এদিকে আবূ বাকর (রাঃ) সুনহ’তে অবস্থিত নিজ বাড়ি হতে ঘোড়ায় চড়ে আগমনের পর মসজিদে নাবাবীতে প্রবেশ করেন। অতঃপর লোকজনদের সঙ্গে কোন কথাবার্তা না বলে সরাসরি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গমন করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট পৌঁছলেন। নাবী কারীম (ﷺ)-এর দেহ মুবারক তখন জরীদার ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিল। আবূ বাকর পবিত্র মুখমণ্ডল থেকে চাদর সরিয়ে তা চুম্বন করলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর বললেন,‘আমার মাতাপিতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক, আল্লাহ আপনার উপর দু’বার মৃত্যু একত্রিত করবেন না, যে মৃত্যু আপনার ভাগ্যলিপিতে ছিল সেটা এসে গেছে। এরপর তিনি সেখান থেকে বাইরে বের হয়ে আসলেন। সে সময় উমার (রাঃ) লোকজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁকে বললেন, ‘উমার বসো’। উমার (রাঃ) বসতে অস্বীকার করলেন। এদিকে সাহাবীগণ (রাযি.) উমার (ﷺ)-কে ছেড়ে দিয়ে আবূ বাকর (রাঃ)-এর প্রতি অধিক মনোযোগী হলেন। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন,
(وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُوْلٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلٰى أَعْقَابِكُمْ وَمَن يَنقَلِبْ عَلٰى عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِيْ اللهُ الشَّاكِرِيْنَ) [آل عمران:144].
‘আল্লাহর প্রশস্তির পর, তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পূজা করতেছিল তারা জেনে রাখুক যে মুহাম্মাদ (ﷺ) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করতেছিলে, অবশ্যই আল্লাহ সর্বদাই জীবিত থাকবেন, কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না, আল্লাহ বলেছেন, ‘মুহাম্মাদ (ﷺ) একজন রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁর পূর্বে অনেক রাসূল বিগত হয়ে গেছেন তাতে কি, তবে কি যদি নাবী মৃত্যুবরণ করেন, কিংবা তাঁকে হত্যা করা হয় তাহলে কি তোমরা তোমাদের গোড়ামির ভরে (পূর্বাবস্থায়) ফিরে যাবে, স্মরণ রেখো, যারা পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না, এবং অতি শীঘ্রই আল্লাহর শোকরগোজারদের প্রতিদান দেয়া হবে।’ [আল ‘ইমরান (৩) : ১৪৪]
সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) যাঁরা এতক্ষণ পর্যন্ত সীমাহীন দুঃখ বেদনায় কাতর অবস্থায় নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)-এর এ ভাষণ শ্রবণের পর তাঁরা সুনিশ্চিত হলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রকৃতই ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, ‘আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে এমনটি মনে হচ্ছিল যে, লোকজনেরা যেন জানতই না যে, আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। আবূ বাকর (রাঃ) যখন এ আয়াত পাঠ করলেন তখন সকলেই এ আয়াত সম্পর্কে যেন নতুনভাবে ওয়াকেফহাল হলেন এবং সকলকেই এ আয়াত তিলাওয়াত করতে দেখা গেল।
সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব (রাঃ) বলেছেন যে, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি যখন আবূ বাকর (রাঃ)-কে এ আয়াত পাঠ করতে শুনলাম তখন আমি অত্যন্ত লজ্জিতবোধ করলাম। (অথবা আমার পিঠ ভেঙ্গে পড়ল) এমনকি আমার দ্বারা আমার পা উঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ)-কে এ আয়াত পাঠ করতে শুনে আমি মাটির দিকে গড়িয়ে পড়লাম। কারণ, আমি তখন অনুধাবন করতে সক্ষম হলাম যে, নাবী কারীম (ﷺ) প্রকৃতই ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।[1]