আরব উপদ্বীপের উপর মুসলিমগণের প্রভাব বিস্তার এবং তাঁদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে এ যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফলোৎপাদক ঘটনা। এ যুদ্ধের পর থেকে মানুষের নিকট এটা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, আরব উপদ্বীপের মধ্যে ইসলামী শক্তিই হচ্ছে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত শক্তি। অন্য কোন শক্তিরই আর তেমন কোন কার্যকারিতা নেই। এর ফলে অর্বাচীন ও মুনাফিক্বগণের সেই সকল অবাঞ্ছিত কামনা বাসনা যা মুসলিমগণের বিরুদ্ধে যুগের বিবর্তনের গতিধারায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশায় আশান্বিত ছিল তা একদম নিঃশেষ হয়ে গেল। কারণ, তাদের সকল আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু ছিল যে, রোমক শক্তি তা যখন ইসলামী শক্তির মোকাবেলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল, তখন তাদের লালিত আকঙ্ক্ষা পূরণের আর কোন পথই রইল না। তখন তাদের কাছে এটাও সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, ইসলামী শক্তির নিটক আত্মসমর্পণ করা ছাড়া নিস্কৃতি লাভের আর কোন পথই অবশিষ্ট রইল না।

কাজেই পরিবর্তিত এ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তখন এ রকম কোন প্রয়োজন ছিল না যে, মুসলিমগণ মুনাফিক্বদের সঙ্গে নম্র ও অযাচিত ভাবে ভদ্র ব্যবহার করবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিমগণ নির্দেশিত হলেন তাদের সঙ্গে শক্ত, সাহসিকতাপূর্ণ ও শঙ্কাহীন আচরণ করতে। এমনকি তাদের সদকা গ্রহণ, তাদের সালাতে জানাযায় অংশ গ্রহণ, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাদের কবরের পাশে যাওয়ার ব্যাপারেও মুসলিমগণকে নিষেধ করে দেয়া হল। অধিকন্তু, ষড়যন্ত্র ও দূরভিসন্ধির বশবর্তী হয়ে মসজিদ নামের যে ক্ষুদ্র কুটিরটি তৈরি করেছিল তা ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল। এ সময় তাদের সম্পর্কে এমন এমন সব আয়াত অবতীর্ণ হতে থাকল যার মাধ্যমে তাদের কার্যকলাপ উলঙ্গ ভাবে জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়ল। তাদের শঠতা ও দুরভিসন্ধির ব্যাপারে সন্দেহের আর কোন অবকাশই রইল না। এ যেন মদীনাবাসীদের জন্য উল্লেখিত আযাতসমূহ ছিল ঐ মুনাফিক্বদের চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে অঙ্গুলি সংকেত।

এ যুদ্ধের ইতিবাচক প্রভাবসমূহের মধ্যে এ কথাটা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, মক্কা বিজয়ের পরে এমন কি পূর্বে যদিও আরবের প্রতিনিধিগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে আসতে আরম্ভ করেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাবুক যুদ্ধের পরই যথোচিতভাবে শুরু হয়েছিল।[1]

[1] উল্লেখিত যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নোক্ত উৎস হতে সংঘৃহীত হয়েছে, ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৫১৫-৫৩৭ পৃঃ, যাদুল মা’আদ ৩য় খন্ড, ২-১৩ পৃঃ, সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৬৩৩-৬৩৭ ও ১ম খন্ড ২৫২-৪১৪ পৃ: অন্যান্য সহীহুল মুসলিম নাবাবী সহ ২য় খন্ড ২৪৬ পৃঃ, ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড ১১০-১২৬ পৃঃ, শাইখ আব্দুল্লাহ রচিত মুখতাসারুস সীরাহ ৩৯১-৪০৭ পৃঃ।