প্রশ্ন: ইসলামে জামা‘আতের গুরুত্ব কতটুকু? কোনো মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো জামা‘আতে যোগদান করা কি শর্ত?

উত্তর: ইসলামে জামা‘আত হচ্ছে দ্বীনের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জামা‘আত সম্পর্কে বলেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। তাদের বিরোধীরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত এসে যাবে, তবুও তারা ঐরূপই থাকবে’। হাদীছটিতে উল্লেখিত এই জামা‘আতের সাথেই সবার থাকা উচিৎ।

তবে দলাদলির জামা‘আত, যে হক বা বাতিলের তোয়াক্কা না করে যে কোনো মূল্যে নিজের মতামতের বিজয় কামনা করে, সেই জামা‘আতে যোগদান করা জায়েয নয়। কেননা এই ধরনের দলে যোগ দেওয়া মুসলিম জামা‘আত থেকে বের হয়ে দলাদলিতে যোগ দেওয়ার শামিল। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ١٥٩ ﴾ [الانعام: ١٥٩]

‘নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয় আল্লাহ তা‘আয়ালার নিকট সমর্পিত’ (আল-আন‘আম ১৫৯)। তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ ۞شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ كَبُرَ عَلَى ٱلۡمُشۡرِكِينَ مَا تَدۡعُوهُمۡ إِلَيۡهِۚ ٱللَّهُ يَجۡتَبِيٓ إِلَيۡهِ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِيٓ إِلَيۡهِ مَن يُنِيبُ ١٣ ﴾ [الشورا: ١٣]

‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না’ (আশ-শূরা ১৩)। তিনি অন্যত্র আরো বলেন,

﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥ ﴾ [ال عمران: ١٠٥]

‘আর তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বিরোধ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি’ (আলে ইমরান ১০৫)।

একটি কথা বলা ভাল, ইসলামী দলগুলি যদি সত্যিকার অর্থে ইসলামের বিজয় চায়, তাহলে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন না হয়ে তাদের শুধুমাত্র একটি দলে সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ, যে দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের পথের দল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এই উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং একটি ছাড়া সবগুলিই জাহান্নামে যাবে। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জান্নাতী সেই দল কোন্‌টি? তিনি বললেন, যে আমার এবং আমার ছাহাবার পথে থাকবে’।

এই দলগুলি মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে এবং তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে শত্রুতা। এমনকি একজন আরেক জনকে যম শত্রু মনে করে; অথচ তারা সবাই মুসলিম এবং সবাই তার নিজের দ্বারা ইসলামের বিজয় কামনা করে। কিন্তু এত বিরোধ আর বিভক্তি নিয়ে ইসলামের বিজয় কি করে সম্ভব?! যাহোক, আমি আমার ভাইদের প্রতি হকের উপর এক হয়ে যাওয়ার এবং কুরআন ও আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে যেয়ে বিরোধের সমস্ত দিক পরিহার করার আহ্বান জানাই।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম যুবকেরা আজ এই বিভক্তির শিকারে পরিণত হয়েছে। কারণ তারা একেক জন একেক দলে যোগ দিয়ে পরস্পর পরস্পরকে গালাগালি ও নিন্দা করে, যা মুসলিম যুবকদের জাগরণে চরম বাধা। যাহোক, আমি আবারও মুসলিমদেরকে দলাদলি পরিহার করার নছীহত করছি। আমি মনে করি, গোটা মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন না হয়ে এক হয়ে যাওয়া উচিৎ। প্রত্যেকটি দল অন্যান্য দলের বিপরীতে নতুন নাম দিয়ে আরেকটি দল গঠন করা উচিৎ নয়।([1])

তিনি ‘হিল্‌ইয়াতু ত্বলিবিল ইল্‌ম’ পুস্তিকার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘দলীয় ভিত্তির উপর কোনো প্রকার মিত্রতা ও শত্রুতা চলবে না’ শিরোনামের মধ্যে বলেন, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, দ্বীনী শিক্ষার প্রত্যেকটি শিক্ষানবিশকে সর্বপ্রকার দলাদলিমুক্ত থাকতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো দলের উপর ভিত্তি করে মিত্রতা বা বৈরীতা গড়ে তোলা যাবে না। মনে রাখতে হবে, নিঃসন্দেহে এটি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি বিরোধী। সালাফে ছালেহীনের নিকট কোনো প্রকার দলাদলি ছিল না, তাঁরা সবাই একটিমাত্র দলের অন্তুর্ভুক্ত ছিলেন, তাঁরা সবাই নিম্নোক্ত আয়াতের ভাষ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন,

﴿هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ﴾ [الحج: ٧٨]

‘তিনিই তোমাদের নাম মুসলিম রেখেছেন’ (আল-হজ্জ ৭৮)। অতএব, কুরআন ও সুন্নাহ্‌র বক্তব্যের বাইরে অন্য কোনো কিছুর উপর ভিত্তি করে দলাদলি, মিত্রতা ও বৈরীতা চলবে না। দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি দলের সাথে জড়িত, ফলে সে ঐ দলের মূলনীতি সমর্থন করে চলে এবং তার সমর্থনের পক্ষে এমন কিছু দলীল পেশ করে, যা কখনই তার পক্ষে নয়; বরং তার বিপক্ষের দলীল হতে পারে। দলীয় কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতি সমর্থন না করার কারণে এমনকি তার নিকটতম মানুষটিকেও পথভ্রষ্ট গণ্য করতে সে ইতস্তত বোধ করে না। সে বলে, তুমি আমার পথে না চললে তুমি আমার বিরোধী।…অতএব, ইসলামে কোনো প্রকার দলাদলি চলবে না। মুসলিমদের দলাদলির কারণে আজ বিভিন্ন পথের জন্ম হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আজ তারা পরস্পরকে পথভ্রষ্ট গণ্য করছে এবং তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করছে।([2])

([1]) শায়খের নিজস্ব ওয়েবসাইট http//www.ibnothaimeen.com–এর নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে ১০/১২/২০১২ তারিখ দুপুর ১৩:২৮ টায় সংগৃহীত:

http://www.ibnothaimeen.com/all/noor/article_994.shtml

([2]) আত-তালীক্ব আছ-ছামীন আলা শারহে ইবনে উছায়মীন লিহিল্‌ইয়াতি ত্বলিবিল ইল্‌ম, পৃ: ৪০৬-৪০৮।