১. নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলতেন সাহাবিগণ চুপ করে শ্রবণ করতেন, যেন তার কোনো কথা তাদের হাত ছাড়া না হয়। ইমাম আবু দাউদ ও আহমদ রাহিমাহুমাল্লাহ্ উসামাহ ইব্‌ন শারিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

«‏أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم‏ ‏‏وَإِذَا أَصْحَابُهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِهِمْ الطَّيْرُ».

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করলাম, তখন তার সাথীগণ এমতাবস্থায় ছিল যে, যেন তাদের মাথার উপর পাখিকুল বসে আছে”।[1] ইমাম তাবরানি রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, উসামাহ ইব্‌ন শারিক বলেন:

«كُنَّا جُلُوساً عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَأَنَّمَا عَلَى رُؤُوسِنَا الطَّيْرُ، مَا يَتَكَلَّمُ مِنَّا مُتَكَلِّمٌ».

“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসে ছিলাম, যেন আমাদের মাথার উপর পাখিকুল রয়েছে। আমাদের কেউ কথা বলত না”।[2]

২. সাহাবিগণ জটিল বিষয় বারবার জিজ্ঞাসা করতেন, বুঝার আগ পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার এ ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধি ছিল। ইব্‌ন আবি মুলাইকা থেকে ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশার অভ্যাস ছিল অজানা বিষয় জিজ্ঞাসা করা, একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«‏َمْن حُوسِبَ عُذِّبَ»

“যার হিসাব নেওয়া হবে, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে”। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: আমি বললাম, আল্লাহ কি বলেননি:

﴿ فَسَوۡفَ يُحَاسَبُ حِسَابٗا يَسِيرٗا ٨ ﴾ [الانشقاق: ٨]

“অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে”।[3] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«إِنَّمَا ذَلِكَ الْعَرْضُ، وَلَكِنْ مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ يَهْلِكْ».

“এটা হচ্ছে শুধু সামনে পেশ করা, কিন্তু যাকে হিসাবের জন্য জবাবদিহি করা হবে সে ধ্বংস হবে”।[4]

৩. সাহাবিগণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পর্যবেক্ষণ করতেন, অযথা প্রশ্ন করে বিরক্ত করতেন না। ইমাম মুসলিম প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ ইব্‌ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏ ‏: أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا» قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ ‏: «‏بِرُّ ‏‏الْوَالِدَيْنِ» قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» فَمَا تَرَكْتُ أَسْتَزِيدُهُ إِلَّا ‏إِرْعَاءً ‏ ‏عَلَيْهِ. يعني رِفْقاً به صلى الله عليه وسلم.

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি কোন্ আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন: সময়মত সালাত আদায় করা। আমি বললাম: অতঃপর? তিনি বললেন: ‘পিতা-মাতার সদাচরণ’। তিনি বলেন: আমি বললাম: অতঃপর? তিনি বললেন: ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’। আমি আরো জিজ্ঞাসা করতাম, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থার খাতিরে ত্যাগ করেছি”।[5]

৪. সাহাবিদের মধ্যে যিনি লিখতে জানতেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী লিখে রাখতেন। ইমাম আবু দাউদসহ একাধিক মুহাদ্দিস সহি সনদে বর্ণনা করেন: আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে মুখস্থ করার বস্তুগুলো আমি লিখে রাখতাম। কুরাইশরা আমাকে বারণ করল, তারা বলল: তুমি শোনা প্রত্যেক বিষয় লিখে রাখ, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মানুষ, তিনি সন্তুষ্টি ও গোস্বায় কথা বলেন?! আমি বিরত থাকি, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘটনাটি বলি। তিনি মুখের দিকে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেন:

«‏اكْتُبْ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا يَخْرُجُ مِنْهُ إِلَّا حَقٌّ».

“তুমি লিখ, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার নফস, এ মুখ থেকে সত্য ব্যতীত কিছু বের হয় না”।[6]

৫. অধিকন্তু সাহাবিদের পরিষ্কার চিন্তা ও প্রখর স্মৃতিশক্তি স্মরণ রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল। তাদের মাঝে শিক্ষার ব্যাপকতা না থাকার ফলে বংশ, বিভিন্ন ঘটনা, ওয়াদা ও চুক্তিপত্র তারা মুখস্থ রেখে অভ্যস্থ ছিল, যার ফলে তাদের স্মৃতি শক্তির প্রখরতা বৃদ্ধি পেত। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কর্মগুলো চর্চা করেন। এভাবে তারা আল্লাহর দীনকে হিফাজত করতে সক্ষম হন, শুধু দায়িত্বের খাতিরে নয়, দীন ও দীন প্রচারকের মহব্বতও তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আল্লাহ সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।এ ছিল প্রথম উস্তাদ ও প্রথম ছাত্রদের অবস্থা। এ থেকে আমরা জানলাম যে, যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করলে ছাত্রগণ তাদের আদর্শ উস্তাদের সকল শিক্ষা মুখস্থ করতে সক্ষম হন, তার প্রত্যেকটি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করেছেন। অপর দিকে আদর্শ ছাত্র হিসেবে উস্তাদের পাঠ গ্রহণ করার যাবতীয় কৌশল সাহাবিগণ অবলম্বন করেছেন।

>
[1] আবু দাউদ: (৪/৩), হাদিস নং: (৩৩৪৫৫), আহমদ: (৪/২৭৮), হাদিস নং: (১৮৪৭৬)

[2] তাবরানি ফিল কাবির: (১/১৮), হাদিস নং: (৪৭১), হায়সামি রহ. বলেছেন: এ হাদিসের রাবিগণ সহি হাদিসের রাবি: (৮/২৪), হাকেম: (৪/৪০০), তিনি হাদিসটি সহি বলেছেন।

[3] সূরা ইনশিকাক: (৮)

[4] বুখারি: (১/১৯৬-১৯৭), হাদিস নং: (১০৩), মুসলিম: (৪/২২০৪), হাদিস নং: (২৮৭৬)

[5] মুসলিম: (১/৮৯), হাদিস নং: (১৩৭)

[6] আবু দাউদ: (৩/৩১৮), হাদিস নং: (৩৬৪৬)