বাইআতের বিপজ্জনক দিকগুলোর পুনঃ স্মরণ (التَّأْكِيْدُ مِنْ خُطُوْرِةِ الْبَيْعَةِ):

অঙ্গীকারের শর্তাদি সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা প্রায় সমাপ্তির পথে এবং লোকজনেরা যখন অঙ্গীকার গ্রহণ আরম্ভ করতে যাচ্ছেন এমন সময় প্রথম সারির দুজন মুসলিম যারা একাদশ বা দ্বাদশ নবুওয়াত বর্ষে হজ্জ্বের মৌসুমে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা উঠে পড়েন, যাতে মানুষের সামনে তাদের দায়িত্বের নাজুকতা ও ভয়াবহতা অর্থাৎ সম্ভাব্য বিপদাপদের ব্যাপারটি ভালভাবে ব্যাখ্যা করার প্রেক্ষাপটে সমস্যার সকল দিক ভালভাবে অবহিত হওয়ার পর তারা শপথ গ্রহণ করে। এর পিছনে আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল তা হচ্ছে এ সকল লোকজন কতটুকু আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে তা অনুধাবন করা।

ইবনে ইসহাক্ব বলেছেন যে, যখন লোকজন অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য একত্রিত হলেন তখন আব্বাস বিন উবাদাহ বিন নাযলাহ বললেন, ‘তোমরা কি জানো যে, তাঁর সাথে (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি ইঙ্গিত ছিল) কোন কথার উপর অঙ্গীকার গ্রহণ করতে যাচ্ছ?’ তাঁরা সমবেত কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ‘জী হ্যাঁ’’।

আব্বাস (রাঃ) বললেন, ‘লাল ও কালো মানুষের বিরুদ্ধে জান্নাতের বিনিময়ে যুদ্ধ করার ব্যাপারে তোমরা তাঁর কাছে অঙ্গীকার গ্রহণ করতে যাচ্ছ। যদি তোমাদের এ রকম ধারণা যে, যখন তোমাদের সকল সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং তোমাদের দলের সম্ভ্রান্ত লোকজনকে হত্যা করা হবে তখন তোমরা তাঁর সঙ্গ ছেড়ে যাবে তাহলে এখনই ছেড়ে যাও। কেননা , তাঁকে নিয়ে যাওয়ার পর যদি তোমরা তাঁকে ছেড়ে দাও তাহলে ইহ ও পরকালের জন্য তা হবে চরম বেইজ্জতির ব্যাপার। আর যদি তোমাদের ইচ্ছা থাকে যে, তোমাদের ধনমাল ধ্বংসের এবং মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের হত্যা সত্ত্বেও এ চুক্তি সম্পন্ন করবে যার প্রতি তোমরা তাকে আহবান করছ তবে অবশ্যই তা গ্রহণ করবে। কেননা, আল্লাহর শপথ! এতেই ইহলৌকিক এবং পরলৌকিক জীবনের জন্য মঙ্গল রয়েছে।

এ কথা শ্রবণের পর সকলেই সমবেত কণ্ঠে বললেন, ‘ধন-সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির এবং সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের হত্যার মতো অত্যন্ত বিপদ সংকুল পরিস্থিতির বিনিময়ে এটা আমরা গ্রহণ করছি। তবে হাঁ একটি প্রাসঙ্গিক কথা, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা যদি যথাযথভাবে এ অঙ্গীকার পূরণ করি তবে প্রতিদানে আমাদের জন্য কি পুরষ্কারের ব্যবস্থা রয়েছে?

তিনি বললেন, ‘জান্নাত’’।

লোকেরা বললেন, ‘আপনার হাত মুবারক প্রশস্ত করুন।’

তিনি হাত প্রসারিত করলে লোকেরা তাঁর হাত ধারণ করে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন।[1]

জাবির (রাঃ)-এর বর্ণনা হচ্ছে অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য যে সময় আমরা দাঁড়ালাম সে সময় সত্তর জনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য আস’আদ বিন যুরারাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাত ধারণ করে বললেন, ‘ইয়াসরিববাসীরা! একটু থেমে যাও। আমরা উটের কলিজা নষ্ট করে (অর্থাৎ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে) এ বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়েছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। আজ তাঁকে নিয়ে যাওয়ার অর্থ সমস্ত আরববাসীর সঙ্গে শত্রুতা, তলোয়ারের আঘাতে তোমাদের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের হত্যা এবং ধন-সম্পদের অসামান্য ক্ষয়-ক্ষতি। অতএব, যদি এ সব সহ্য করতে পার তবে তাকে নিয়ে চল। এ সবের বিনিময়ে আল্লাহর সমীপে তোমাদের জন্য যে মহা পুরষ্কারের ব্যবস্থা রয়েছে তা হচ্ছে ‘জান্নাত’’। আর যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাইতে এ সব কিছুই তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় তবে এখনই তাঁকে ছেড়ে দাও। এটাই হবে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য ওজর বা আপত্তি।[2]

[1]ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৪৪৬ পৃঃ।

[2] মুসনদে আমেদ।