আবূ ত্বালীবের মৃত্যুর দু’মাস পর (মতান্তরে মাত্র তিনদিন পর) উম্মুল মো'মেনীন খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁর মৃত্যু নবুওয়ত দশমবর্ষের রমাযান মাসে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। রাসূলুল্লাহ তখন অতিবাহিত করেছিলেন তাঁর জীবনের ৫০তম বছর।[1]
রসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবনে খাদীজাহ (রাঃ) ছিলেন আল্লাহ তা‘আলার এক বিশেষ নেয়ামত স্বরূপ। দীর্ঘ পঁচিশ বছর যাবৎ আল্লাহর নাবী (ﷺ)-কে সাহচর্য দিয়ে, সেবা-যত্ন দিয়ে, বিপদাপদে সাহস ও শক্তি দিয়ে, অভাব অনটনে অর্থ সম্পদ দিয়ে, ধ্যান ও জ্ঞানের প্রয়োজনে প্রেরণা ও পরামর্শ দিয়ে ইসলাম বীজের অংকুরোদগম এবং শিশু ইসলামের লালন-পালনের ক্ষেত্রে তিনি যে অসামান্য অবদান রেখেছেন ইসলামের ইতিহাসে তার কোন তুলনা মিলেনা। খাদীজাহ (রাঃ) সম্পর্কে বলতে গিয়ে নাবী কারীম (ﷺ) বলেছেন,
(آمَنَتْ بِىْ حِيْنَ كَفَرَ بِىْ النَّاسُ، وَصَدَقَتْنِىْ حِيْنَ كَذَبَنِيْ النَّاسُ، وَأَشْرَكَتْنِىْ فِيْ مَالِهَا حِيْنَ حَرَّمَنِىْ النَّاسُ، وَرَزَقَنِىْ اللهُ وَلَدَهَا وَحَرَّمَ وَلَدَ غَيْرِهَا)
যে সময় লোকেরা আমার সঙ্গে কুফরী করল সেই সময়ে তিনি আমার প্রতি নিটোল বিশ্বাস স্থাপন করলেন, যে সময় লোকেরা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল সে সময় তিনি আমাকে দান করলেন, আর লোকেরা যখন আমাকে বঞ্চিত করল, তখন তিনি আমাকে তাঁর সম্পদে অংশীদার করলেন। আল্লাহ আমাকে তাঁর গর্ভে সন্তানাদি প্রদান করলেন, অন্য কোন স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দেন নাই।[2]
সহীহুল বুখারীতে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জিবরাঈল (আঃ) নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট আগমন করে বললেন যে, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ইনি খাদীজাহ (রাঃ) আগমন করছেন। তাঁর নিকট একটি পাত্র আছে। যার মধ্যে তরকারী, খাদ্যবস্তু অথবা পানীয় বস্তু আছে। যখন সে আপনার নিকট এসে পৌঁছবে তখন আপনি তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সালাম বলবেন এবং জান্নাতে মতির তৈরি একটি মহলের সুসংবাদ প্রদান করবেন। যার মধ্যে কোন হট্টগোল বা হৈচৈ হবে না, কোন প্রকার ক্লান্তি ও শ্রান্তি আসবে না।[3]
[2] মুসনাদে আহমাদ ৬ষ্ঠ ১১৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
[3] সহীহুল বুখারী খাদীজার সাথে নাবী (সাঃ)-এর বিবাহ ও তাঁর ফযীলত অধ্যায় ১ম খন্ড ৫৩৯ পৃঃ।