প্রথম পন্থা : উপহাস, ঠাট্টা-তামাশা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, মিথ্যাপ্রতিপন্ন, অকারণ হাসাহাসি (السُّخْرِيَّةُ وَالتَّحْقِيْرُ وَالْاِسْتِهْزَاءُ وَالتَّكْذِيْبُ وَالتَّضْحِيْكُ):

বিভিন্ন অবমাননাকর উক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নাবী কারীম (ﷺ)-কে তাঁরা জর্জরিত এবং অতীষ্ঠ করে তুলতে চাইলেন। এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমগণকে সন্দেহপরায়ণ, বিপন্ন ও ব্যতিব্যস্ত করে তাঁদের উদ্যম ও কাজের স্পৃহাকে নষ্ট করে দেয়া। এ উদ্দেশ্যে মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে অশালীন অপবাদ এবং গালিগালাজ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। তাঁরা কখনো তাঁকে পাগল বলেও সম্বোধন করতেন। যেমনটি ইরশাদ হয়েছেঃ

‏(‏وَقَالُوْا يَا أَيُّهَا الَّذِيْ نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُوْنٌ‏)‏ ‏[‏الحجر‏:‏6‏]

‘‘তারা বলে, ‘ওহে ঐ ব্যক্তি যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো অবশ্যই পাগল।’ (আল-হিজর ১৫ : ৬)

কখনো কখনো নাবী (ﷺ)-কে যাদুকর বলত এবং মিথ্যার অপবাদও দিত। যেমনটি ইরশাদ হয়েছেঃ

‏‏(‏وَعَجِبُوْا أَن جَاءهُم مُّنذِرٌ مِّنْهُمْ وَقَالَ الْكَافِرُوْنَ هٰذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ‏)‏ ‏[‏ص‏:‏4]

‘‘আর তারা (এ ব্যাপারে) বিস্ময়বোধ করল যে, তাদের কাছে তাদেরই মধ্য হতে একজন সতর্ককারী এসেছে। কাফিরগণ বলল- ’এটা একটা যাদুকর, মিথ্যুক।’ (স্ব-দ ৩৮ : ৪)

এ কাফিরগণ নাবী (ﷺ)-এর অগ্রভাগে ও পিছনে ক্রোধান্বিত এবং প্রতি হিংসাপরায়ণ দৃষ্টিভঙ্গী ও মন-মানসিকতা নিয়ে ঘোরাফিরা করত। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ

‏(‏وَإِن يَكَادُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَيُزْلِقُوْنَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوْا الذِّكْرَ وَيَقُوْلُوْنَ إِنَّهُ لَمَجْنُوْنٌ‏)‏ ‏[‏القلم‏:‏51]

‘‘কাফিররা যখন কুরআন শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ফেলবে। আর তারা বলে, ‘সে তো অবশ্যই পাগল।’ (আল-ক্বালাম ৬৮ : ৫১)

অধিকন্তু, নাবী কারীম (ﷺ) যখন কোথাও গমন করতেন এবং তাঁর দুর্বল ও মজলুম সাহাবীগণ (রাঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত থাকতেন তখন এদের লক্ষ্য করে মুশরিকগণ উপহাস করে বলতঃ

‏(‏مَنَّ اللهُ عَلَيْهِم مِّن بَيْنِنَا ‏أَلَيْسَ اللهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِيْنَ‏)‏ ‏[‏الأنعام‏:‏53]‏

‘‘এরা কি সেই লোক আমাদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, আল্লাহ কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাহদের সম্পর্কে অধিক অবগত নন?’ (আল-আন‘আম ৬ : ৫৩)

সাধারণতঃ মুশরিকগণের অবস্থা তাই ছিল যার চিত্র নীচের আয়াত সমূহে তুলে ধরা হয়েছেঃ

‏(‏إِنَّ الَّذِيْنَ أَجْرَمُوْا كَانُوْا مِنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا يَضْحَكُوْنَ وَإِذَا مَرُّوْا بِهِمْ يَتَغَامَزُوْنَ وَإِذَا انقَلَبُوْا إِلىٰ أَهْلِهِمُ انقَلَبُوْا فَكِهِيْنَ وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوْا إِنَّ هَؤُلَاء لَضَالُّوْنَ وَمَا أُرْسِلُوْا عَلَيْهِمْ حَافِظِيْنَ‏)‏ ‏[‏المطففين‏:‏ 29‏:‏ 33]

‘‘পাপাচারী লোকেরা (দুনিয়ায়) মু’মিনদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। ৩০. আর তারা যখন তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত তখন পরস্পরে চোখ টিপে ইশারা করত। ৩১. আর তারা যখন তাদের আপন জনদের কাছে ফিরে আসত, তখন (মু’মিনদেরকে ঠাট্টা ক’রে আসার কারণে) ফিরত উৎফুল্ল হয়ে। ৩২. আর তারা যখন মু’মিনদেরকে দেখত তখন বলত, ‘এরা তো এক্কেবারে গুমরাহ্।’ ৩৩. তাদেরকে তো মু’মিনদের হিফাযাতকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি।’ (আল-মুত্বাফফিফীন ৮৩ : ২৯-৩৩)

মুশরিকদের উপহাস, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, হাসাহাসি ও বিভিন্নভাবে আঘাতের মাত্রা এর বাড়িয়ে দিল যে তা নাবী (ﷺ)-কে মর্মাহত করে তুলল। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ

“আমি জানি, তারা যে সব কথা-বার্তা বলে তাতে তোমার মন সংকুচিত হয়। (আল-হিজর ১৫ : ৯৭)

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরকে দৃঢ় করলেন এবং এমন বিষয়ের নির্দেশ প্রদান করলেন, যাতে করে তার অন্তর থেকে ব্যথা-বেদনা দূরীভূত হয়। এ মর্মে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,

فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِنَ السَّاجِدِينَ وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ

“কাজেই প্রশংসা সহকারে তুমি তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা কর, আর সাজদাহকারীদের দলভুক্ত হও। আর তোমার রবের ইবাদত করতে থাক সুনিশ্চিত ক্ষণের (অর্থাৎ মৃত্যুর) আগমন পর্যন্ত। (আল-হিজর ১৫ : ৯৮-৯৯)

অধিকন্তু আল্লাহ তা’আলা ইতোপূর্বেই তাঁর প্রিয় হাবীবকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ সব ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ বলেন,

إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ

“(সেই) ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য আমিই যথেষ্ট। যারা আল্লাহর সাথে অন্যকেও ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে, (কাজেই শিরকের পরিণতি কী শীঘ্রই তার জানতে পারবে।” (আল-হিজর ১৫ : ৯৫-৯৬)

আল্লাহ তা’আলা আরো জানিয়ে দিলেন যে, এ অবস্থার শীঘ্রই উন্নতি হবে এবং এ ঠাট্টা-বিদ্রুপ তাদের ক্ষতির কারণ হবে।

وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِنْ قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُوا مِنْهُمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ

“তোমার পূর্বেও রাসূলদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে, অতঃপর যা নিয়ে তারা ঠাট্ট-বিদ্রুপ করত তাই তাদেরকে পরিবেষ্টন করে ফেলল।” (আল-আনআম ৬ : ১০)