এদিকে নাবী কারীম (ﷺ)-এর কাফন-দাফনের পূর্বেই নাবী কারীম (ﷺ)-এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ব্যাপারে মুসলিমগণের মধ্যে মত বিরোধের সৃষ্টি হল। সাকীফা বনু সায়েদার মধ্যে, মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে আলোচনা ও বাদানুবাদ চলতে থাকল এবং দলীল প্রমাণাদি পেশ ও প্রশ্নোত্তর চলছিল, অবশেষে আবূ বাকর (রাঃ)-এর প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হল। এর ফলে যথেষ্ট সময় অতিবাহিত হয় এবং রাত্রি আগমন করে। লোকজনেরা নাবী কারীম (ﷺ)-এর কাফন-দাফনের পরিবর্তে আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত্রি অতিবাহিত হয়ে সমাগত হয় মঙ্গলবার সকাল। এ সময় পর্যন্ত নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ মুবারক একটি জরীদার ইয়েমেনী চাদর দ্বারা আবৃত অবস্থায় বিছানায় শায়িত ছিল। ঘরের মানুষেরা ভিতর থেকে দরজা বন্ধ রেখেছিল।
মঙ্গলবার দিবস নাবী কারীম (ﷺ)-কে কাপড়সহ গোসল দেওয়া হল। গোসল দেওয়ার কাজে অংশ গ্রহণ করলেন আব্বাস, আলী, আববাসের পুত্র ফযল এবং কাশেম (রাঃ), রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর আযাদকৃত দাস শাকরান, উসামা বিন যায়দ এবং আওস বিন খাওলী (রাঃ)। আব্বাস, ফযল ও কাশেম (রাঃ) নাবী কারীম (ﷺ)-এর পাশ পরিবর্তন করে দিচ্ছেলেন। উসামা এবং শাকরান পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন, আলী (রাঃ) ধৌত করছিলেন এবং আওস নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ মুবারককে আপন বক্ষের উপর ভর করে নিয়ে রেখেছিলেন।
রাসূলুল্লাহকে তিনবার কুল পাতার মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল দেয়া হয়। কুবায় অবস্থিত সা’দ বিন খায়সামাহ ‘গারস’ নামক কূপের পানি দিয়ে তাঁকে গোসল দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই কূপের পানি পান করতেন।
গোসলের পর তিনটি কুরসুফ হতে তৈরী সাদা ইয়েমেনী চাদর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাফনের ব্যবস্থা করা হল। এসবের মধ্যে জামা কিংবা পাগড়ি ছিল না।[1]
নাবী কারীম (ﷺ)-এর অন্তিম আরামগাহ (শান্তি শয্যা) সম্পর্কে সাহাবীগণ (রাযি.)-এর মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ‘আমি নাবী কারীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘কোন নাবীকে (পৃথিবী) থেকে উঠানো হয় নি (মৃত্যুবরণ করেন নি) তাঁকে সেই স্থানে দাফন করা ব্যতীত যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’ এ মীমাংসার পর নাবী কারীম (ﷺ) যে বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন আবূ ত্বালহাহ (রাঃ) তা উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর তার নীচে বগলী কবর খনন করা হল।
এরপর সাহাবীগণ (রাযি.) পালাক্রমে দশ দশ জন করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে জানাযা আদায় করলেন। নির্ধারিত কোন ইমামের ব্যবস্থা ছিল না। সর্ব প্রথম নাবী কারীম (ﷺ) পরিবার বনু হাশিমের লোকজনেরা সালাত আদায় করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে মুহাজির ও আনসারগণ জানাযা সালাত আদায় করেন। অতঃপর ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পুরুষ, মহিলা ও শিশুগণ সালাত আদায় করেন।
সালাতে জানাযা আদায় করতে মঙ্গলবার দিবস পুরোটাই অতিবাহিত হয়ে যায়। মঙ্গলবার দিবস অতিবাহিত হওয়ার পর বুধবারের রাত্রে নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ মুবারককে সমাহিত করা হয়। আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, পুরো দিবসটাই সালাতে জানাযা চলার কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দাফন সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। এভাবে সময় অতিবাহিত হতে থাকার পর বুধবার রাত্রের মধ্যভাগে দাফন-কাফনের শব্দ কর্ণগোচর হয়।[2]
[2] শাইখ আব্দুল্লাহ রচিত মুখতাসারুস সীরাতে রাসূল (সাঃ) ৪৭১ পৃঃ। মৃত্যু বিবরণ বিস্তারিত অবগতির জন্য দ্রষ্টব্য সহীহুল বুখারীম, নাবী (সাঃ) অসুস্থতা অধ্যায়, এবং এর পরের কয়েকেটি অধ্যায়, ফাতহুল বারী সহ। সহীহুল মুসলিম ও মিশকাতুল মাসাবীহ, নাবী (সাঃ)-এর মৃত্যূ অধ্যায় দ্রঃ। ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৬৪৯-৬৬৫ পৃঃ। তালকিহুvাহুমি আহলিল আসার ৩৮-৩৯ পৃঃ। রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ২৭৭-২৮৬ পৃঃ। সময়ের নির্দিষ্টতা সাধারণভাবে রহমাতুল্লিল আলামীন হতে গৃহীত।