১। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন,
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ﴿النحل:120﴾
‘‘নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিলেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর হুকুম পালনকারী একটি উম্মত বিশেষ। এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।’’ (নাহলঃ১২০)
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেন,
وَالَّذِينَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ ﴿المؤمنون : 59﴾
‘‘আর যারা তাদের রবের সাথে শিরক করে না’’ (মুমিনুনঃ ৫৯)
৩। হুসাইন বিন আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, একবার আমি সাঈদ বিন জুবাইরের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, গতকাল রাত্রে যে নক্ষত্রটি ছিটকে পড়েছে তা তোমাদের মধ্যে কে দেখতে পেয়েছে? তখন বললাম, ‘‘আমি’’। তারপর বললাম, ‘বিষাক্ত প্রাণী কর্তৃক দংশিত হওয়ার কারণে আমি নামাজে উপস্থিত থাকতে পারিনি’। (তিনি বললেন, ‘তখন তুমি কি চিকিৎসা করেছ?
বললাম ‘‘ঝাড় ফুঁক করেছি’’ তিনি বললেন, কিসে তোমাকে এ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে? [অর্থাৎ তুমি কেন এ কাজ করলে?] বললাম, ‘একটি হাদীস’ [এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে] যা শা’বী আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন, তিনি তোমাদেরকে কি বর্ণনা করেছেন? বললাম ‘তিনি বুরাইদা বিন আল হুসাইব থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, চোখের দৃষ্টি বা চোখ লাগা এবং জ্বর ব্যতীত অন্য কোন রোগে ঝাড়- ফুঁক নেই।’ তিনি বললেন, ‘সে ব্যক্তিই উত্তম কাজ করেছে, যে শ্রুত জিনিস শেষ পর্যন্ত আমল করতে পেরেছে’। কিন্তু ইবনে আববাস (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
عرضت علي الأمم فرأيت النبي ومعه الرهط والنبي ومعه الرجل والرجلان والنبي وليس معه أحد، إذ رفع لي سواد عظيم، فظننت أنهم أمتي فقيل لي هذا موسى وقومه، فنظرت فإذا سواد عظيم، فقيل لي : هذه أمتك، ومعهم سبعون ألفا يدخلون الجنة بغير حساب ولا عذاب.
‘‘আমার সম্মুখে সমস্ত জাতিকে উপস্থাপন করা হলো। তখন আমি এমন একজন নবীকে দেখতে পেলাম যার সাথে অল্প সংখ্যক লোক রয়েছে। এরপর আরো একজন নবীকে দেখতে পেলাম যার সাথে মাত্র দু’জন লোক রয়েছে। আবার এমন একজন নবীকে দেখতে পেলাম যার সাথে কোন লোকই নেই। ঠিক এমন সময় আমার সামনে এক বিরাট জনগোষ্ঠী পেশ করা হলো। তখন আমি ভাবলাম, এরা আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হলো এরা হচ্ছে মূসা (আঃ) এবং তাঁর জাতি।
এরপর আরো একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর দিকে আমি তাকালাম। তখন আমাকে বলা হলো, এরা আপনার উম্মত। এদের মধ্যে সত্তুর হাজার লোক রয়েছে যারা বিনা হিসেবে এবং বিনা আযাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। একথা বলে তিনি দরবার থেকে উঠে বাড়ীর অভ্যন্তরে চলে গেলেন। এরপর লোকেরা ঐ সব ভাগ্যবান লোকদের ব্যাপারে বিতর্ক শুরু করে দিলো। কেউ বললো, তারা বোধ হয় রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহচার্য লাভকারী ব্যক্তিবর্গ। আবার কেউ বললো, তারা বোধ হয় ইসলাম পরিবেশে অথবা মুসলিম মাতা-পিতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে আর আল্লাহর সাথে তারা কাউকে শরিক করেনি। তারা এ ধরনের আরো অনেক কথা বলাবলি করলো। অতঃপর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মধ্যে উপস্থিত হলে বিষয়টি তাঁকে জানানো হলো। তখন তিনি বললেন,
هم الذين لا يسترقون ولا يتطيرون ولا يكتون وعلى ربهم يتوكلون
‘‘তারা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা ঝাড়-ফুক করে না। পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করে না। শরীরে সেক বা দাগ দেয় না। আর তাদের রবের উপর তারা ভরসা করে।’’ একথা শুনে ওয়াকাশা বিন মুহসিন দাড়িয়ে বললো, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন যেন আল্লাহ তাআলা আমাকে এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের দলভূক্ত করে নেন। তিনি বললেন, আমি দোয়া করলাম, ‘‘তুমি তাদের দলভুক্ত’’। অতঃপর অন্য একজন লোক দাড়িয়ে বললো, আল্লাহর কাছে আমার জন্যও দোয়া করুন যেন তিনি আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে নেন। তিনি বললেন, ‘‘তোমার পূর্বেই ওয়াকাশা সে সুযোগ নিয়ে গেছে।’’
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১। তাওহীদের ব্যাপারে মানুষের বিভিন্ন স্তরে অবস্থান সম্পর্কিত জ্ঞান।
২। নবী ইবরাহীম (আ:) মুশরিক ছিলেন না বলে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা।
৩। বড় বড় বুজুর্গ ব্যক্তিগণ শিরক মুক্ত ছিলেন বলে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা।
৪। ঝাড়-ফুঁক এবং আগুনের দাগ পরিত্যাগ করা তাওহীদপন্থী হওয়ার প্রকৃষ্ট প্রমান।
৫। আল্লাহর উপর ভরসা বা তাওয়াক্কুলই বান্দার মধ্যে উল্লেখিত গুণ ও স্বভাবসমূহের সমাবেশ ঘটায়।
৬। বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশকারী সৌভাগ্যবান লোকেরা কোন আমল ব্যতীত উক্ত মর্যাদা লাভ করতে পারেননি, এটা জানার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের জ্ঞানের গভীরতা।
৭। মঙ্গল ও কল্যাণের প্রতি তাঁদের অপরিসীম আগ্রহ।
৮। সংখ্যা ও গুণাবলরি দিক থেকে উম্মতে মুহাম্মদীর ফজিলত।
৯। নবী মূসা (আঃ) এর সাহাবীদের মর্যাদা।
১০। সব উম্মতকে রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে।
১১। প্রত্যেক উম্মতই নিজ নিজ নবীর সাথে পৃথকভাবে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে।
১২। নবীগণের আহবানে সাড়া দেয়ার মত লোকের স্বল্পতা।
১৩। যে নবীর দাওয়াত কেউ গ্রহণ করেনি তিনি একাই হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবেন।
১৪। এ জ্ঞানের শিক্ষা হচ্ছে, সংখ্যাধিক্যের দ্বারা ধোকা না খাওয়া আবার সংখ্যাল্পতার কারণে অবহেলা না করা।
১৫। চোখ-লাগা এবং জ্বরের চিকিৎসার জন্য ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি।
১৬। সালাফে সালেহীনের জ্ঞানের গভীরতা।
قد أحسن من انتهى إلى ما سمع
‘‘সে ব্যক্তিই ভাল কাজ করেছে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছে তাই আমল করেছে’’ এ কথাই এর প্রমাণ পেশ করে। তাই প্রথম হাদীস দ্বিতীয় হাদিসের বিরোধী নয়।
১৭। মানুষের মধ্যে যে গুণ নেই তার প্রশংসা থেকে সালাফে সালেহীন বিরত থাকতেন।
১৮। أنت منهم (তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত) ওয়াকাশার ব্যাপারে একথা নবুওয়তেরই প্রমাণ পেশ করে।
১৯। ওয়াকাশা (রা:) এর মর্যাদা ও ফজিলত।
২০। কোন কথা সরাসরি না বলে হিকমত ও কৌশল অবলম্বন করা।