আল-ফিকহুল আকবর আল-ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

চূড়ান্ত ভক্তি প্রকাশ করে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারীর জন্য যে কর্ম করা হয় তা বিভিন্ন পর্যায়ের। কিছু কর্ম মানুষ ‘ইবাদত’ হিসেবেই করে। কোনো নাস্তিক তা করে না। শুধু ‘‘বিশ্বাসীরা-ই’’ এরূপ কর্ম করে। যে বিশ্বাসী যার মধ্যে এরূপ অলৌকিক ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে তাকে উদ্দেশ্য করেই এরূপ কর্ম করে। সকল সমাজের সকল ভাষার মানুষই এগুলো জানেন। পূজা, অর্চনা, বলি, কুরবানী, মানত, সাজদা, প্রার্থনা, জপ ইত্যাদি এ জাতীয় কর্ম। পাশাপাশি কিছু কর্ম আছে যা মানুষ ইবাদত হিসেবেও করে এবং জাগতিকভাবেও করে। যেমন প্রশংসা করা, ভয় করা, আনুগত্য করা ইত্যাদি। এগুলো মানুষ হিসেবে জাগতিকভাবে এক মানুষ অন্য মানুষের জন্য করে। আবার ‘মা’বূদ’ বা পূজিত সত্তার জন্যও করে।

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রথম প্রকারের কর্ম আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করাই শিরক। যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য মানত, বলি, উৎসর্গ, জবাই, অলৌকিক সাহায্য প্রার্থনা ইত্যাদি করা। এগুলো কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করলে তা শিরক বলে গণ্য হবে। কারণ, কারো ভিতরে ঈশ্বরত্ব (divinity), ঐশ্বরিক ক্ষমতা, অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা, চূড়ান্ত আধিপত্য, অলৌকিক শক্তি ইত্যাদি কল্পনা না করলে কেউ তার জন্য এরূপ কর্ম করে না। আর দ্বিতীয় প্রকারের কর্ম ইবাদাত কিনা তা নির্ভর করবে কর্মকারীর উদ্দেশ্য বা চেতনার উপর। কাউকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী মনে করে চূড়ান্ত ভক্তি ও অসহায়ত্ব প্রকাশের অনুভূতি নিয়ে এরূপ কর্ম করলে তা শিরক বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রাহ) বলেন:

اِعْلَمْ أَنَّ الْعِبَادَةَ هِيَ التَّذَلُّلُ الأَقْصَى. وَكَوْنُ التَّذَلُّلِ أَقْصَى مِنْ غَيْرِهِ لاَ يَخْلُو إِمَّا أَنْ يَكُوْنَ بِالصُّوْرَةِ- مِثُلُ كَوْنِ هَذَا قِيَاماً وَذَلِكَ سُجُوْداً- أَوْ بِالنِّيَّةِ بِأَنْ نَوَى بِهَذَا الْفِعْلِ تَعْظِيْمَ الْعِبَادِ لِمَوْلاَهُمْ، وَبِذَلِكَ تَعْظِيْمَ الرَّعِيَّةِ لِلْمُلُوْكِ، أَوِ التَّلاَمِذَةِ لِلأُسْتَاذِ، لاَ ثَالِثَ لَهُمَا.

‘‘জেনে রাখ, ইবাদত হলো চূড়ান্ত ভক্তি-বিনয়। কোন্ ভক্তি-বিনয় চূড়ান্ত এবং কোন্টি চূড়ান্ত নয় তা দুভাবে জানা যায়: (১) ভক্তি-বিনয়ের প্রকার থেকে, যেমন দাঁড়িয়ে ভক্তি করা চূড়ান্ত ভক্তি নয় তবে সাজদা করা চূড়ান্ত ভক্তি এবং (২) নিয়্যাত বা উদ্দেশ্য থেকে, যেমন বান্দা হিসেবে তার মাবূদকে ভক্তি করার উদ্দেশ্যে যে ভক্তি বা বিনয় প্রকাশ করা হয় তা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। আর প্রজা হিসেবে রাজার বা ছাত্র হিসেবে শিক্ষকের ভক্তির নিয়েতে যা করা হয় তা চূড়ান্ত ভক্তি নয় বলে গণ্য। ভক্তি-বিনয় চূড়ান্ত পর্যায়ের কি না তা জানার তৃতীয় কোনো পথ নেই।’’[1]

[1] শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ১/১৭৯।