অব্যাহত মৃত্যু যন্ত্রণা (الِاحْتِضَارُ):

অতঃপর শুরু হল মৃত্যু যন্ত্রণা। আয়িশা (রাঃ) নাবী কারীম (ﷺ)-কে নিজ দেহের উপর ভর করিয়ে থেমে রইলেন। তাঁর এক বর্ণনা সূত্রে জানা যায়, তিনি বলেছেন, ‘আমার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হচ্ছে নাবী কারীম (ﷺ) আমার ঘরে, আমার বিছানায়, আমার গ্রীবা ও বক্ষের মাঝে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সময় আল্লাহ তা‘আলাভ আমার লালা এবং তাঁর লালাকে একত্রিত করে দিয়েছেন। ঘটনাটি ছিল এ রকম যে, আব্দুর রহমান বিন আবূ বাকর (রাঃ) নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট আগমন করলেন। তাঁর হাতে ছিল মিসওয়াক। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার শরীরে হেলান অবস্থায় ভর করেছিলেন। আমি দেখলাম যে, নাবী কারীম (ﷺ) মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ্য করছেন। অতএব, আমি বুঝে নিলাম যে তিনি মিসওয়াক চাচ্ছেন। আমি বললাম, ‘আপনার জন্য কি মিসওয়াক নিব?’ তিনি মাথা নেড়ে তা নেয়ার জন্য ইঙ্গিত করলেন। অতঃপর একটি মিসওয়াক নিয়ে নাবী কারীম (ﷺ)-কে দিলাম। তিনি ইঙ্গিতে বললেন, ‘হ্যাঁ’। আমি মিসওয়াক খানা নরম করে দিলে খুব সুন্দরভাবে তিনি মিসওয়াক করলেন। সম্মুখেই ছিল পানির পাত্র। পানিতে দু’ হাত ডুবিয়ে তিনি মুখমণ্ডল মুছতে মুছতে বলছিলেন, ‏(لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٌ‏....)‏‏ ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ’ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, মৃত্যু যন্ত্রণা একটি অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।[1]

মিসওয়াক থেকে ফারেগ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাত অথবা আঙ্গুল উত্তোলন করলেন এবং ছাদের দিকে দৃষ্টি তুলে ধরলেন। তাঁর ঠোঁট দুটি একটু নড়ে উঠল। আয়িশা (রাঃ) কান পেতে শ্রবণ করলেন, তিনি বলছিলেন,

‏(‏مَعَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ مِنْ النَّبِيِّيْنَ وَالصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ، اللهم اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ، وَأَلْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الْأَعْلٰي‏.‏ اللهم، الرَّفِيْقُ الْأَعْلٰي‏)‏‏.‏

‘হে আল্লাহ! নাবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ এবং সৎ ব্যক্তিগণ যাঁদের তুমি পুরস্কৃত করেছ আমাকে তাদের দলভূক্ত কর এবং আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি তুমি অনুগ্রহ কর। হে আল্লাহ! আমাকে রফীকে আ’লায় পৌঁছে দাও। হে আল্লাহ! রফীক্বে আ’লা।[2]

এ ঘটনা সংঘটিত হয় একাদশ হিজরীর ১২ রবিউল আওয়াল সোমবার সূর্য্যের উত্তপ্ত হওয়ার সময়। সে সময় নাবী কারীম (ﷺ)-এর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর চার দিন।

[1] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬৪০ পৃঃ।

[2] সহীহুল বুখারী, নাবী কারীম (সাঃ)-এর অসুস্থতা অধ্যায় এবং শেষ কথোপকথন অথ্যায় ২য় খন্ড ৬৩৮-৬৪১ পৃঃ।