মদীনায় প্রত্যাবর্তন (الرُّجُوْعُ إِلْى الْمَدِيْنَةِ):

সংঘর্ষ এবং রক্তক্ষয় ছাড়াই মুসলিম বাহিনী বিজয়ী বেশে মদীনা প্রত্যাবর্তন করলেন। যুদ্ধের ব্যাপারে মু’মিনদের আল্লাহই যথেষ্ট হলেন। তবে পথের মধ্যে এক জায়গায় একটি গিরিপথের নিকট ১২ জন মুনাফেক নাবী কারীম (ﷺ)-কে হত্যার এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালায়। সে সময় নাবী সে গিরিপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শুধু আম্মার (রাঃ) যিনি উটের লাগাম ধরে ছিলেন এবং হুযায়ফা (রাঃ) ইয়ামান যিনি উটকে খেদিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্যান্য সাহাবীগণ (রাঃ) দূরবর্তী উপত্যকার নিম্নভূমির মধ্য দিয়ে পথ চলছিলেন। এ কারণে মুনাফিক্বগণ তাদের এ ঘৃণ্য চক্রান্তের জন্য এটিকে একটি মোক্ষম সুযোগ মনে করে নাবী কারীম (ﷺ)-এর দিকে অগ্রসর হতে থাকল।

এদিকে সঙ্গীদ্বয়সহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যথারীতি সম্মুখ পানে অগ্রসর হচ্ছিলেন এমন সময় পশ্চাত দিকে থেকে অগ্রসরমান মুনাফিক্বদের পায়ের শব্দ তিনি শুনতে পান। এরা সকলেই মুখোশ পরিহিত ছিল। তাদের আক্রমণের উপক্রমমুখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হুযায়ফাকে তাদের দিকে প্রেরণ করলেন। তিনি তাঁর ঢালের সাহায্যে মুনাফিক্বদের বাহনগুলোর মুখের উপর প্রবল ভাবে আঘাত করতে থাকলেন। এর ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় তারা ভীত সন্ত্রস্ত্র অবস্থায় পলায়ন করতে করতে গিয়ে লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের নাম বলে দেন এবং তাদের অসদুদ্দেশ্য সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। এ জন্য হুযায়ফা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ‘রাযদান’ রহস্যবিদ বলা হয়। এ ঘটনা উপলক্ষে আল্লাহর এ ইরশাদ অবতীর্ণ হয়

‏(‏وَهَمُّوْا بِمَا لَمْ يَنَالُوْا‏)‏ ‏[‏التوبة‏:‏74‏]‏‏

‘তারা ঐ কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিল যা তারা পায় নি।’ [আত্-তাওবাহ (৯) : ৭৪]

সফর শেষে নাবী কারীম (ﷺ) যখন দূর হতে মদীনার দৃশ্য দেখতে পেলেন তখন তিনি বললেন, (তাবা) এবং (উহুদ), এগুলো হচ্ছে সেই পর্বত যা আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও যাকে ভালবাসি। এদিকে যখন মদীনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আগমন সংবাদ পৌঁছে গেল তখন মহিলা ও কিশোরেরা ঘর থেকে বের হয়ে এসে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবীগণকে (রাঃ) খোশ আমদেদ জানিয়ে এ সঙ্গীতে গুঞ্জণধ্বনি উচ্চারণ করল।[1]

طلع البـدر علينا ** من ثنيات الوداع

وجب الشكر علينا ** ما دعا لله داع

অর্থ : সান্নায়াতুল ওয়াদা’ নামকস্থান হতে আমাদের উপর চৌদ্দ তারিখের চন্দ্র উদিত হল। আহবানকারীগণ যতক্ষণ আল্লাহকে আহবান করতে থাকবে ততক্ষণ আমাদের কর্তব্য হবে শোকর করা।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রজব মাসে তাবুকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন এবং প্রত্যার্তন করেছিলেন রমযান মাসে। এ সফরে পূর্ণ পঞ্চাশ দিন অতিবাহিত হয়েছিল। বিশ দিন তাবুকে এবং ত্রিশ দিন পথে যাতায়াতে। তাবুকে অভিযান ছিল তাঁর জীবনের শেষ যুদ্ধাভিযান যাতে স্বশরীরে তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

[1] এ হচ্ছে ইবনুল কাইয়্যেমের বিবরণ। ইতোপূর্বে এ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।