বুন লাহইয়ান গোত্রের লোকজনেরা প্রতারণার মাধ্যমে রাজী নামক স্থানে ১০ জন সাহাবা (রাঃ)-কে আটক করার পর আটজনকে হত্যা করেছিল এবং অবশিষ্ট দু’ জনকে মক্কার মুশরিকগণের নিকট বিক্রয় করে দিয়েছিল যেখানে তাঁদেরকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অঞ্চলটি হিজাযের অভ্যন্তরে মক্কা সীমানার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল এবং যেহেতু মুসলিমগণের সঙ্গে কুরাইশ ও বেদুঈনদের সম্পর্কের একটা কঠিন টানাপোড়নের অবস্থা বিরাজমান ছিল সেহেতু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজাযের গভীর অভ্যন্তর ভাগে প্রবেশ করে বড় শত্রুদের নিকট যাওয়াকে সমীচীন মনে করেন নি।
কিন্তু কাফের মুশরিকগণ যখন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ল এবং দলে ভাঙ্গন ধরার ফলে তাদের ঐক্য বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে পড়ল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এটা সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলেন যে, রাজী নামক স্থানে লাহইয়ান গোত্রের লোকজনেরা সাহাবীগণকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তার প্রতিশোধ গ্রহণের উপযুক্ত সময় সমাগত। কাজেই ৬ষ্ঠ হিজরীর রবিউল আওয়াল, মতান্তরে জুমাদালউলা মাসে দু’ শত সাহাবী সমভিব্যাহারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাযী অভিমুখে যাত্রা করেন। যাত্রার প্রাক্কালে মদীনার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অর্পণ করেন ইবনু উম্মু মাকতুমের উপর এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি শাম রাজ্য অভিমুখে যাত্রা করেছেন।
অগ্রাভিযানের এক পর্যায়ে অভিযাত্রী দলসহ তিনি উমাজ এবং উসফান স্থান দ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত বাতনে গাররান নামক উপত্যকায় উপস্থিত হলেন। এখানেই বনু লাহইয়ান গোত্রের লোকেরা সাহাবীগণকে হত্যা করেছিল। সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি শহীদ সাহাবাগণের (রাঃ) জন্য আল্লাহ তা‘আলার সমীপে রহমতের প্রার্থনা করলেন। এদিকে বনু লাহইয়ান গোত্রের লোকেরা মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযানের সংবাদ অবগত হয়ে পর্বতশীর্ষ অতিক্রম করে পলায়ন করল, ফলে তাদের কাউকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হল না।
রাসূলে কারীম (ﷺ) তাঁর বাহিনীসহ বনু লাহইয়ান গোত্রের আবাসস্থানে দুই দিন অবস্থান করলেন, কিন্তু এ গোত্রের কোন লোকজনেরই খোঁজ খবর তিনি পান নি। দ্বিতীয় দিনের পর তিনি সেখান হতে উসফানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান। সে স্থানে পৌঁছার পর তিনি দশ জন ঘোড়সওয়ারকে কোরাউলগমীমের দিকে প্রেরণ করেন। যাতে কুরাইশগণও নাবী কারীম (ﷺ)-এর অভিযান সম্পর্কে অবগত হন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় নি। এভাবে মোট চৌদ্দ রাত মদীনার বাহিরে অতিবাহিত করার পর তিনি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।