وَالْمُعْضَلُ السَّاقِطُ مِنْهُ اثْنَانِ | وَمَا أَتَى مُدَلَّسًا نَوْعَان

الأَوَّلُ الإسْقَاطُ لِلشَّيْخِ وَأَنْ | يَنْقُلَ عَمَّنْ فَوْقَهُ بِعَنْ وَأَنْ

وَالثَّانِ لا يُسْقِطُهُ لَكِنْ يَصِفْ | أَوْصَافَهُ بِمَا بِهِ لا يَنْعَرِفْ

“আর যার থেকে দু’জন রাবি পতিত তাই ‘মু‘দ্বাল’। আর মুদাল্লাস হিসেবে যা এসেছে তা দু’প্রকার। প্রথম প্রকার: নিজ শায়খকে ফেলে দেওয়া এবং শায়খের শায়খ থেকে عَنْ বা أنْ শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা। দ্বিতীয় প্রকার: নিজ শায়খকে ফেলে দিবে না, কিন্তু তার এমন বিশেষণ উল্লেখ করা যার দ্বারা সে পরিচিত হবে না”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের ঊনবিংশ ও বিংশ প্রকার মু‘দ্বাল ও মুদাল্লাস। হাদিসের এ দু’প্রকারের সম্পর্ক সনদের সাথে।

মু‘দ্বাল হাদিস


‏معْضَلُ‏‏ এর আভিধানিক অর্থ মুশকিল ও কঠিন। কঠিন বিষয়কে আরবরা বলে: أَمْرٌ عَضِيلٌ ‘কঠিন বিষয়’। একাধিক রাবি অনুল্লেখ থাকার কারণে মু‘দ্বাল হাদিসও কঠিন হয়। মানুষ তার ভালমন্দ জানে না, তাই তার থেকে উপকৃত হতে পারে না।
‘মু‘দ্বালে’র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “যে হাদিসের সনদ থেকে দু’জন রাবি পতিত হয় তাই ‘মু‘দ্বাল’। লেখক দু’জন রাবির বাদ পড়াকে ক্রমান্বয়ে শর্তারোপ করেননি, তাই এ সংজ্ঞা মুনকাতি‘ ও মু‘দ্বাল উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, কারণ সনদ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দু’জন রাবির ইনকিতাকে মুনকাতি‘ বলা হয়, মু‘দ্বাল বলা হয় না। অতএব এ সংজ্ঞা যথাযথ নয়।

উদাহরণত একটি সনদে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ চার জন রাবি রয়েছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাবি বিলুপ্ত হলে হাদিস মু‘দ্বাল, কারণ ক্রমান্বয়ে দু’জন রাবি বাদ পড়েছেন। অনুরূপ ক্রমান্বয়ে তিন বা তার অধিক রাবি বিলুপ্ত হলেও মু‘দ্বাল। আর দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্তর থেকে রাবি বিলুপ্ত হলে মুনকাতি‘, কারণ ক্রমান্বয়ে দু’জন রাবি বাদ পড়েনি। সনদের শুরু ও শেষ রাবি বাদ পড়লে হাদিস যথাক্রমে মু‘আল্লাক ও মুরসাল। প্রথম রাবি নেই হিসেবে মু‘আল্লাক, শেষ রাবি নেই হিসেবে মুরসাল। প্রথম থেকে দু’জন রাবি বাদ পড়লে মু‘দ্বাল ও মু‘আল্লাক, আর শেষ থেকে দু’জন রাবি বাদ পড়লে মু‘দ্বাল ও মুরসাল। এ সকল প্রকারই দ্বা‘ঈফ, তবে মু‘দ্বাল অধিক দ্বা‘ঈফ। মু‘দ্বালের উদাহরণ :

حَدَّثَنِي مَالِك أَنَّهُ بَلَغَهُ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِلْمَمْلُوكِ طَعَامُهُ وَكِسْوَتُهُ بِالْمَعْرُوفِ، وَلَا يُكَلَّفُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا يُطِيقُ»

মালিক রাহিমাহুল্লাহ্ তার মুয়াত্তায় হাদিসটি মু‘দ্বাল বর্ণনা করেছেন, তবে অপর জায়গায় তিনি মুত্তাসিল বর্ণনা করেছেন, যেমন:

عن محمد بن عجلان عن أبيه عن أبي هريرة ... ...

এ সনদে মালিক ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মধ্যবর্তী মুহাম্মদ ও তার পিতা ‘আজলান রয়েছেন। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, উক্ত হাদিস থেকে দু’জন রাবি বাদ পড়েছেন।

মু‘দ্বালের হুকুম:
মু‘দ্বাল শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।

[1] মালিকের নিকট পৌঁছেছে যে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দাস-দাসীগণ রেওয়াজ অনুযায়ী খাদ্য ও পোশাকের হকদার। মুয়াত্তা ইমাম মালিক: (১৮৩৫)

‏‏مدلس‏‏ শব্দটি تدليس থেকে গৃহীত, যার ধাতু دُلسة অর্থ অন্ধকার। ‘তাদলিস’ শব্দটি মূলত ব্যবহার হয় কেনাকাটায়। ক্রেতাদের বিভ্রাটে ফেলার জন্য পশু মোটা-তাজা করাকে তাদলিস বলা হয়। অনুরূপ গাভীর স্তনে দুধ জমা করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করাও তাদলিস, কারণ তার দ্বারা ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়া হয়।

তাদলিস দু’প্রকার:

১. তাদলিসুল ইসনাদ ও ২. তাদলিসুস শুয়ুখ। কেউ তাদলিসকে তিনভাগে ভাগ করেছেন, তৃতীয় প্রকার-৩. তাদলিসুত তাসওয়িয়াহ। নিম্নে সংজ্ঞাসহ প্রত্যেক প্রকার প্রদত্ত হল:
১. تدليس الإسناد ‘তাদলিসুল ইসনাদ’ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: নিজ শায়খকে বাদ দিয়ে পরবর্তী শায়খ থেকে عن বা أن শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা, যেন সনদ মুত্তাসিল বুঝা যায়, যেমন বলা: حدثنا فلان عن فلان كذا অথবা বলা: حدثنا فلان أنَّ فلانا قال كذا এখানে أنَّ তাশদীদ যুক্ত, লেখক কবিতার অন্ত্যমিলের জন্য أن সাকিন যুক্ত উল্লেখ করেছেন।
‘তাদলিসুল ইসনাদ’ প্রসঙ্গে খতিব, ইব্‌নুস সালাহ, নববি, ইব্‌ন কাসির, ইব্‌নুল মুলাক্কিন ও ইরাকি প্রমুখ বলেন: ‘শায়খ থেকে অশ্রুত হাদিস রাবির এমনভাবে বর্ণনা করা যে, শ্রোতাগণ মনে করেন তিনি এ হাদিসও শায়খ থেকে শ্রবণ করেছেন’। অথবা ‘রাবি সমকালীন কোনো মুহাদ্দিস থেকে এমনভাবে হাদিস বর্ণনা করবেন, যার সাথে তার সাক্ষাত হয়নি, যেন শ্রোতাগণ মনে করেন তিনি তার থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন’।
সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আলেমগণ মুদাল্লিসদের নির্দিষ্ট করে ফেলেছেন, তাই এ নিয়ে অধিক ঘাটাঘাটি করা ফলদায়ক নয়, তবে এখনো কতক মুদাল্লিসকে জানা সম্ভব, যাদেরকে তারা মুদাল্লিসদের কাতারে শামিল করেননি, কারণ তাদের তাদলিস খুব কম। আল্লাহ ভালো জানেন”।

২. تدليس الشيوخ ‘তাদলিসুশ শুয়ুখ’ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “রাবি নিজ শায়খকে উহ্য করবে না ঠিক, তবে তার অপরিচিত গুণ বর্ণনা করবে, যা তাকে চিহ্নিত করবে না”। অর্থাৎ মুদাল্লিস শায়খকে উল্লেখ না করে তার উপাধি, গুণাগুণ, পদবী বা উপনাম উল্লেখ করবে, যার ফলে মানুষের নিকট সে পরিচিত হবে না, অজ্ঞাতই থাকবে।
এ প্রকার সনদ পূর্বোক্ত তাদলিসুল ইসনাদ অপেক্ষা কম দোষণীয়। যদি রাবি শায়খের দুর্বলতার কারণে এরূপ করে তাহলে খিয়ানত। মুদাল্লিসের শায়খের কারণে কখনো তাদলিসুল ইসনাদ নিকৃষ্টতর, কখনো হয় তাদলিসুস শুয়ুখ, তবে স্বাভাবিক হালতে তাদলিসুল ইসনাদ নিন্দনীয়। কারণ তাদলিসুস শুয়ূখে অনুল্লেখ রাবি জানা অধিকতর সহজ, যা তাদলিসুল ইসনাদে সম্ভব নয়।

৩. تدليس التسوية তাদলিসুত তাসওয়িয়াহ লেখক উল্লেখ করেননি। এ প্রকারের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে হাফেয ইরাকি রহ. বলেন: ‘মুদাল্লিস’ একটি হাদিস বর্ণনার ইচ্ছা করে, যা সে তার সেকাহ শায়খ থেকে শ্রবণ করেছে, কিন্তু তার সেকাহ শায়খ শ্রবণ করেছে দুর্বল শায়খ থেকে, মুদাল্লিস এখানে শায়খের শায়খ তথা দুর্বল শায়খকে ফেলে অস্পষ্ট শব্দ দ্বারা বর্ণনা করে, যেন বুঝা যায় সনদের সকল রাবি সেকাহ। কখনো বয়স কমের কারণে মুদাল্লিস শায়খের শায়খকে ফেলে দেয়, যদিও সে সেকাহ হয়।
‘আলায়ি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এ প্রকার তাদলিস সাধারণত রাবির দুর্বলতার কারণে করা হয়। এ তাদলিস নিকৃষ্ট ও সবচেয়ে খারাপ, তবে অন্যান্য প্রকারের তুলনায় তার সংখ্যা কম”। সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এখানে কম দ্বারা উদ্দেশ্য তাদলিসুল ইসনাদ ও তাদলিসুস শুয়ূখ অপেক্ষা কম, কিন্তু যারা এতে লিপ্ত হয়েছে তাদের সংখ্যা কম নয়। আমার নিকট তাদের সংখ্যা (১৯) পর্যন্ত রয়েছে।

তাদলিস করার কারণ:
তাদলিস করে রাবি কখনো নিজেকে গোপন করতে চান, যেন কেউ না বলে তিনি অমুক শায়খ থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। কখনো রাজনৈতিক কারণে তাদলিস করা হয়। কখনো শাসক বা কারো থেকে রাবি নিজের উপর ক্ষতির আশঙ্কা করে তাদলিস করেন। কখনো শায়খের স্মরণ শক্তি কম, বা দীনদারী কম বা তার চেয়ে মর্যাদায় ছোট ইত্যাদি করণে রাবি তাদলিস করেন।
শায়খকে উল্লেখ না করার কারণ অনেক, তবে আদিল না হওয়ার কারণে শায়খকে বাদ দেওয়া সবচেয়ে খারাপ। এ জাতীয় তাদলিস হারাম, কারণ হতে পারে হাদিসটি বাদ পড়া রাবির মিথ্যা রচনা। অতএব মুদাল্লিস সেকাহ হলেও তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ না সে শায়খ থেকে শোনার কথা স্পষ্ট বলে।

তাদলিসের বিধান:
তাদলিস করা হারাম, কারণ তাদলিস একপ্রকার ধোঁকা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا».

“যে ধোঁকা দিল, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের দোষ গোপনকারীকে বলেছেন, তাহলে হাদিসের সনদের দোষ গোপনকারীর পরিণতি আরো জঘন্য হবে সন্দেহ নেই। তবুও অনেক তাবে‘ঈ ও পরবর্তী মনীষীগণ কিছু কারণে তাদলিস করতেন, যার পশ্চাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিথ্যা সম্পৃক্ত করার দুঃসাহস কিংবা মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ছিল না, বরং ভালো উদ্দেশ্যে ছিল। এ কারণেও আমরা তাদেরকে দায় মুক্ত বলতে পারি না। আমরা বলব: তারা মুজতাহিদ ছিলেন, তারা তাদের ইজতিহাদের সওয়াব পাবেন, কিন্তু তারা যদি প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে দিতেন, তাহলে অনেক ভালো ছিল ও সুন্দর হত সন্দেহ নেই।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে