والحَسَنُ الْمَعْرُوفُ طُرْقاً وَغَدَتْ |رِجَالُهُ لا كَالصَّحِيحِ اشْتَهَرَتْ
“আর ‘হাসান’, যার সনদগুলো পরিচিত এবং রাবিগণ প্রসিদ্ধ, তবে সহি হাদিসের রাবিদের ন্যায় প্রসিদ্ধ নয়”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাসান দ্বিতীয় প্রকার। হাদিসের এ প্রকার সনদ ও মতন উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ সহি হাদিসের সংজ্ঞা শেষে ‘হাসান’ হাদিসের সংজ্ঞা পেশ করছেন, কারণ ‘সহি’র পর হাসান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
حسَنُ এর আভিধানিক অর্থ সুন্দর।
‘হাসান’ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যে হাদিসের সনদগুলো প্রসিদ্ধ, তবে সহি হাদিসের রাবিদের ন্যায় প্রসিদ্ধ নয়, তাই হাসান”।
লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বাহ্যত হাসান হাদিসের দু’টি শর্ত উল্লেখ করেছেন: ১. রাবিদের প্রসিদ্ধ হওয়া। ২. সহি হাদিসের রাবিদের অপেক্ষা কম প্রসিদ্ধ হওয়া। সনদ মুত্তাসিল হওয়া, শায ও মু‘আল্ না হওয়া যদিও তিনি উল্লেখ করেননি, তবে সহির সাথে হাসানের তুলনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হাসান হাদিসেও সহির শর্তসমূহ প্রযোজ্য। দ্বিতীয়ত সনদ মুত্তাসিল না হলে যেসব প্রকারগুলো সৃষ্টি হয়, সেগুলো তিনি দ্বা‘ঈফের প্রকারে উল্লেখ করেছেন, যেমন মু‘দ্বাল, মুনকাতি‘, মুরসাল, শায ও মু‘আল্। তাই স্বাভাবিকভাবে বুঝে আসে সনদ মুত্তাসিল হওয়া এবং শায ও মু‘আল্ না হওয়া হাসান হাদিসেও জরুরি।
একটি বিচ্যুতি: লেখক বলেছেন: وغَدَتْ رِجَالُهُ لا كالصّحيحِ اشْتَهَرَتْ তার এ কথার অর্থ ‘হাসান’ হাদিসের রাবিগণ আদালত ও দ্বাবতের বিবেচনায় সহি হাদিসের রাবিদের অপেক্ষা কম প্রসিদ্ধ। এ কথা যথাযথ নয়, কারণ অধিকাংশ মুহাদ্দিসের নিকট ‘সহি’ ও ‘হাসান’ হাদিসের রাবিদের আদালতের প্রসিদ্ধি সমান, পার্থক্য শুধু দ্বাবতের ক্ষেত্রে। ‘হাসান’ হাদিসের রাবির দ্বাবত ‘সহি’ হাদিসের রাবি অপেক্ষা দুর্বল, অন্যান্য শর্ত উভয় প্রকার রাবির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। লেখকের এ ভুল শুধরে ড. আব্দুস সাত্তার আবু গুদ্দাহ পঙক্তিটি নিম্নরূপে পাল্টে দিয়েছেন:
والحسن الخفيف ضبطا إذ عدت= رجاله لاكالصحيح اشتهرت
“আর হাসান: যার রাবিগণ দ্বাবতের বিচারে দুর্বল, সহি হাদিস অপেক্ষা তার রাবিগণ কম প্রসিদ্ধ”। অর্থাৎ হাসান হাদিসের রাবিগণ শুধু স্মৃতি শক্তি ও মেধার বিচারে কম প্রসিদ্ধ, তবে আদালতের বিচারে সহি হাদিসের রাবিদের সমকক্ষ। লেখক আধিক্যের বিবেচনায় رجال শব্দ ব্যবহার করেছেন, অন্যথায় নারী রাবিগণও তার অন্তর্ভুক্ত[1]।
লেখকের সংজ্ঞায় কয়েকটি প্রশ্ন:
১. লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ طُرْقاً শব্দ ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ সনদসমূহ। الَمعْرُوفُ طُرْقاً অর্থ সনদের বিবেচনায় প্রসিদ্ধ, আর সনদের বিবেচনায় তখনি প্রসিদ্ধ হবে, যখন এক হাদিসের একাধিক সনদ হবে। এ থেকে অনুমেয় যে, হাসান হাদিসের একাধিক সনদ থাকা জরুরি, অথচ বাস্তবে তা নয়। এরূপ শর্ত দ্বিতীয় প্রকার হাসান তথা হাসান লি-গায়রিহির জন্য প্রযোজ্য, যা মূলত একপ্রকার দ্বা‘ঈফ হাদিস, একাধিক সনদের কারণে হাসানের মর্যাদায় উন্নীত হয়। হাসান লি যাতিহির জন্য এ শর্ত প্রযোজ্য নয়, লেখক যার সংজ্ঞা পেশ করেছেন।
২. লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ হাসানের সংজ্ঞায় সনদ মুত্তাসিল হওয়া ও রাবিদের আদালত শর্ত করেননি, অনুরূপ তিনি শায ও ইল্লত থেকে মুক্ত হওয়ার কথাও বলেননি, অথচ হাসান হাদিসে এসব শর্ত জরুরি।
৩. লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ দ্বিতীয় শর্ত বলেছেন: “সহি হাদিসের রাবিদের অপেক্ষা কম প্রসিদ্ধ”। এ থেকে স্পষ্ট যে, সনদের প্রত্যেক রাবির ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য, বস্তুত তা নয়, বরং একজন রাবি এরূপ হলে হাদিস হাসান হবে। কারণ হাদিসের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর উপর প্রভাব বিস্তারকারী, আর খারাপ ভালোর উপর কর্তৃত্বকারী। উদাহরণত কোনো সনদে ক্রমানুসারে পাঁচজন রাবি রয়েছে, যদি একজন রাবি দুর্বল হয়, তাহলে সনদ ও হাদিস দুর্বল। একজন রাবি মিথ্যার অপবাদে দুষ্ট হলে হাদিস মাওদু‘ ও জাল, অথচ চারজন রাবি সেকাহ। এতে সংখ্যালঘু একজন রাবি সবার উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। আবার সনদে যদি ভালো ও খারাপ উভয় প্রকার রাবি থাকে, তাহলে খারাপ রাবি সবার উপর কর্তৃত্ব করবে, তার বিবেচনায় হাদিসের মান নির্ণয় হবে।
হাফেয ইব্ন হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ্ হাসানের সবচেয়ে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন:
وخبر الآحاد بنقل عدل تام الضبط، متصل السند، غير معلل ولاشاذ، هو الصحيح لذاته. ثم قال: فإن خف الضبط فالحسن لذاته. النزهة: (صـ91)
“আদিল ও পরিপূর্ণ দ্বাবত সম্পন্ন রাবির মুত্তাসিল সনদে বর্ণিত, ইল্লত ও শায থেকে মুক্ত খবরে ওয়াহেদকে সহি লি-যাতিহি বলা হয়। অতঃপর তিনি বলেন: যদি দ্বাবত দুর্বল হয়, তাহলে হাসান লি-যাতিহি”।[2]
এ সংজ্ঞা মতে হাসান হাদিসে সহি হাদিসের শর্তগুলো থাকা জরুরি, তবে পঞ্চম শর্ত ব্যতিক্রম, যথা: ১. সনদ মুত্তাসিল হওয়া। ২. শায না হওয়া। ৩. দোষণীয় ইল্লত থেকে মুক্ত হওয়া। ৪. রাবিদের আদিল হওয়া। ৫. সহি হাদিস অপেক্ষা হাসান হাদিসের রাবির দ্বাবত দুর্বল হওয়া। পঞ্চম শর্তের ভিত্তিতে সহি ও হাসান একটি অপরটি থেকে পৃথক হয়, অন্যথায় হাসানের রাবিগণ তাকওয়া, ইবাদত ও অন্যান্য দীনি বিষয়ে সহি হাদিসের রাবি থেকে উঁচুমানের হতে পারে।
মুদ্দাকথা: যে হাদিস দুর্বল নয়, কিন্তু সহির মর্তবায় উন্নীত হতে পারেনি তাই হাসান লি-যাতিহি। অথবা বলা যায় দ্বা‘ঈফ রাবি থেকে মুক্ত হাদিস হাসান লি-যাতিহি। এ হিসেবে হাসান হাদীস সহি হাদীসের একটি প্রকার। সহি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়, হাসান সর্বনিম্ন প্রকার।
>[2] আন-নুযহাহ: (৯১)
তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহ্ ‘হাসানে’র সর্বাধিক ব্যবহার করেছেন। শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যে হাদিস দু’সনদে বর্ণিত, যার সনদে মিথ্যার অপবাদে দুষ্ট কোনো রাবি নেই এবং যা সহি হাদিসের বিপরীত শায নয়, তিরমিযির পরিভাষায় তাই হাসান। হাসানের ক্ষেত্রে তিরমিযি এ শর্তগুলো আরোপ করেন।
কতক লোক বলেন: এর বাইরেও তিরমিযি হাসান বলেন, যেমন তিনি যে হাদিস সম্পর্কে বলেন: حسن غريب তার সনদ শুধু একটি, কারণ এক সনদে বর্ণিত হাদিসকে গরিব বলা হয়। আবার এ হাদিসকে তিনি হাসানও বলেন, যার দাবি তার অপর সনদ আছে। এ প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়: একটি হাদিস একজন তাবে‘ঈ থেকে বর্ণিত কারণে গরিব বলা হয়, কিন্তু তার থেকে দু’সনদে বর্ণিত হিসেবে হাসান বলা হয়, হাদিসটি মূলত গরিব। অনুরূপ একটি হাদিস একসাথে صحيح حسن غريب হয়, কারণ হাদিসটি সহি ও গরিব সনদে বর্ণিত তাই সহি ও গরিব। অতঃপর হাদিসটি মূল রাবি থেকে সহি সনদ ও অপর সনদে বর্ণিত তাই হাসান, যদিও হাদিসটি সহি ও গরিব। কারণ হাসান বলা হয় যার একাধিক সনদ রয়েছে এবং তার কোনো রাবি মিথ্যার অপবাদে দুষ্ট নয়। যদি উভয় সনদ সহি হয়, তাহলে সহি লি-যাতিহি, যদি একটি সনদের বিশুদ্ধতা জানা না যায় তাহলে হাসান। এ হাদিস সনদের বিবেচনায় গরিব, কারণ অন্য কোনোভাবে এ সনদ জানা যায়নি, তবে মতন হাসান, কারণ মতন দু’ভাবে বর্ণিত। তাই তিনি বলেন: “এ অধ্যায়ে অমুক ও অমুক থেকে হাদিস রয়েছে”, তার অর্থ: এ মতনের অর্থধারক একাধিক শাহেদ রয়েছে, যা প্রমাণ করে মতনটি হাসান, যদিও সনদ গরিব। যখন তার সাথে তিনি বলেন: হাদিসটি ‘সহি’, তখন তার অর্থ হাদিসটি একটি সহি সনদ ও অপর একটি হাসান সনদে বর্ণিত। এভাবে একটি হাদিস সহি ও হাসান হয়। কখনো একই বিবেচনায় গরিব বলা হয়, কারণ সনদটি এ ছাড়া কোনোভাবে জানা যায়নি, যদি সনদ সহি হয়, তাহলে হাদিস সহি ও গরিব। এতে কোনো অস্পষ্টতা নেই, তবে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয় হাসান ও গরিব জমা হলে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, একটি হাদিস গরিব ও সহি হয়, অতঃপর হাসান হয়। আবার কখনো হাসান ও গরিব হয়, যার অর্থ পূর্বে বলা