وَالْمُدْرَجَاتُ في الْحَدِيْثِ مَا أَتَتْ | مِنْ بَعْضِ أَلْفَاظِ الرُّواةِ اتَّصَلَتْ
“হাদিসে বিদ্যমান সেসব শব্দ মুদরাজ, যা কতক রাবির শব্দ থেকে [তার সাথে] সংযুক্ত হয়েছে”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের ষড়বিংশ প্রকার মুদরাজ। এ প্রকারের সম্পর্ক সনদ ও মতন উভয়ের সাথে।
مدْرَج কর্মবাচক বিশেষ্য, অর্থ প্রবেশকৃত বস্তু। এক বস্তুকে অপর বস্তুর মাঝে প্রবেশ করানো হলে বলা হয়: أدرجت الشيء في الشيء ‘আমি এক বস্তুকে অপর বস্তুর মাঝে প্রবেশ করিয়েছি’।[1] ইদরাজ ক্রিয়া বিশেষ্য, অর্থ প্রবেশ করানো।
‘মুদরাজে’র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “হাদিসের সনদ বা মতনে বিনা পার্থক্যে রাবির পক্ষ থেকে বৃদ্ধিকে মুদরাজ বলা হয়”। লেখক এক প্রকার মুদরাজ উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ মতনের মুদরাজ। এ জাতীয় মুদরাজ সবচেয়ে বেশী হয়। হাদিস দ্বারা যদি তিনি সনদ ও মতন উভয় উদ্দেশ্য করেন, তাহলে মুদরাজের উভয় প্রকার তিনি উল্লেখ করেছেন।
জ্ঞাতব্য: হাদিস দ্বারা মারফূ‘ ও মাওকুফ উভয় উদ্দেশ্য। ইচ্ছায় বৃদ্ধি করা হোক বা অনিচ্ছায় বৃদ্ধি করা হোক বর্ধিত অংশকে মুদরাজ বলা হয়, তবে বর্ধিত অংশ হাদিস থেকে পৃথক হলে মুদরাজ নয়। রাবিগণ ব্যাখ্যা ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ইদরাজ করেন। ইদরাজ কখনো হয় হাদিসের শুরুতে, কখনো মাঝে ও কখনো শেষে হয়।
হাদিসের শুরুতে ইদরাজ:
খতিবে বাগদাদি রাহিমাহুল্লাহ্ ‘আল-ফাসলু লিল ওয়াসলি আল-মুদরাজু ফিন নাকলি’ গ্রন্থে মুদরাজের উদাহরণ দিয়েছেন:
أنا الْحَسَنُ بْنُ أَبِي بَكْرٍ، أنا دَعْلَجُ بْنُ أَحْمَدَ، نا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْدِيُّ، نا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ هُوَ الزَّعْفَرَانِيُّ، نا أَبُو قَطَنٍ، نا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ "
قَرَأْتُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ الْبَرْقَانِيِّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ عُمَرَ الْحَافِظِ، أنا أَبَا بَكْرٍ النَّيْسَابُورِيَّ حَدَّثَهُمْ، قَالَ: نا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ، نا شَبَابَةُ، نا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ وَيْلٌ لِلأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ "
এখানে দু’টি সনদে একটি হাদিস রয়েছে। শু‘বার দু’জন ছাত্র: আবু কাতান ও শাবাবাহ থেকে সনদ ভাগ হয়েছে। শু‘বার শায়খ মুহাম্মদ ইব্ন যিয়াদ, তার শায়খ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা অজু পূর্ণ কর, টাখনুর জন্য জাহান্নামের আগুন”।[2]
এ সনদে হাদিসের পুরো অংশ মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, অথচ পুরো অংশ মারফূ‘ নয়, প্রথমাংশ মাওকুফ ও শেষাংশ মারফূ‘। এতে ইদরাজ হয়েছে হাদিসের শুরুতে। মারফূ‘ অংশ«ويل للأعقاب من النار» ‘টাখনুর জন্য জাহান্নামের আগুন’। মাওকুফ অংশ«أسبغوا الوضوء» ‘তোমরা অজু পূর্ণ কর’। এ অংশ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী। মারফূ‘ ও মাওকুফ অংশ পৃথক করা হয়নি বিধায় মুদরাজ। এ জাতীয় ইদরাজ খুব কম, অনেক মুহাদ্দিস বলেছেন: শুরুতে ইদরাজের উদাহরণ শুধু এ হাদিসই।
খতিবে বাগদাদি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এখানে ভুল হয়েছে ‘শু‘বা’র ছাত্র আবু কাতান ইব্ন হায়সাম ও শাবাবাহ ইব্ন ফাজারি থেকে। এ ছাড়া শু‘বার অন্যান্য ছাত্র, যেমন আবু দাউদ তায়ালিসি, ওহাব ইব্ন জারির ইব্ন হাযেম, আদম ইব্ন আবি আয়াস, আসেম ইব্ন ‘আলি, আলি ইব্ন জা‘দ, মুহাম্মদ ইব্ন জা‘ফর গুনদার, হুশাইম ইব্ন বাশির, ইয়াযিদ ইব্ন যুরাই‘, নাদর ইব্ন শুমাইল, ওকি‘ ইব্ন জাররাহ, ঈসা ইব্ন ইউনুস, মু‘আয ইব্ন মু‘আয সবাই শু‘বা থেকে মারফূ‘ ও মাওকুফ অংশ পৃথক করে বর্ণনা করেছেন”।[3] যেমন শুবার ছাত্র আদম থেকে ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:
حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زِيَادٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، وَكَانَ يَمُرُّ بِنَا وَالنَّاسُ يَتَوَضَّئُونَ مِنَ الْمِطْهَرَةِ، قَالَ: أَسْبِغُوا الْوُضُوءَ، فَإِنَّ أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنَ النَّارِ ".
... মুহাম্মদ ইব্ন যিয়াদ বলেন: আমি আবু হুরায়রাকে শুনেছি, তখন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, মানুষেরা লোটা থেকে অজু করতে ছিল, তিনি বললেন: তোমরা অজু পূর্ণ কর, কারণ আবুল কাসেম বলেছেন: “টাখনুর জন্য জাহান্নামের আগুনের ধ্বংস”।[4] এতে মাওকুফ ও মারফূ‘ অংশ পৃথক করা হয়েছে, এ থেকে জানা যায়, পূর্বের হাদিসে ইদরাজ হয়েছে, কারণ এ হাদিস অধিক বিশুদ্ধ।
হাদিসের মাঝে ইদরাজ:
قال الإمام البخاري –رحمه الله- [في صحيحه برقم:4] حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، أَنَّهَا، قَالَتْ: " أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لَا يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الْخَلَاءُ وَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ، فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ وَهُوَ التَّعَبُّدُ اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ الْعَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا حَتَّى جَاءَهُ الْحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ، فَجَاءَهُ الْمَلَكُ.
এ হাদিস পাঠকারী মনে করবে যে, وَهُوَ التَّعَبُّدُ اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ الْعَدَدِ অংশ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন, অথচ তিনি বলেননি, বরং ইব্নে শিহাব বলেছেন। তিনি فَيَتَحَنَّثُ শব্দের ব্যাখ্যার জন্য ইদরাজ করেছেন, যার প্রয়োজন ছিল, কারণ حِنثِ অর্থ পাপ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَكَانُواْ يُصِرُّونَ عَلَى ٱلۡحِنثِ ٱلۡعَظِيمِ ٤٦ ﴾ [الواقعة: ٤٦]
“আর তারা জঘন্য পাপে লেগে থাকত”।[5] তিনি ব্যাখ্যা না দিলে কেউ ভুল বুঝত: ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পাপ করতেন’, অথচ তিনি ইবাদত করতেন। ইবাদত حنث দূর করে, অর্থাৎ পাপ দূর করে, তাই ‘হিন্স’ বলে তার বিপরীত অর্থ নেওয়া হয়েছে। এটাও অলঙ্কার শাস্ত্রের একটি নীতি।
দ্বিতীয় উদাহরণ:
قال الإمام الدار قطني –رحمه الله- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدٍ الْوَكِيلُ، نا عَلِيُّ بْنُ مُسْلِمٍ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ بَكْرٍ، نا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ بُسْرَةَ بِنْتِ صَفْوَانَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ أَوْ أُنْثَيَيْهِ أَوْ رُفْغَيْهِ فَلْيَتَوَضَّأْ ".
এ হাদিস পাঠকারী পুরো অংশ মারফূ‘ মনে করবে, অথচ পুরো অংশ মারফূ‘ নয়, মারফূ‘ শুধু " مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ " অবশিষ্টাংশ উরওয়া থেকে বর্ধিত। ইমাম দারাকুতনি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন:أَوْ أُنْثَيَيْهِ أَوْ رُفْغَيْهِ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী নয়, বরং উরওয়ার বাণী।[6] প্রকৃত হাদিস নিম্নরূপ:
قال الإمام أبوداود –رحمه الله- حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، أَنَّهُ سَمِعَ عُرْوَةَ يَقُولُ: دَخَلْتُ عَلَى مَرْوَانَ بْنِ الْحَكَمِ فَذَكَرْنَا مَا يَكُونُ مِنْهُ الْوُضُوءُ، فَقَالَ مَرْوَانُ: وَمِنْ مَسِّ الذَّكَرِ؟، فَقَالَ عُرْوَةُ: مَا عَلِمْتُ ذَلِكَ. فَقَالَ مَرْوَانُ: أَخْبَرَتْنِي بُسْرَةُ بِنْتُ صَفْوَانَ، أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مَنْ مَسَّ ذَكَرَهُ فَلْيَتَوَضَّأْ "
এখানে দেখছি: উরওয়া বলছেন, আমি মারওয়ান ইব্নুল হাকামের নিকট গেলাম, তার নিকট অজুর কারণসমূহ নিয়ে আলোচনা করলাম। তখন মারওয়ান বললেন: পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে? উরওয়া বললেন: আমি তা জানি না। মারওয়ান বললেন: আমাকে বুসরা বিনতে সাফওয়ান বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: “যে তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করল, সে যেন অজু করে”।[7] এ থেকে প্রমাণ হল যে, বর্ধিত অংশ উরওয়ার ইজতিহাদ।
হাদিসের শেষে ইদরাজ:
قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ خَالِدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِلَالٍ، عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ، قَالَ: رَقِيتُ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ عَلَى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ فَتَوَضَّأَ، فَقَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ "
হাদিস পাঠকারী মনে করবে পুরো অংশ মারফূ‘, অথচ পুরোটা মারফূ‘ নয়, "فمن استطاع منكم أن يطيل غرته فليفعل" আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাণী। হাফেয ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আবু হুরায়রা ব্যতীত আরো দশজন সাহাবি এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, কেউ এ অংশ বর্ণনা করেনি। অধিকন্তু নু‘আইম ব্যতীত আবু হুরায়রার কোনো ছাত্রও তা বলেনি। আল্লাহ ভালো জানেন”।[8]
মুদরাজ চিনার উপায়:
১. কতক সময় হাদিসের বাক্য থেকে ইদরাজ বুঝা যায়, যেমন:
قال الإمام البخاري –رحمه الله- [في صحيحه برقم:2548] حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّي، لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأَنَا مَمْلُوكٌ ".
এ হাদিসের শেষাংশে وَأَنَا مَمْلُوكٌ শব্দ প্রমাণ করে এ অংশ মারফূ‘ নয়, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে দাসত্বের তামান্না করা অসম্ভব। দ্বিতীয়ত তার মা ছিল না, যার প্রতি তিনি দয়া করবেন। তাই নিশ্চিত এ অংশ আবু হুরায়রার বাণী।[9] এখানে মূল হাদিস শুধু لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ “নেককার গোলামের জন্য দ্বিগুন সাওয়াব”।
২- কখনো সাহাবি বা কোনো রাবি ইদরাজ বলে দেন, যেমন:
قال الإمام البخاري -رحمه الله- [في صحيحه برقم:4497] حَدَّثَنَا عَبْدَانُ، عَنْ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ الْأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَلِمَةً، وَقُلْتُ أُخْرَى، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ "، وَقُلْتُ أَنَا: مَنْ مَاتَ وَهْوَ لَا يَدْعُو لِلَّهِ نِدًّا دَخَلَ الْجَنَّةَ
সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ এতে ইদরাজ স্পষ্ট করেছেন।
৩. কখনো অপর সনদ থেকে ইদরাজ জানা যায়, যেমন:
قال الإمام البخاري- رحمه الله- [في صحيحه برقم:2548] حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الصَّالِحِ أَجْرَانِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّي، لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأَنَا مَمْلُوكٌ ".
এতে মারফূ‘ ও মাওকুফ স্পষ্ট নয়, তবে এ হাদিসের অপর সনদ থেকে মারফূ‘ ও মাওকুফ স্পষ্ট হয়, যেমন:
قال الإمام مسلم –رحمه الله- [في صحيحه برقم:3152] حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، قَالَا: أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنْ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لِلْعَبْدِ الْمَمْلُوكِ الْمُصْلِحِ أَجْرَانِ "، وَالَّذِي نَفْسُ أَبِي هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ لَوْلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْحَجُّ وَبِرُّ أُمِّي، لَأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأَنَا مَمْلُوكٌ، قَالَ: وَبَلَغَنَا أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ لَمْ يَكُنْ يَحُجُّ حَتَّى مَاتَتْ أُمُّهُ لِصُحْبَتِهَا
... নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নেককার গোলামের জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আবু হুরায়রার নফস: যদি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, হজ ও আমার মার প্রতি সদাচরণ না থাকত, তাহলে আমি অবশ্যই পছন্দ করতাম যে, আমি গোলাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করি”। আমাদের নিকট পৌঁছেছে যে, আবু হুরায়রা তার মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হজ করতে পারেননি, তাকে সঙ্গ দেওয়ার কারণে”।[10]
৪. কোনো হাফেযে হাদিস থেকেও ইদরাজ জানা যায়।
সনদে ইদরাজ:
এ প্রকার বুঝার জন্য মনে রাখতে হবে, সনদে ইদরাজ অর্থ সনদ বর্ধিত করা নয়, বরং এক হাদিস বা তার অংশ বিশেষ অপর হাদিসের সাথে জুড়ে দেওয়া। যখন এক হাদিস বা তার অংশ বিশেষ অপর হাদিসের সাথে জুড়ে দেওয়া হল, তখন এক হাদিসের সনদও অপর হাদিসের সনদে অনুপ্রবেশ ঘটানো হল, এটাই সনদে ইদরাজ, কারণ সনদ ব্যতীত হাদিস হয় না। তাই দুই হাদিস একত্র করা হলে, দু’টি সনদও একত্র করা হয়।
ইদরাজের হুকুম: শব্দের ব্যাখ্যার জন্য ইদরাজ করা বৈধ, তবে হাদিসের অর্থ পাল্টে গেলে ইদরাজ করা হারাম। ইদরাজকে দলিল হিসেবে পেশ করা যায় না, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী নয়।
[2] “আল-ফাসলু লিল ওয়াসলি আল-মুদরাজু ফিন নাকলি”: (৫৮) ও (৫৯)الفصل للوصل المدرج في النقل
[3] “আল-ফাসলু লিল ওয়াসলি আল-মুদরাজু ফিন নাকলি”: (৫৮)
[4] বুখারি: (১৬৫)
[5] সূরা ওয়াকিয়াহ: (৪৬)
[6] সুনানে দারাকুতনি: (৫২৯)
[7] আবু দাউদ: (১৮১)
[8] ফাতহুল বারি, বুখারির হাদিস নং: (১৩৬)
[9] আন-নুজহা: (১২৫), ফাতহুল বারী: (৫/২০৮-২০৯)
[10] মুসলিম: (১১/১৩৫), হাদিস নং: (৩১৫২)