معلق এর আভিধানিক অর্থ ঝুলন্ত। কোনো বস্তু উপর থেকে ঝুলে নিচ থেকে মাটি স্পর্শ না করলে ‘মু‘আল্লাক’ বলা হয়।

মু‘আল্লাকের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে হাফেয ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “সনদের শুরু থেকে এক বা একাধিক রাবিকে অনুল্লেখ করা হলে মু‘আল্লাক বলা হয়, সকল রাবি অনুল্লেখ থাকলেও মু‘আল্লাক”।

অতএব লেখকের দিক থেকে যদি একজন রাবিকে অনুল্লেখ করা হয়, যিনি লেখকের শায়খ, অথবা দু’জন রাবি যেমন শায়খ ও শায়খের শায়খ, অথবা তিনজন অথবা সকল রাবিকে অনুল্লেখ করে বলা হয়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়, তবুও মু‘আল্লাক। শায়খকে অনুল্লেখ করার উদাহরণ: ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন[1]:

قَالَ مَالِكٌ: أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ أَخْبَرَهُ، أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ أَخْبَرَهُ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا أَسْلَمَ الْعَبْدُ فَحَسُنَ إِسْلَامُهُ يُكَفِّرُ اللَّهُ عَنْهُ كُلَّ سَيِّئَةٍ كَانَ زَلَفَهَا، وَكَانَ بَعْدَ ذَلِكَ الْقِصَاصُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ وَالسَّيِّئَةُ بِمِثْلِهَا، إِلَّا أَنْ يَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَنْهَا»

ইমাম বুখারি এ সনদে স্বীয় শায়খকে উল্লেখ করেননি, বরং শায়খের শায়খ ইমাম মালিককে উল্লেখ করেছেন।

সনদহীন ‘মু‘আল্লাক’ যেমন ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন[2]:

بَاب مَا جَاءَ فِي غَسْلِ الْبَوْلِ، وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَاحِب الْقَبْرِ: «كَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَلَمْ يَذْكُرْ سِوَى بَوْلِ النَّاسِ».

এখানে ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ পূর্ণসনদ ত্যাগ করে শুধু হাদিস উল্লেখ করেছেন।

মু‘আল্লাকের হুকুম: মু‘আল্লাক একপ্রকার দুর্বল হাদিস।

বুখারি ও মুসলিমের মু‘আল্লাকের হুকুম: বুখারির মু‘আল্লাক দু’প্রকার:

১. ইমাম বুখারি কতক হাদিস এক স্থানে মু‘আল্লাক উল্লেখ করে অপর স্থানে মুত্তাসিল উল্লেখ করেছেন, এরূপ হাদিস সহি।

২. কতক হাদিস তিনি মু‘আল্লাক উল্লেখ করেছেন, কোথাও মুত্তাসিল করেননি। এ জাতীয় হাদিস দু’ভাগে বিভক্ত:

ক. দৃঢ়তাজ্ঞাপক কর্তবাচ্যের ক্রিয়ার মু‘আল্লাক, যা প্রমাণ করে ‘মু‘আল্লাক’টি তার নিকট সহি, কিন্তু যারা তার এ জাতীয় ‘মু‘আল্লাকে’র সনদ উল্লেখ করেছেন, তাদের থেকে জানা যায়, কতক তার শর্ত মোতাবেক সহি ও কতক তার শর্ত মোতাবেক সহি না হলেও অন্যদের শর্ত মোতাবেক সহি। কতক মু‘আল্লাক হাসান। আরও কতেক হাদীস রাবির কারণে দ্বা‘ঈফ না হলেও ইনকিতার কারণে দ্বা‘ঈফ। কারণ সেগুলো কোথাও সনদসহ বর্ণিত হয় নি।

খ. অদৃঢ়তাজ্ঞাপক কর্মবাচ্যের ক্রিয়ার মু‘আল্লাক, যার শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা স্পষ্ট নয়, তবে তাতে সহি ও গায়রে সহি উভয় আছে।

সহি মুসলিমের মু‘আল্লাক:

সহি মুসলিমে ‘মু‘আল্লাক’ হাদিসের সংখ্যা খুব কম। ইব্‌নুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহ্ "صيانة صحيح مسلم من الإخلال والغلط"গ্রন্থে হাফেয আবু আলি গাসসানি রাহিমাহুল্লাহ্ থেকে বর্ণনা করেন, সহি মুসলিমে মাত্র ১৪-টি মুনকাতি‘ রয়েছে, মুনকাতি‘ অর্থ মু‘আল্লাক। পরবর্তীতে মুসলিম নিজে সেগুলো মুত্তাসিল বর্ণনা করেছেন, একটি হাদিস ব্যতীত। অতএব মুসলিমের মুকাদ্দামাহ ব্যতীত কোথাও মু‘আল্লাক নেই।

>
[1] মালিক বলেছেন: যায়েদ ইব্‌ন আসলাম আমাকে বলেছেন, আতা ইব্‌ন ইয়াসার তাকে বলেছেন, আবু সাঈদ খুদরি বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: ‘বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে ও তার ইসলাম সুন্দর হয়, আল্লাহ তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা করে দেন, যা সে পূর্বে করেছে। তারপর তাকে প্রত্যেক নেকির পরিবর্তে দশগুণ থেকে সাত শো গুণ পর্যন্ত বদলা দেয়া হয়। আর গুণাহের বদলা তার সমপরিমাণ, তবে আল্লাহ যদি তা ক্ষমা করে দেন’। ‘তাগলিকুত তা‘লিক’: হাদিস নং:(২১) লি ইব্‌ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ।

[2] পেশাব ধৌত করা প্রসঙ্গে অধ্যায়। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক কবরবাসী সম্পর্কে বলেছেন: যে পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করত না। তবে তিনি মানুষের পেশাব ব্যতীত কিছু উল্লেখ করেননি।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে