আওতাসে অবতরণের পর লোকজনেরা তাদের নেতার নিকট একত্রিত হল। তাদের মধ্যে দোরাইদ বিন সেম্মাও ছিল। এ ব্যক্তি অত্যন্ত বার্ধক্য ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। কাজেই, যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কিত তথ্যাদি অবগত হয়ে পরামর্শ দান ছাড়া আর কোন কিছুই করার উপযুক্ততা তার ছিল না। কিন্তু প্রকৃতই সে ছিল একজন বাহাদুর দাঙ্গাবাজ ও বিজ্ঞ যোদ্ধা। সে জিজ্ঞেস করল তোমরা কোন্ উপত্যকায় অবস্থান করছ?’ উত্তর দেয়া হল, ‘আওতাস উপত্যকায়।’ সে বলল, ‘ঘোড়সওয়ারদের জন্য উত্তম ভ্রমণ স্থান বটে। না, কঙ্করময়, না খানা খন্দক বিশিষ্ট, না খারাপ নিম্নভূমি। কিন্তু ব্যাপারটি কি যে, আমি উটের উচ্ছ্বাস ধ্বনি, গাধার চিৎকার, শিশুদের ক্রন্দন এবং বকরীর ব্যা ব্যা ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি?’
লোকজনেরা বলল, ‘মালিক বিন আওফ সৈন্যদের সঙ্গে তাদের মহিলাদের, শিশুদের, গবাদি এবং সম্পদাদি নিয়ে এসেছেন। এ প্রেক্ষিতে দোরাইদ মালিক ইবনু আওফাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘তুমি কি ভেবে এমন কাজ করেছ?’
সে বলল, ‘আমি চিন্তা করেছি যে, প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিবার এবং সম্পদাদি থাকবে, যাতে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উত্তেজনা নিয়ে তারা যুদ্ধ করে।’
দুরাইদ বলল, ‘আল্লাহর কসম! তুমি ভেড়ার রাখাল বটে, যুদ্ধে যদি পরাজিত হও তাহলে কোন বস্তু কি তোমাকে রক্ষা করতে পারবে? দেখ! আর যদি তুমি যুদ্ধে বিজয়ী হও তাহলে তলোয়ার এবং বর্শা দ্বারাই তো তুমি উপকৃত হতে। আর যদি পরাজয় বরণ কর তাহলে তোমাদের পরিবার পরিজন এবং সহায় সম্পদ সর্ব ব্যাপারেই অপমানের শিকার হতে হবে।
অতঃপর কতগুলো গোত্র এবং নেতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের পর দোরাইদ বলল, ‘হে মালিক! তুমি বনু হাওয়াযিন গোত্রের মহিলা এবং শিশুদেরকে ঘোড়সওয়ারদের গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে এসে খুব একটা ভাল কাজ কর নি। তাদেরকে তাদের অঞ্চলে উচ্চ ও সংরক্ষিত স্থানে পাঠিয়ে দাও। এরপর ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে বিধর্মীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হও। যদি তোমরা জয়ী হও তাহলে পিছনের নারী শিশুরা তোমাদের সংগে এসে মিলিত হবে, আর যদি তোমরা পরাজিত হও তাহলেও তোমাদের পরিবারবর্গ ধন সম্পদ এবং গবাদিগুলো সংরক্ষিত থাকবে।’
কিন্তু জেনারেল কমান্ডার মালিক এ পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি এমনটি করব না। তুমি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছ এবং তোমার বিচার বুদ্ধিও লোপ পেয়েছে। আল্লাহর শপথ! হয় হাওয়াযিন আমার আনুগত্য করবে, নতুবা আমি এই তলোয়ারের উপর নির্ভর করব এবং তা আমার পিঠের এক দিক হতে অপর দিকে বেরিয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে মালিক এটা সহ্য করতে পারল না যে, এ যুদ্ধে দোরাইদের সুনাম হবে কিংবা ওর পরামর্শ মতো কাজ করতে হবে। হাওয়াযিন বলল, ‘আমরা তোমার আনুগত্য করছি।’ এর প্রেক্ষিতে দোরাইদ বলল, ‘এ এমন যুদ্ধ যাতে আমি অংশ গ্রহণ তো করবই না, বরং মনে করব যে, আমার নাগালের বাইরে চলে গেছে।’
يا ليتنـي فيها جـَذَعْ ** أخُبُّ فيها وأضَعْ
أقود وطْفَاءَ الزَّمَــعْ ** كأنها شـاة صَدَعْ
দুঃখ আমি যদি এ সময় যুবক হতাম, পূর্ণ উদ্যমের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করতাম। পায়ের লম্বা চুল বিশিষ্ট এবং মধ্যম প্রকারের বকরীর মতো ঘোড়ার পরিচালনা করতাম।