مقْلوبُ এর আভিধানিক অর্থ উল্টো। কোনো বস্তুর উপরের অংশ নীচে ও নীচের অংশ উপরে হলে ‘মাকলুব’ বলা হয়, যেমন বলা হয়: الثوب المقلوب উল্টো কাপড়। قلب ‘কালব’ ক্রিয়া বিশেষ্য, অর্থ পরিবর্তন। ‘মাকলুব’ কর্মবাচক বিশেষ্য, অর্থ উল্টো।
কালব দু’প্রকার: ১. কালবে সনদ, ২. কালবে মতন।
১. কালবে সনদ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “সনদের কোনো রাবিকে অপর রাবি দ্বারা পরিবর্তন করা”।
কালবে সনদ দু’প্রকার:
ক. আংশিক কালব ও খ. সম্পূর্ণ কালব।
ক. আংশিক কালব বিভিন্ন প্রকার হয়:
এক. কোনো সনদে এক রাবির জায়গায় অপর রাবিকে উল্লেখ করা আংশিক কালব, যেমন:
قال الإمام البيهقي –رحمه الله- أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أنبأ أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ الْقَطَّانُ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ السُّلَمِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: ذَكَرَ سُفْيَانُ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا لَقِيتُمُ الْمُشْرِكِينَ فِي الطَّرِيقِ، فَلا تَبْدَءُوهُمْ بِالسَّلامِ، وَاضْطَرُّوهُمْ إِلَى أَضْيَقِهِ»
এ সনদে সর্বশেষ রাবি সাহাবি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু; তার ছাত্র আবু সালেহ; তার ছাত্র সুহাইল ইব্ন আবু সালেহ; তার ছাত্র সুফিয়ান[1]; মুহাদ্দিসদের নিকট সনদটি এভাবেই প্রসিদ্ধ, তাদের বিপরীত ইমাম তাবরানি বর্ণনা করেন:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو الْحَرَّانِيُّ، ثَنَا أَبِي، نا حَمَّادُ بْنُ عَمْرٍو النَّصِيبِيُّ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا لَقِيتُمُ الْمُشْرِكِينَ فِي الطَّرِيقِ فَلا تَبْدَءُوهُمْ بِالسَّلامِ، وَاضْطَرُّوهُمْ إِلَى أَضْيَقِهَا».
এখানে দেখছি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ছাত্র আবু সালেহ, তার ছাত্র আ‘মাশ রাহিমাহুল্লাহ্, তার থেকে হাম্মাদ ইব্নু আমর আন-নাসিবি। হাম্মাদ ইব্ন আমর নাসিবি এ সনদে সুহাইলের জায়গায় আ‘মাশকে উল্লেখ করেছে। ইমাম তাবরানি বলেন: “হাম্মাদ ব্যতীত কেউ আ‘মাশ থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেনি”।[2] হাম্মাদ ইব্ন ‘আমর ইচ্ছাকৃতভাবে সুহাইলের জায়গায় আ‘মাশকে উল্লেখ করেছে, হাম্মাদ পরিত্যক্ত রাবি। অতএব তা গ্রহণযোগ্য নয়।
দুই. রাবি ও রাবির পিতার নাম উলট-পালট করা আংশিক কালব, যেমন: ‘মুররাহ ইব্ন কাব’-কে ‘কাব ইব্ন মুররাহ’ বলা আংশিক কালব বা পরিবর্তন।
তিন. এক তবকার রাবির স্থানে অপর তবকার রাবি উল্লেখ করা আংশিক কালব, যেমন রাবিদের নাম অগ্র-পশ্চাৎ করে উস্তাদকে ছাত্র ও ছাত্রকে উস্তাদ বানানো কিংবা উস্তাদের উস্তাদকে ছাত্রের ছাত্র ও ছাত্রের ছাত্রকে উস্তাদের উস্তাদ বনানো। ইব্নু আবি হাতেম ‘ইলাল’[3] গ্রন্থে বলেন:
وَسألت أبي عَنْ حديث حَدَّثَنَا بِهِ أَحْمَد بْن عصام الأَنْصَارِيّ، عَنْ أَبِي بَكْر الحنفي، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنحكيمبْنسَعْدٍ ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ ظبيان، عَنْ سَلْمَانَ، أَنَّهُ قَالَ: " من وَجَدَ فِي بطنه رزًا من بولٍ أو غائطٍ فلينصرف غير متكلم ولا داعي ".
আমার পিতা আবু হাতেমকে আমি একটি হাদিস সম্পকে জিজ্ঞাসা করেছি, যা আমাদেরকে বলেছে আহমদ ইব্ন ইসাম আল-আনসারি, আবু বকর আল-হানাফি থেকে, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি হাকিম ইব্ন সাদ থেকে, তিনি ইমরান ইব্ন যাবইয়ান থেকে, তিনি সালমান থেকে, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার পেটে পেশাব অথবা পায়খানার প্রয়োজন অনুভব করে, সে যেন কথা ও ডাকাডাকি ব্যতীত প্রস্থান করে”। আমার পিতা বললেন, এ সনদে কালব হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সনদটি এরূপ:
سُفْيَان، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ ظبيان، عَن حكيم بْن سَعْدٍ، عَنْ سَلْمَانَ
খ. সম্পূর্ণ কালব:
এক মতনের পূর্ণ সনদ অপর মতনের সাথে জুড়ে দেওয়া, কিংবা তার বিপরীত করা পূর্ণ কালব। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ দ্বিতীয় পঙক্তিতে এ প্রকারের বর্ণনা দিয়েছেন। এ প্রকার কালবকে কালবে মতনও মানা যায়। কারণ, এক সনদের জায়গায় অপর সনদ জুড়ে দিলে যেরূপ কালবে সনদ হয়, অনুরূপ কালবে মতনও হয়, অর্থাৎ এক মতনের জায়গায় অপর মতন স্থাপি হয়। এ হিসেবে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ কলবে সনদ ও কলবে মতন উভয় উল্লেখ করেছেন। বাগদাদে ইমাম বুখারিকে পরীক্ষা করার ঘটনা সম্পূর্ণ কালবের উদাহরণ। ঘটনাটি নিম্নরূপ:
বাগদাদবাসীরা যখন জানল যে, ইমাম বুখারি তাদের নিকট আসছেন, তারা ইমাম বুখারিকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করল। তারা সিদ্ধান্ত নিলো দশজন প্রখর ধী শক্তিমান ব্যক্তি দশটি হাদিস করে মোট একশো হাদিস সনদ পাল্টে বুখারির নিকট পেশ করব। যখন বুখারি আসলেন, মানুষেরা তার নিকট জমা হল। তারা দশটি করে মোট একশো হাদিস পেশ করল। তারা যখন সনদসহ এক একটি হাদিস পেশ করত, বুখারি তাদের উত্তরে বলতেন: আমি জানি না। এভাবে তারা একশো হাদিস পূর্ণ করল। সাধারণ লোকেরা বলতে লাগল, সে কিছু জানে না, একশো হাদিস পেশ করা হল, প্রত্যেকটির ব্যাপারে সে বলল: আমি জানি না! অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং প্রত্যেক হাদিস সঠিক সনদসহ বলা আরম্ভ করলেন। এভাবে তিনি একশো হাদিস শেষ করলেন। এ থেকে তারা জানল যে, সে আসলে আল্লাহর মহান এক কুদরত। তারা সবাই তার বড়ত্বের স্বীকৃতি দিল ও তার সামনে নত হল।
এ জাতীয় কালব সাধারণত পরীক্ষার জন্য করা হয়। কখনো ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়, যেমন কেউ দুর্বল সনদের কোনো হাদিস সহি সনদে প্রচার করল। এটাও এক জাতীয় তাদলিস, তবে কালব থাকার কারণে মাকলুবও।
খ. কালবে মতন: কালবে মতন বিভিন্নভাবে হয়, যেমন:
قال أبوحاتم ابن حبان –رحمه الله- أَخْبَرَنَا الْحَسَنُ بْنُ سُفِيانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحَجَّاجِ السَّامِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيِّ، وَإِسْمَاعِيلُ بْنُ أُمَيَّةَ، وَعُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حِبَّانَ، عَنْ عَمِّهِ وَاسِعِ بْنِ حَبَّانَ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: «رَقِيتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ، فَإِذَا أَنَا بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا عَلَى مَقْعَدَتِهِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ، مُسْتَدْبِرَ الشَّامِ».
ইব্ন হিব্বানের[4] এ হাদিসে কালব ও পরিবর্তণ হয়েছে। রাবি এখানে الْقِبْلَةِ এর জায়গায় الشَّامِ এবং الشَّامِ এর জায়গায় الْقِبْلَةِ স্থাপন করেছেন। হাদিসের প্রকৃতরূপ ইমাম বুখারি[5] প্রমুখ বর্ণনা করেছেন, যেমন:
قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ عِيَاضٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَبَّانَ، عَنْ وَاسِعِ بْنِ حَبَّانَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: «ارْتَقَيْتُ فَوْقَ ظَهْرِ بَيْتِ حَفْصَةَ لِبَعْضِ حَاجَتِي، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْضِي حَاجَتَهُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلَ الشَّأْمِ».
কালবে মতনের দ্বিতীয় উদাহরণ:
قال الإمام مسلم –رحمه الله- حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى جميعا، عَنْ يَحْيَى الْقَطَّانِ، قَالَ زُهَيْرٌ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَخْبَرَنِي خُبَيْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ: وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ يَمِينُهُ مَا تُنْفِقُ شِمَالُهُ ... ».
“সাতজনকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, ... ... আর সে ব্যক্তি যে কোনো সদকা করল এবং সদকাকে সে গোপন করল যে, তার ডান হাত জানেনি তার বাঁ হাত কি খরচ করেছে”।[6]
এখানে ডান হাতের জায়গায় বাঁ হাত ও বাঁ হাতের জায়গায় ডান হাত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতরূপ বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি:
قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنِي خُبَيْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ، ... ... وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ... ».
“সাতজনকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, ... ... আর সে ব্যক্তি যে কোনো সদকা করল এবং সদকাকে সে গোপন করল যে, তার বাঁ হাত জানেনি তার ডান হাত কি খরচ করেছে”।[7]
এ হাদিসে ডান হাতে খরচ করা ও বাঁ হাতের অজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। এটাই হাদিসের প্রকৃতরূপ।
কালবে মতনের তৃতীয় উদাহরণ:
قال الإمام أبوداود –رحمه الله- حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حَسَنٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الْأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ».
“যখন তোমাদের কেউ সেজদা করে, সে যেন অবনমিত না হয়, যেরূপ অবনমিত হয় উট, আর সে যেন তার দু’হাত তার দু’হাঁটুর পূর্বে রাখে”।[8]
ইব্ন উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ্ ‘মানযুমাহ বাইকুনিয়াহ’র ব্যাখ্যায় বলেন: ‘এখানে কালব হয়েছে। তার প্রমাণ হাদিসের প্রথমাংশ। হাদিসের প্রথমাংশে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের ন্যায় সেজদা করতে নিষেধ করেছেন। আমরা দেখি উট হাঁটুর পূর্বে প্রথমে হাত রাখে, অর্থাৎ প্রথমে সামনের অংশ নিচু করে, অতঃপর পিছনের অংশ নিচু করে। আপনি যদি আগে হাত ও পরে হাঁটু রাখেন, তাহলে আপনিও উটের ন্যায় সেজদা করলেন, যার থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। অতএব যখন আপনি বললেন:"وليضع يديه قبل ركبتيه" হাদিসের প্রথম অংশের খিলাফ করলেন, হাদিসের প্রথম অংশের দাবি:"وليضع ركبتيه قبل يديه" এটাই হাদিসের সঠিকরূপ, যেমন ইমাম তিরমিযি ও ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন:
حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُنِيرٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، وَالْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، وَغَيْرُ وَاحِدٍ، قَالُوا: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَجَدَ يَضَعُ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ، وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ».
... ... ওয়ায়েল ইব্ন হুজুর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি সেজদা করতেন দু’হাতের পূর্বে দুই হাঁটু রাখতেন। আর যখন তিনি উঠতেন দুই হাঁটুর পূর্বে দুই হাত উঠাতেন”।[9] হাসান ইব্ন ‘আলি হুলওয়ানি সূত্রে ইমাম আবু দাউদ এভাবেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।[10]
অতএব আমরা নিশ্চিত যে,«فلا يبرك كما يبرك البعير» এর দাবি: প্রথমে হাঁটু ও পরে হাত রাখা, কারণ সেজদার স্বাভাবিক ক্রম প্রথমে হাঁটু রাখা। অতঃপর হাত, অতঃপর কপাল ও নাক রাখা।
জ্ঞাতব্য: কলব-এ মতনকে ইব্ন জাযারি রাহিমাহুল্লাহ্ منقلب বলেছেন। বালকিনি রাহিমাহুল্লাহ্ معكوس বলেছেন। হাফেয ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ مُبْدَل বলেছেন।
মাকলুবের হুকুম:মাকলুব একপ্রকার দ্বা‘ঈফ হাদিস। ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যদি কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া স্বেচ্ছায় কালব বা পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সেটা মাওদু‘ বা বানোয়াট হাদিসের একপ্রকার। আর যদি অনিচ্ছায় ও ভুলে হয়, তাহলে মাকলুব বা মু‘আল্লাল”।[11] সাখাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘বরং এ জাতীয় হাদিস মাওদুর মতই’।[12] শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।
[2] মুজামুল আওসাত লিত তাবরানি: (৬৩৫৮)
[3] হাদিস নং: (১৮৫)
[4] সহি ইব্ন হিব্বান: (১৪১৮)
[5] বুখারি: (১৪৮), মুসলিম: (২৬৭)
[6] মুসলিম: (১০৩৩)
[7] বুখারি: (১৪২৩)
[8] আবু দাউদ: (৮৪০)
[9] তিরমিযি: (২৬৮)
[10] আবু দাউদ: (৮৩৮)
[11] আন-নুযহা: (পৃ.১২৭)
[12] দেখুন: শারহুন নুযহাহ, লিল কারি: (পৃ.৪৮৮)