আর-রাহীকুল মাখতূম শোকের বছর (عَــامُ الْحُـــزْنِ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) ১ টি
আবূ ত্বালীবের মৃত্যু (وَفَاةُ أَبِيْ طَالِبٍ):

বার্ধক্য, দুশ্চিন্তা, অনিয়ম ইত্যাদি নানাবিধ কারণে আবূ ত্বালীবের অসুস্থতা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাঁর মৃত্যু গিরি সংকটে অন্তরীণাবস্থা শেষ হওয়ার ৬ মাস পর নবুওয়ত ১০ম বর্ষের রজব মাসে।[1]

এ ব্যাপারে অন্য একটি মত হচ্ছে তিনি খাদীজাহ (রাঃ)-এর মৃত্যুর মাত্র তিন দিন পূর্বে রমাযান মাসে মৃত্যু বরণ করেন।

সহীর বুখারীতে মুসাইইব (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আবূ ত্বালীবের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে নাবী কারীম (ﷺ) তাঁর নিকটে আগমন করেন। সেখানে আবূ জাহলও উপস্থিত ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

‏(‏أَيْ عَمِّ، قُلْ‏:‏ لَا إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ ، كَلِمَةً أُحَاجُ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللهِ‏)‏

‘চাচাজান! আপনি শুধু একবার লা ইলাহা ইল­াল­াহ কালেমাটি পাঠ করুন, যাতে আমি বিচার দিবসে প্রমাণ হিসেবে তা আল্লাহর সমীপে পেশ করতে পারি।’’

আবূ জাহল এবং আব্দুল্লাহ বিন উমাইয়া বলল, আবূ ত্বালিব আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে কি তাহলে শেষ পর্যন্ত বিমুখ হয়েই যাবেন? তারপর এরা উভয়েই অবিরাম তাঁর সঙ্গে কথা বলতে থাকে। সব শেষে আবূ ত্বালিব যে কথাটি বলেছিলেন তা হচ্ছে, ‘আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর।’ নাবী কারীম (ﷺ) বললেন,

‏(‏لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ مَا لَمْ أُنْهَ عَنْـهُ‏)‏

‘‘আমি যতক্ষণ বাধা প্রাপ্ত না হব ততক্ষণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব।’ এ প্রেক্ষিতে এ আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়,

‏‏‏(‏مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَن يَسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا أُوْلِي قُرْبٰى مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيْمِ‏)‏ ‏[‏التوبة‏:‏113‏]‏

‘‘নাবী ও মু’মিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।’ (আত্-তাওবাহ ৯ : ১১৩)

আরো অবতীর্ণ হয়:

(‏إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ‏)‏ ‏[‏القصص‏:‏ 56‏]

‘‘তুমি যাকে ভালবাস তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না।’ (আল-ক্বাসাস ২৮ : ৫৬)

এখানে এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, আবূ ত্বালিব রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কী পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছিলেন। মক্কার অনাচারী মুশরিকগণের আক্রমণ থেকে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে প্রকৃতই তিনি ছিলেন দৃর্গ স্বরূপ। কিন্তু আল্লাহর নাবী (ﷺ) এবং ইসলামের জন্য এত করেও যেহেতু তিনি বংশপম্পরা সূত্রে প্রাপ্ত বহুত্ববাদের প্রভাব কাটিয়ে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারলেন না, সেহেতু দোরগোড়ায় আগত কামিয়াবি থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেলেন। যেমন সহীহুল বুখারী শরীফে আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তোমার চাচার কি উপকারে আসবে? ‘কারণ নাবী কারীম (ﷺ)-এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিধানের ব্যাপারে তাঁর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ বললেন,

‏(‏هُوَ فِيْ ضَحْضَاحٍ مِن نَّارٍ، وَلَوْلَا أَنَا لَكَانَ فِيْ الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنْ النَّارِ‏)‏

‘‘তিনি এখন জাহান্নামের অগভীর স্থানে অবস্থান করেছেন। যদি আমি তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত না হতাম তা হলে তিনি জাহান্নামের অতল ডুবে যেতেন।[2]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, এক দফা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট তাঁর চাচা আবূ ত্বালীবের আলোচনা উপস্থিত হয়। আলোচনা সূত্রে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশ তাঁর উপকারে আসবে এবং তাঁকে জাহান্নামের এক অগভীর স্থানে রাখা হবে যা শুধু তাঁর দু’পায়ের গিঁট পৌঁছবে।[3]

[1] জীবন চরিত বর্ণনাকারীদের মধ্যে কোন মাসে আবূ তালিবেরর মৃত্যু মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে চরম মতভেদ আছে। আমি রজব মাসকে এ জন্য অগ্রাধিকার দিলাম যে, অধিকাংশ ঐতিহাসিক একমত যে, তাঁর মৃত্যু আবূ তালিব গিরি গুহা হতে মুক্তি লাভের ছয় মাস পরে হয়েছে। অবরোধ আরম্ভ হয়েছিল ৭ম নাবাবী সনের মুহরম মাসের প্রথম তারীখে এ হিসেবে মৃত্যু ১০ম হিজরীর রজবে হয়।

[2] সহীহুল বুখারী আবূ তালিবের ঘটনা অধ্যায় ১ম খন্ড ৫৪৮ পৃঃ।

[3] সহীহুল বুখারী আবূ তালিবের ঘটনা অধ্যায় ১ম খন্ড ৫৪৮।