দীনের কোনো অংশ যেন হ্রাস না পায়, সে জন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন: ১. দীন প্রচারের নির্দেশ ও ২. দীন গোপন করার নিষেধাজ্ঞা। এ মর্মে কয়েকটি হাদিস আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। এখানে অপর একটি হাদিস উল্লেখ করছি, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«نَضَّرَ اللهُ امْرَءاً سَمِعَ مِنَّا حَدِيثاً، فَحَفِظَهُ حَتَّى يُبَلِّغَهُ غَيْرَهُ، فَإِنَّهُ رُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ لَيْسَ بِفَقِيهٍ، وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ. ثَلاثُ خِصَالٍ لا يَغِلُّ عَلَيْهِنَّ قَلْبُ مُسْلِمٍ أَبَداً: إِخْلاصُ الْعَمَلِ لِلّهِ، وَمُنَاصَحَةُ وُلاةِ الْأَمْرِ، وَلُزُومُ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ»
“আল্লাহ সে ব্যক্তিকে শুভ্রোজ্জল করুন, যে আমাদের থেকে কোনো হাদিস শ্রবণ করল এবং অপরকে পৌঁছানো পর্যন্ত তা সংরক্ষণ করল। কারণ অনেক ফিকহধারণকারী ফকিহ হয় না, আবার অনেক ফিকহ ধারণকারী তার চেয়ে বিজ্ঞ ফকিহ এর নিকট ইলম পৌঁছায়। তিনটি স্বভাব যেগুলোতে কোনো মুসলিমের অন্তর খিয়ানত বা বিদ্বেষ থাকতে পারে না (অর্থাৎ মুসলিমের অন্তরে তা থাকাই স্বাভাবিক; অথবা এগুলো থাকলে সে অন্তরে হিংসা, হানাহানি থাকবে না) : আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে আমল করা, দায়িত্বশীলদের সৎ উপদেশ প্রদান করা ও মুসলিমদের জামা‘আত আঁকড়ে ধরা। কারণ মুসলিমদের দাওয়াত তাদের সবাইকে বেষ্টন করে নেয়”।[1]
দীন গোপনকারীকে সতর্ক করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡتُمُونَ مَآ أَنزَلۡنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلۡهُدَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا بَيَّنَّٰهُ لِلنَّاسِ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أُوْلَٰٓئِكَ يَلۡعَنُهُمُ ٱللَّهُ وَيَلۡعَنُهُمُ ٱللَّٰعِنُونَ ١٥٩ إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُواْ وَأَصۡلَحُواْ وَبَيَّنُواْ فَأُوْلَٰٓئِكَ أَتُوبُ عَلَيۡهِمۡ وَأَنَا ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٠﴾ [البقرة: ١٥٩، ١٦٠]
“নিশ্চয় যারা গোপন করে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়েত যা আমি নাযিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লানত করেন এবং লানতকারীগণ লানত করে। তারা ছাড়া, যারা তওবা করেছে, শুধরে নিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। অতএব, আমি তাদের তওবা কবুল করব। আর আমি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু”।[2] উল্লেখ্য ইলম গোপন করে যে পাপ করে, তার তাওবা হচ্ছে গোপন করা ইলম প্রকাশ করে দেওয়া।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
«مَنْ كَتَمَ عِلْما ً تَلَجَّمَ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
“যে কোনো ইলম গোপন করল, সে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পড়বে”।[3]
এসব আয়াত ও হাদিসের প্রভাব আমরা সাহাবিদের জীবনে দেখতে পাই। তারা দীন প্রচারের দায়িত্ব আঞ্জাম ও দীন গোপন করার পাপ থেকে মুক্তির জন্য জীবন সায়াহ্নেও ইলম প্রচার করেছেন। একদা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অধিক হাদিসের কারণে দোষারোপ করা হয়, তিনি প্রতিবাদ করে বলেন: “আল্লাহর শপথ, যদি আল্লাহর কিতাবে দু’টি আয়াত না থাকত, আমি তোমাদেরকে কোনো হাদিস বলতাম না”। অতঃপর তিনি সূরা বাকারার উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন”।[4] উসমান ইব্ন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
«والله لأحدثنكم حديثاً، والله لولا آية في كتاب الله ما حدَّثْتُكُمُوه»
“আল্লাহর শপথ, আমি তোমাদেরকে একটি হাদিস শুনাব, আল্লাহর শপথ যদি আল্লাহর কিতাবে একটি আয়াত না থাকত আমি তোমাদেরকে হাদিস বলতাম না”।[5] তার উদ্দেশ্যও উপরোক্ত আয়াত। এ থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, সাহাবিগণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনা কোনো বাণী গোপন করেননি, কিংবা তার কোনো অংশ তারা হ্রাস করেননি।
>[2] সূরা বাকারা: (১৫৯-১৬০)
[3] সহি ইব্ন হিব্বান: (১/২৭১), হাদিস নং: (৯৫), হাদিসটি আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত।
[4] বুখারি: (৫/২৮), হাদিস নং: (২৩৫০)
[5] মুসলিম: (১/২০৫), হাদিস নং: (২২৭)