্পর্কে যদি আপনি নিশ্চিত হতে চান তবে এ যুগের কুসংস্কারগ্রস্ত ও বিভ্রান্ত মানুষদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। বিশেষ করে যারা মুসলিম দেশের প্রান্তে বা সীমান্তে বসবাস করে। লক্ষ্য করে দেখুন যে, ওলী বা বেলায়াত সম্পর্কে তাদের ধারণা কী? তারা প্রাচীন ওলীগণের বেলায়াতের স্বীকৃতি দেয় কিন্তু বর্তমানে আর এভাবে ওলী হওয়া তারা সম্ভব বলে মনে করে না। তারা কবর ও ওলীদের দরজায় যেয়ে পড়ে থাকে এবং বিভিন্ন প্রকারের শিরক, বিদ‘আত ও ভিত্তিহীন কুসংস্কারের মধ্যে তারা নিমগ্ন। আরবের মুশরিকগণ যেভাবে ইবরাহীম (আঃ)-এর দীনকে বিকৃত করেছিল এবং মহান আল্লাহকে মানুষের সাথে তুলনা করেছিল অনুরূপ বিকৃতি ও তুলনার মধ্যে এরা আকণ্ঠ নিমজ্জিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: ‘‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি অনুসরণ করবে।’’[1] এ হাদীসটি এদের বিষয়ে পুরোপুরিই খাটে। পূর্ববর্তী মুশরিকগণ যত প্রকারের বিভ্রান্তি বা ফিতনায় নিপতিত হয়েছিল সেগুলোর সবই মুসলিম নামধারী কোনো না কোনা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান। তারা এসকল শিরকের গভীরে নিমজ্জিত রয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।’’[2]

[1] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২৭৪, ৬/২৬৬৯ (কিতাবুল আম্বিয়া, বাবু যিকরিন আন বানী ইসরাঈল, কিতাবুল ইতিসাম, বাব... লাতাত্তাবিউন্না...); মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২০৫৪ (কিতাবুল ইলম, বাবু ইত্তিবায়ি সুনানিল ইয়াহূদ ওয়ান নাসারা)

[2] শাহ ওয়ালি উল্লাহ, আল-ফাওযুল কাবীর, পৃ. ২৪-২৬।