কিতাবুত তাওহীদ ১ হতে ৬৭ তম অধ্যায় মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব ১ টি

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,

الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ (الأنعام:82)

‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং ঈমানকে জুলুম [শিরক] এর সাথে মিশ্রিত করেনি’’ [তাদের জন্যই রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা] (আনআম : ৮২)

২। সাহাবী উবাদা ইবনে সামেত (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (স:) এরশাদ করেছেন,

من شهد أن لا اله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله وأن عيسى عبد الله ورسوله وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه، والجتة حق والنار حق أدخله الله الجنة على ما كان من العمل. (أخرجاه)

‘‘যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দান করল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরিক নেই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি তাঁর এমন এক কালিমা যা তিনি মরিয়াম (আঃ) এর প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তিনি তাঁরই পক্ষ থেকে প্রেরিত রুহ বা আত্মা। জান্নাত সত্য জাহান্নাম

সত্য। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান করবেন, তার আমল যাই হোক না কেন। (বুখারি ও মুসলিম)

সাহাবী ইতবানের হাদিসে বর্ণিত আছে, ইমাম বুখারি ও মুসলিম হাদিসটি সংকলন করেছেন,

فإن الله حرم على النار من قال لا إله إلاالله يبتغى بذلك وجه الله

‘‘আল্লাহ তা’আলা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে।’

৩। প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রা:) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি এরশাদ করেছেন, মূসা (আঃ) বললেন,

يارب علمني شيئا أذكرك وأدعوك به قال: قل يا موسى لا إله إلا الله، قال: كل عبادك يقولون هذا؟ قال يا موسى لو أن السموات السبع وعامرهن غيري والأرضين السبع في كفة ولا إله إلاالله فى كفة مالت بهن لا إله إلا الله (رواه ابن حبان والحاكم وصححه)

‘‘হে আমার রব, আমাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিন যা দ্বারা আমি আপনাকে স্মরণ করবো এবং আপনাকে ডাকবো। আল্লাহ বললেন, ‘হে মূসা, তুমি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলো। মূসা বললেন, ‘‘আপনার সব বান্দাই তো এটা বলে।’’ তিনি বললেন, ‘‘হে মূসা, আমি ব্যতীত সপ্তাকাশে যা কিছু আছে তা, আর সাত তবক যমীন যদি এক পাল্লায় থাকে আরেক পাল্লায় যদি শুধু লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ থাকে, তাহলে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর পাল্লাই বেশী ভারী হবে।’’

(ইবনে হিববান, হাকিম)

৪। বিখ্যাত সাহাবী আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, ‘আমি রাসূল (স:) কে এ কথা বলতে শুনেছি,

قال الله تعالى يابن آدم لو أتيتني بقراب الأرض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بى شيئا لأتيتك بقرابها مغفرة. (ترمذي و حسنه)

‘‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান, তুমি দুনিয়া ভর্তি গুনাহ নিয়ে যদি আমার কাছে হাজির হও, আর আমার সাথে কাউকে শরিক না করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করো, তাহলে আমি দুনিয়া পরিমাণ

মাগফিরাত নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে আসবো’’। (তিরমিজী)

এ অধ্যায় থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ-

১। আল্লাহর অসীম করুণা।

২। আল্লাহর নিকট তাওহীদের অপরিসীম সওয়াব।

৩। গুনাহ সত্ত্বেও তাওহীদের দ্বারা পাপ মোচন।

৪। সূরা আন আনআমের ৮২ নং আয়াতের তাফসীর।

৫। উবাদা বিন সামেতের হাদীসে বর্ণিত পাঁচটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেয়া।

৬। উবাদা বিন সামেত এবং ইতবানের হাদীসকে একত্র করলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর অর্থ সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং ধোকায় নিপতিত লোকদের ভুল সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়বে।

৭। ইতবান (রা:) হতে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত শর্তের ব্যাপারে সতর্কী করণ।

৮। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ফজীলতের ব্যাপারে সতর্কীকরণের প্রয়োজনীয়তা নবীগণের জীবনেও ছিলো।

৯। সমগ্র সৃষ্টির তুলনায় এ কালেমার পাল্লা ভারী হওয়ার ব্যাপারে সতর্কীকরণ, যদিও এ কলেমার অনেক পাঠকের পাল্লা ইখলাসের সাথে পাঠ না করার কারণে হালকা হয়ে যাবে।

১০। সপ্তাকাশের মত সপ্ত যমীন বিদ্যমান থাকার প্রমাণ।

১১। যমীনের মত আকাশেও বসবাসকারীর অস্তিত্ব আছে।

১২। আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলীকে ইতিবাচক বলে সাব্যস্ত করা যা আশআরী সম্প্রদায়ের চিন্তা ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত।

১৩। সাহাবী আনাস (রাঃ) এর হাদীস সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর ইতবান (রা:) এর হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী।

فإن الله حرم على النار من قال لا إله إلا الله يبتغي به وجه الله

এর মর্মার্থ হচ্ছে শিরক বর্জন করা। শুধু মুখে বলা এর উদ্দেশ্য নয়।

১৪। নবী ঈসা (আঃ) এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়ই আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল হওয়ার বিষয়টি গভীর ভাবে চিন্তা করা।

১৫। ‘‘কালিমাতুল্লাহ’’ বলে ঈসা (আঃ) কে খাস করার বিষয়টি জানা।

১৬। হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে রুহ (পবিত্র) আত্মা হওয়া সম্পর্কে অবগত হওয়া।

১৭। জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনার মর্যাদা।

১৮। আমল যাই হোক না কেন, এ কথার মর্মার্থ উপলব্ধি করা।

১৯। মিজানের দুটি পাল্লা আছে এ কথা জানা।

২০। আল্লাহার চেহারার উল্লেখ আছে, এ কথা জানা।