উপর্যুক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও মুসলিমগণ নিপীড়িত নির্যাতিত হওয়ার পূর্ব থেকে বরং বলা যায় যে, বহু পূর্ব থেকেই অবহিত ছিলেন যে, ইসলাম গ্রহণ করার অর্থ স্থায়ী বিবাদে জড়িয়ে পড়া কিংবা বিবাদ-বিসম্বাদের কারণে ক্ষয়-ক্ষতির শিকারে পরিণত হওয়া নয়, বরং এর প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী দাওয়াত পেশ করার প্রথম দিন থেকেই অজ্ঞদের অজ্ঞতা এবং তাদের অনুসৃত যাবতীয় ভ্রান্ত পথ ও পদ্ধতির অবসান কল্পে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নির্দেশিত পথে অচল অটল থাকা। এ দাওয়াতের আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীর রাজনৈতিক অঙ্গণে ইসলামী ভাবধারা ও ইসলামী বিধি-বিধানের বিস্তরণে বিশ্ব রাজনীতিকে এমনভাবে প্রভাবিত করা যাতে বিশ্বের জাতিসমূহকে আল্লাহর রেযামন্দি বা সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বান্দার দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে প্রতিষ্ঠিত করা।
কুরআন মাজীদে এ শুভ সংবাদ কখনো আকার ইঙ্গিতে কখনো বা সুস্পষ্ট ভাষায় নাজিল করা হয়েছে। অথচ গোটা পৃথিবীর উপর মুসলিমগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আভাষ ইঙ্গিত সত্ত্বেও মনে হচ্ছিল তারা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মুসলিমগণ যখন এমন এক অবস্থায় নৈরাশ্যের অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তখন অন্য দিকে আবার এমন সব আয়াত অবতীর্ণ হচ্ছিল যার মধ্যে বিগত নাবীগণের ঘটনাবলী এবং তাঁদের মিথ্যাপ্রতিপন্ন কারীগণের বিস্তারিত বিবরণের উল্লেখ ছিল। সে সব আয়াতে যে চিত্র অংকণ করা হচ্ছিল তার সঙ্গে মক্কার মুসলিম ও কাফিরগণের অবস্থার হুবহু সাদৃশ্য ছিল। এ সকল ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে এ ইঙ্গিতও প্রদান করা হচ্ছিল যে, সেই সকল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যায়-অত্যাচারীগণ কিভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং আল্লাহর সৎ বান্দাগণ কিভাবে পৃথিবীর উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ আয়াতসমূহের মধ্যে এমন আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছিল যার মধ্যে মুসলিমগণের বিজয়ী হওয়ার শুভ সংবাদ বিদ্যমান ছিল। যেমনটি কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
(وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنصُوْرُوْنَ وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَالِبُوْنَ فَتَوَلَّ عَنْهُمْ حَتّٰى حِيْنٍ وَأَبْصِرْهُمْ فَسَوْفَ يُبْصِرُوْنَ أَفَبِعَذَابِنَا يَسْتَعْجِلُوْنَ فَإِذَا نَزَلَ بِسَاحَتِهِمْ فَسَاء صَبَاحُ الْمُنذَرِيْنَ) [الصافات:171: 177]
‘আমার প্রেরিত বান্দাহদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই বলা আছে যে, তাদেরকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে। আর আমার সৈন্যরাই বিজয়ী হবে। কাজেই কিছু সময়ের জন্য তুমি তাদেরকে উপেক্ষা কর। আর তাদেরকে দেখতে থাক, তারা শীঘ্রই দেখতে পাবে (ঈমান ও কুফুরীর পরিণাম)। তারা কি আমার শাস্তি তরান্বিত করতে চায়? শাস্তি যখন তাদের উঠানে নেমে আসবে, তখন কতই না মন্দ হবে ঐ লোকেদের সকালটি যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল!।’ [আস-স-ফফাত (৩৭) : ১৭১-১৭৭]
(سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ) [القمر:45]
‘এ সংঘবদ্ধ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে আর পিছন ফিরে পালাবে।’ (আল-ক্বামার ৫৪ : ৪৫)
(جُندٌ مَّا هُنَالِكَ مَهْزُوْمٌ مِّنَ الأَحْزَابِ) [ص:11]
‘(আরবের কাফিরদের) সম্মিলিত বাহিনীর এই দলটি এখানেই (অর্থাৎ এই মাক্কাহ নগরীতেই একদিন) পরাজিত হবে।’ [স-দ (৩৮): ১১]
যারা হাবাশায় হিজরত করেছিলেন তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হলো :
(وَالَّذِيْنَ هَاجَرُوْا فِي اللهِ مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوْا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَلَأَجْرُ الآخِرَةِ أَكْبَرُ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ) [النحل:41]
‘যারা অত্যাচারিত হওয়ার পরও আল্লাহর পথে হিজরাত করেছে, আমি তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই এ দুনিয়াতে উত্তম আবাস দান করব, আর আখিরাতের পুরস্কার তো অবশ্যই সবচেয়ে বড়। হায়, তারা যদি জানত!’ [আন-নাহল (১৬): ৪১]
এভাবে কাফিরগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ইউসুফ (আঃ)-এর ঘটনা জিজ্ঞেস করল, তার উত্তরে আনুষঙ্গিক আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হলঃ
(لَّقَدْ كَانَ فِيْ يُوْسُفَ وَإِخْوَتِهِ آيَاتٌ لِّلسَّائِلِيْنَ) [يوسف:7]
‘‘ ইউসুফ আর তার ভাইদের ঘটনায় সত্য সন্ধানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে।’ (ইউসুফ ১২ : ৭)
অর্থাৎ মক্কাবাসী মুশরিকগণ আজ ইউসুফ (আঃ)-এর যে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে এরা নিজেরাও অনুরূপভাবে অকৃতকার্য হবে যেমন ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইগণ অকৃতকার্য হয়েছিল এবং তাদেরও রক্ষণাবেক্ষণের অবস্থা তাই হবে যা তাদের ভাইগণের হয়েছিল। তাদের ইউসুফ (আঃ) এবং তাঁর ভাইদের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত উচিত যে, অত্যাচারীদের হার কিভাবে হয়।
পয়গম্বরের কথা উল্লেখ করে কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
(وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّـكُم مِّنْ أَرْضِنَآ أَوْ لَتَعُوْدُنَّ فِيْ مِلَّتِنَا فَأَوْحٰى إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِيْنَ وَلَنُسْكِنَنَّـكُمُ الأَرْضَ مِن بَعْدِهِمْ ذٰلِكَ لِمَنْ خَافَ مَقَامِيْ وَخَافَ وَعِيْدِ) [إبراهيم:13، 14].
‘কাফিরগণ তাদের রসূলদের বলেছিল, ‘আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে অবশ্য অবশ্যই বের করে দেব, অন্যথায় তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই আমাদের ধর্মমতে ফিরে আসতে হবে। এ অবস্থায় রসূলদের প্রতি তাদের প্রতিপালক এ মর্মে ওয়াহী করলেন যে, ‘আমি যালিমদেরকে অবশ্য অবশ্যই ধ্বংস করব। আর তাদের পরে তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই যমীনে পুনর্বাসিত করব। এ (শুভ) সংবাদ তাদের জন্য যারা আমার সামনে এসে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভয় রাখে আর আমার শাস্তির ভয় দেখানোতে শংকিত হয়।’ [ইবরাহীম (১৪) : ১৩-১৪]
অনুরূপভাবে যে সময় পারস্য এবং রোমে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠল তখন মক্কার কাফেরগণ চাইল যে পারসিকরা জয়ী হোক, কেননা তারাও ছিল কাফের। আর মুসলিমগণ চাইল যে রোমীয়গণ জয়ী হোক, কারণ আর যা হোক না কেন, রোমীয়গণ আল্লাহর উপর, পয়গম্বর, ওহী, আসমানী কিতাবসমূহ এবং বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস করার দাবীদার ছিলেন। কিন্তু পারস্যবাসীগণ যখণ জয়লাভের পথে অনেকটা অগ্রসর হল তখন আল্লাহ তা‘আলা এ শুভ সংবাদকে যথেষ্ট মনে না করে তার পাশাপাশি এ শুভ সংবাদটিও প্রদান করেন যে, রোমীয়গণের বিজয়ী হওয়ার প্রাক্কালে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমগণকে বিশেষ সাহায্য প্রদান করবেন যাতে তারা সন্তোষ লাভ করবে। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,
(وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُوْنَ بِنَصْرِ الله ) [الروم: 4، 5]
‘সেদিন মু’মিনরা আনন্দ করবে। (সে বিজয় অর্জিত হবে) আল্লাহর সাহায্যে।’ [আর-রূম (৩০) : ৪-৫]
পরবর্তী পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলার এ সাহায্যই বদর যুদ্ধে অর্জিত মহা সাফল্য এবং বিজয়ের মধ্য দিয়ে রূপ লাভ করে। অধিকন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও অনুরূপ শুভ সংবাদ পরিবেশন করে মুসলিমগণকে উৎসাহিত করতেন। যেমন হজ্জের জনগণের মধ্যে প্রচারের জন্য গমন করতেন তখন শুধুমাত্র জান্নাতেরই শুভসংবাদ দিতেন না বরং পরিস্কার ভাষায় ঘোষণাও করতেন,
(يَأَيُّهَا النَّاسُ، قُوْلُوْا: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوْا، وَتَمْلِكُوْا بِهَا الْعَرَبَ، وَتَدِيْنُ لَكُمْ بِهَا الْعَجَمُ، فَإِذَا مِتُّمْ كُنْتُمْ مُلُوْكًا فِيْ الْجَنَّةِ)
অর্থঃ ‘ওগো জনগণ! কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করো তাহলে সফলকাম হবে এবং এর ফলে আরবের সম্রাট হতে পারবে ও আজম তোমাদের অধীনস্থ হয়ে যাবে। আবার তোমরা যখন মৃত্যুর পরে জান্নাতে প্রবেশ করবে তখনো তোমরা সেখানে উচ্চ মর্যাদা ও প্রাধান্য লাভ করবে।[1]
এ ঘটনা ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ব্যাপারটি হচ্ছে যখন উতবাহ বিন রাবী’আহ নাবী (ﷺ)-এর নিকট পার্থিব জগতের পণ্য দ্রব্যের প্রস্তাব দিয়ে বিনিময় বা লেনদেন করতে চাইল এবং তদুত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হামীম সিজদার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনালেন তখন উতবাহর এ বিশ্বাস হয়ে গেল যে, শেষ পর্যন্ত মুহাম্মাদ (ﷺ)-ই জয়ী হবেন।
অনুরূপভাবে আবূ ত্বালিবের নিকট আগমনকারী কুরাইশগণের শেষ প্রতিনিধিদের সাথে নাবী (ﷺ)-এর যে কথোপকথন হয়েছিল তারও বিস্তারিত বিবরণ ইতোপূর্বে দেয়া হয়েছে। সে সময়ও নাবী কারীম (ﷺ) মুশরিকগণকে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন যে, তারা যদি তাঁর শুধু একটি কথা মেনে নেয় তাহলে গোটা আরবজাহানে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এবং আজম তাদের অধীনস্থ হয়ে যাবে।
খাব্বাব বিন আরাত বলেছেন যে, ‘এক দফা আমি নাবী কারীম (ﷺ)-এর খেদমতে হাযির ছিলাম। তিনি ক্বাবা’হ ঘরের ছায়ায় একটি চাদরকে বালিশ করে শুয়েছিলেন। সে সময় আমরা মুশরিকগণণের হাতে দারুণভাবে নির্যাতিত হচ্ছিলাম। আমি বললাম, আল্লাহর সমীপে প্রার্থনা করছেন না কেন? এ কথা শ্রবণ করে নাবী কারীম (ﷺ)-এর মুখমণ্ডল রক্তবর্ণ ধারণ করল। তিনি উষ্মার সঙ্গে বললেন,
(لَقَدْ كَانَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَيَمْشُطُ بِمُشَاطِ الْحَدِيْدِ مَا دُوْنَ عِظَامِهِ مِنْ لَحْمٍ وَعَصَبَ مَا يَصْرِفُهُ ذٰلِكَ عَنْ دِيْنِهِ،
‘‘যাঁরা তোমাদের পূর্বে গত হয়ে গেছেন তাঁদের শরীরের হাড়ে মাংস পর্যন্ত ছিল না। যাঁদের শরীরে মাংস ছিল তাঁদের মাংসপেশীতে লোহার চিরুনী দ্বারা আঁচড়ানো হতো। কিন্তু নির্যাতিত এবং নিপীড়িত হয়েও তাঁরা কোনদিন ধৈর্যচ্যুত হন নাই।
তারপর তিনি বললেন,
وَلَيَتَمَنَّ اللهُ هٰذَا الْأَمْرَ حَتّٰى يَسِيْرُ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلٰى حَضْرَمَوْتَ مَا يَخَافُ إِلَّا اللهُ ـ زاد بيان الراوى ـ وَالذِّئْبُ عَلٰى غَنَمِهِ)
‘আল্লাহ এ বিষয়কে অর্থাৎ দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দেবেন ইনশা-আল্লাহ। এমনকি সানআ হতে হাজারা মাওত পর্যন্ত একজন আরোহীর যাতায়াত কালে আল্লাহ ছাড়া কারোই ভয় থাকবে না। তবে ছাগলের জন্য বাঘের ভয় থাকবে।[2] অন্য এক বর্ণনায় এটাও আছে যে, (وَلٰكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُوْنَ) কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।[3]
এটা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, এ শুভ সংবাদের কোন কিছুই গোপন ছিল না। মুসলিমগণের মতো কাফিরগণও এ সব ব্যাপারে সুবিদিত ছিল। তাদের এ সব কিছু অবগতির কারণে যখন আসওয়াদ বিন মুত্তালিব এবং তার বন্ধুগণ সাহাবীগণ (রাঃ)-কে দেখতে পেত তখন বিদ্রূপ করে একজন অপরজনকে বলত, ‘দেখ দেখ ঐ যে, পৃথিবীর সম্রাট এসে গেছে, এরা শীঘ্রই কায়সার ও কিসরা বাদশাহকে পরাজিত করবে। এ সব কথা বলে তারা করতালি দিত এবং মুখে বিদ্রূপাত্মক শিস্ দিত।[4]
সে সময় সাহাবীগণের (রাঃ) বিরুদ্ধে অন্যায় অত্যাচার, উৎপীড়ন নিপীড়ন, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সবকিছুর ব্যাপ্তি এবং মাত্রা উভয় দিক দিয়েই চরমে পৌঁছেছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও জান্নাত লাভের নিশ্চিত আশা, ভরসা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শুভসংবাদ ঝড়ো হাওয়ার ঝাপটায় নিক্ষিপ্ত ও বিতাড়িত মেঘমালার মতো মুসলিমগণের মানস আকাশ থেকে যাবতীয় দুঃখ বিপদকে বিদূরিত করে দিত।
এ ছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুসলিমগণের ঈমানী তালীমের মাধ্যমে অবিরামভাবে আধ্যাত্মিক খোরাক যোগাতেন, কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দিয়ে আত্মার পরিশুদ্ধির ব্যবস্থা করতেন এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ণ ও সময়োচিত উপদেশ ও নির্দ্দেশনা প্রদান করতেন। তাছাড়া আত্মসম্মানবোধ, দৈহিক ও মানসিক পরিচ্ছন্নতা, চরিত্র মাধুর্য ও চারিত্রিক পবিত্রতা, সহিষ্ণুতা, সংযম, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, অসত্য, অন্যায় ও অবিচারের প্রতি ঘৃণা ও আপোষহীন সংগ্রাম ইত্যাদি গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে সাহাবীগণ (রাঃ)-কে এমনভাবে তৈরি করে নিয়েছিলেন যেন, তাঁরা প্রয়োজনের মুহূর্তে এক একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠতে পারেন।
সর্বোপরি অজ্ঞানের অন্ধকার থেকে বাহির করে হেদায়েতের আলোকজ্জ্বল প্রান্তরে এনে যখন তিনি সাঃ তাঁদেরকে দাঁড় করিয়ে দিলেন তখন তাঁদের পূর্বের জীবন ও নতুন জীবনের মধ্যে রাতের অন্ধকার ও দিনের আলোর মতই পার্থক্য সূচিত হয়ে গেল। তাঁদের অন্তর্দৃষ্টির সামনে প্রতিভাত হয়ে উঠল স্রষ্টার অনন্ত মহিমা ও সৃষ্টি দর্শন, সীমাহীন বিশ্বের অন্তহীন বিস্তার ও বৈচিত্র, মানবজীবনের অনন্ত সম্ভাবনা পথ ও পাথেয় এবং পরলৌকিক জীবনের সফলতা-সাফল্য সম্পর্কিত মহাসত্যের উপলব্ধি।
উপর্যুক্ত বিষয়াদির আলোকে প্রত্যেক সাহাবীর মধ্যে এমন একটি সমন্বিত চেতনার সৃষ্টি হল যার মাধ্যমে বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণের অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, প্রবনতার মোড় পরিবর্তন, আত্মশক্তির উৎকর্ষ সাধন, নিবেদিত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভকে জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে তাঁরা এমন এক জীবন গঠনে ব্রতী হয়ে গেলেন কোথাও তার কোন তুলনা মিলে না।
[2] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫৪৩ পৃঃ।
[3] সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৫১০ পৃঃ।
[4] ফিক্বহুস সীরাহ ৮৪ পৃঃ।