আমাদের দেশের ওয়াযে ও পুস্তকে বহুল প্রচলিত একটি কথা:
يَكُوْنُ مَعَ الشُّهَدَاءِ مَنْ ذَكَرَ الْمَوْتَ كُلَّ يَوْمٍ عِشْرِيْنَ مَرَّةً
‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যুকে প্রতিদিন বিশবার স্মরণ করবে সে শহীদগণের সঙ্গী হবে বা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।’’
মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন যে, এটি সনদবিহীন বানোয়াট কথা।[1]
মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট বা ‘সাকারাতুল মাউত’ বিষয়ক কিছু কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মৃত্যু যন্ত্রণার বিস্তারিত বিবরণ, তুলনা, উদাহরণ, প্রত্যেক অঙ্গের সাথে আত্মার কথাবার্তা ইত্যাদি বিষয়ক প্রচলিত হাদীসগুলো কিছু বানোয়াট ও কিছু অত্যন্ত দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে।[1]
একটি জাল হাদীসে বলা হয়েছে, ইবরাহীম (আঃ) যখন তাঁর প্রভুর সাথে সাক্ষাত করেন তখন তিনি বলেন, হে ইবরাহীম, মৃত্যুকে কেমন বোধ করলে? তিনি বলেন, আমার অনুভব হলো যে, আমার চামড়া টেনে তুলে নেয়া হচ্ছে। তখন আল্লাহ বলেন, তোমার জন্য মৃত্যু যন্ত্রণাকে সহজ করা হয়েছিল তার পরেও এরূপ...। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, কথাটি জাল।[1]
সালাতুল জানাযা আদায়, মৃতের অনুগমন, লাশ বহন, দাফনে অংশ গ্রহণ ইত্যাদি সুন্নাহ নির্দেশিত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। লাশ বহনের ক্ষেত্রে অনেক ফকীহ উল্লেখ করেছেন যে, চারিদিক থেকে অন্তত দশ পা করে লাশ বহন করা উচিত। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে দুটি হাদীস বর্ণিত:
من اتبع جَنَازَة فَأخذ بجوانب السرير الْأَرْبَع غفر لَهُ أَرْبَعُونَ ذَنبا كلهَا من الْكَبَائِر
‘‘যে ব্যক্তি মৃতের অনুগমনের সময় খাটিয়ার চারিদিক থেকে ধরবে তার চল্লিশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে, সবগুলোই কবীরা গোনাহ।’’
من حمل قَوَائِم السرير الْأَرْبَع إِيمَانًا واحتسابًا (حط) الله - عَزَّ وَجَلَّ - عَنهُ أَرْبَعِينَ كَبِيرَةগ্ধ .
‘‘ যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সাথে খাটিয়ার চারিটি খুটি বহন করবে আল্লাহ তার চল্লিশটি কবীরা গোনাহ ক্ষমা করবেন।’’
প্রথম হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী সিওয়ার ইবন মুসআব হামাযানী (سوار بن مصعب الهمذاني) এবং দ্বিতীয় হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী আলী ইবন আবী সারা শাইবানী (علي بن أبي سارة)। ইয়াহইয়া ইবন মায়ীন, বুখারী, নাসায়ী, ইবন আবী হাতিম, দারাকুতনী, ইবন হিববান, ইবন আদী, আবূ নুআইম ইসপাহানী, যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিস ইমাম এদের দুজনকে একেবারেই দুর্বল, অগ্রহণযোগ্য, মুনকার ও মাতরূক বা পরিত্যক্ত বলে উল্লেখ করেছেন।[1] এজন্য হাদীসগুলোকে ইবনুল জাওযী, আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দিস মাউযূ বা মুনকার এবং সুয়ূতী, ইবনু আর্রাক প্রমুখ মুহাদ্দিস দুর্বল বলে গণ্য করেছেন।[2]
ফকীহগণ এ প্রসঙ্গে নিম্নের হাদীসটি উল্লেখ করেছেন:
مَنْ حَمَلَ جِنَازَةً أَرْبَعِينَ خُطْوَةً كَفَّرَتْ أَرْبَعِينَ كَبِيرَةً
‘‘যে ব্যক্তি চল্লিশ পা লাশ বহন করবে তার চল্লিশটি কবীরা গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’’[3]
এ শব্দে এ হাদীসটি কোনো হাদীসের গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে বলে আমি জানতে পারি নি। বাহ্যত এটি উপরের দ্বিতীয় হাদীসটিরই আরেকটি ভাষ্য।
লক্ষ্যণীয় যে, চারিদিক থেকে খাটিয়া বহনের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত হাদীসগুলো অগ্রহণযোগ্য হলেও সাহাবীগণ থেকে এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সনদে তাঁদের মতামত বর্ণিত। আবূ দারদা (রা) বলেন:
مِنْ تَمام أَجْرِ الْجِنَازَة ... وَأَن يَحْمِلَ بأَرْكَانِهَا الأَرْبَعَة
‘‘জানাযার সাওয়াবের পূর্ণতার মধ্যে রয়েছে... খাটিয়ার চারটি খুটি ধরে তা বহন করা....।’’ হাদীসটির সনদ সহীহ।[4]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা) বলেন:
إِذا تبع أحدكُم الْجِنَازَة فليأخذ بجوانب (السرير) الْأَرْبَعَة ثمَّ ليتطوع بعد أَو ليذر؛ فَإِنَّهُ من السّنة
‘‘যখন তোমাদের কেউ লাশের অনুগমন করবে তখন সে যেন খাটিয়ার চারদিক থেকেই ধরে। এরপর ইচ্ছা করলে অতিরিক্ত কিছু করবে বা ছেড়ে দেবে। এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।’’
ইবন মাসঊদের (রা) পুত্র আবূ উবাইদা হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি নির্ভরযোগ্য। কোনো কোনো মুহাদ্দিস বলেছেন, তিনি তাঁর পিতা থেকে হাদীস নিজে শুনেন নি। এজন্য সনদ বিচ্ছিন্ন বলে গণ্য। তবে অন্যান্য মুহাদ্দিস ইবন মাসঊদ (রা) থেকে আবূ উবাইদার বর্ণনা সহীহ বলে গণ্য করেছেন।[5]
তাবিয়ী আলী ইবন আব্দুল্লাহ আযদী বলেন:
رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ فِيْ جَنَازَةٍ حَمَلَ بِجَوَانِبِ السَّرِيْرِ الأَرْبَعِ قَالَ بَدَأَ بِمَيَامِنِهَا
‘‘আমি আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা)-কে একটি জানাযায় দেখলাম। তিনি খাটিয়ার চারদিক থেকে বহন করলেন। তিনি ডান থেকে শুরু করলেন...।[6]
হাদীসটির সনদ বাহ্যত হাসান পর্যায়ের। এভাবে আমরা দেখছি যে, চারদিক থেকে খাটিয়া বহনের বিষয়টি সাহাবীগণের সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। তবে দশ পা করে বহনের বিষয়টি একেবারেই অপ্রমাণিত ও ভিত্তিহীন।
[2] তাবারানী, আল-মু’জামুল আউসাত ৬/৯৯; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ২/৫৫; তালখীসুল হাবীর ২/১১১; ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/৩৮৩; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/২৬; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/৪০৫; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/৩৬৬-৩৬৭; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ২১৬-২১৭।
[3] সারাখসী, আল-মাবসূত ২/১০১; কাসানী, বাদাইউস সানাইঅ ১/৩০৯।
[4] ইবন আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ (মুহাম্মাদ আওয়ামা: শামিলা) ৩/২৮৩; ইবনুল মুলাক্কিন, আল-বাদরুল মুনীর (শামিলা) ৫/২২৪; ইবনুত তুরকমানী, আল-জাওহারুন নাকী ৪/২০।
[5] বিস্তারিত আলোচনা দেখুন: ইরশীফ মুলতাকা আহলিল হাদীস-১ (শামিলা ৩.২৮): আব্দুর রাহমান ফকীহ ৪১/৪০৬।
[6] আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ ৩/৫১৩; ইবন আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ ৩/২৮৩।
একটি প্রচলিত জাল হাদীসে বলা হয়েছে:
اِدْفَنُوْا مَوْتَاكُمْ وَسَطَ قَوْمٍ صَالِحِيْنَ فَإِنَّ الْمَيِّتَ يَتَأَذَّي بِجَارِ السُّوْءِ كَمَا يَتَأَذَّي الْحَيُّ بِجَارِ السُّوْءِ
‘‘তোমাদের মৃতদেরকে নেককার মানুষদের মাঝে দাফন করবে; কারণ জীবিত মানুষ যেমন খারাপ প্রতিবেশির দ্বারা কষ্ট পায়, মৃত মানুষও তেমনি খারাপ প্রতিবেশি দ্বারা কষ্ট পায়।’’
হাদীসটির সনদে মিথ্যাবাদি রাবী বিদ্যমান।[1]
কবর যিয়ারত করা একটি সুন্নাত নির্দেশিত নফল ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে মাঝে মাঝে কবর যিয়ারত করতেন। এছাড়া তিনি আখেরাতের স্মরণ, মৃত্যুর স্মরণ ও মৃতব্যক্তির সালাম ও দোয়ার জন্য কবর যিয়ারত করতে উম্মাতকে অনুমতি ও উৎসাহ দিয়েছেন।[1]
এ সাধারণ সাওয়াব ছাড়া যিয়ারতের বিশেষ সাওয়াবের বিষয়ে কিছু জাল হাদীস প্রচলিত আছে। যেমন: ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি তার পিতা, মাতা, ফুফু, খালা বা কোনো আত্মীয়ের কবর যিয়ারত করে তবে তার জন্য একটি মাবরূর হজ্জের সাওয়াব লিখা হবে....।’’[2]
[2] ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/৪১৩-৪১৪; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/৪৪০; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/৩৬৩; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৩৪৫।
কবর যিয়ারত যে কোনো দিনে যে কোনো সময়ে করা যেতে পারে। কোনো বিশেষ দিনে বা বিশেষ সময়ে কবর যিয়ারতের জন্য বিশেষ ফযীলতের বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস নেই। এ বিষয়ে একটি প্রচলিত হাদীস:
مَنْ زَارَ قَبْرَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدِهِمَا كُلَّ جُمْعَةٍ، غُفِرَ لَهُ وَكُتِبَ بَارًّا
‘‘যদি কোনো ব্যক্তি প্রত্যেক শুক্রবারে তার পিতামাতার বা একজনের কবর যিয়ারত করে তবে তার পাপ ক্ষমা করা হবে এবং তাকে পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে।’’
হাদীসটি ইমাম তাবারানী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস সংকলন করেছেন। তাঁরা হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান ইবনু আব্দুর রাহমান-এর সূত্রে সংকলন করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান ইয়াহইয়া ইবনুল আলা আল-বাজালী থেকে, তিনি আব্দুল কারীম ইবনু আবীল মাখারিক থেকে, তিনি মুজাহিদ থেকে, তিনি আবূ হুরাইরা (রা) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। তার উস্তাদ হিসেবে উল্লিখিত ইয়াহইয়া ইবনুল আলা আল-বাজালী পরিত্যক্ত ও মিথ্যায় অভিযুক্ত রাবী। ইমাম আহমাদ, ওকী প্রমুখ মুহাদ্দিস তাকে স্পষ্টভাবে মিথ্যাবাদী ও জালিয়াত বলে অভিহিত করেছেন। তার উস্তাদ হিসেবে উল্লিখিত ‘আব্দুল কারীম’ও অত্যন্ত দুর্বল রাবী হিসেবে পরিচিত। এভাবে আমরা দেখছি যে, হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল। বিশেষত ইয়াহইয়া নামক এ মিথ্যাবাদী রাবীর কারণে হাদীসটি জাল বলে গণ্য হয়।[1]
বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, কবর যিয়াতের সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ‘‘আস-সালামু আলাইকুম দারা কাওমিন মু’মিনীন...’’ বা অনুরূপ বাক্য দ্বারা কবরবাসীকে সালাম প্রদান করতেন। এবং সালামের সাথেই সংক্ষিপ্ত কয়েকটি শব্দে দোয়া করতেন। তিনি সাহাবীগণকে এভাবে সালাম-দোয়া করতে শিক্ষা দিয়েছেন। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, একরাতে তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে হাত তুলে মৃতদের জন্য দোয়া করেন।[1]
এভাবে সালাম ও দোয়া ছাড়া কবর যিয়ারতের সময় কুরআন তিলাওয়াত বা কোনো সূরা পাঠের বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। কোনো কোনো ফকীহ যিয়ারতের পূর্বে আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস ইত্যাদি পাঠ করার কথা বলেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ক জাল হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে:
مَنْ زَارَ قَبْرَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدِهِمَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَرَأَ (عِنْدَهُ) "يس" غُفِرَ لَهُ (بِعَدَدِ كُلِّ آَيَةٍ أَوْ حَرْفٍ)
‘‘যদি কেউ তার পিতামাতা বা উভয়ের একজনের কবর শুক্রবারে যিয়ারত করে এবং (তার কাছে) সূরা ইয়াসীন পাঠ করে, তবে তাকে ক্ষমা করা হবে। (পঠিত আয়াত বা অক্ষরের সংখ্যায় তাকে ক্ষমা করা হবে)।’’
ইবনু আদী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটি সংকলন করেছেন। তাঁরা আমর ইবনু যিয়াদ নামক এক রাবীর সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ ব্যক্তি বলেন, আমাদেরকে ইয়াহইয়া ইবনু সুলাইম বলেন, আমাদেরকে হিশাম ইবনু উরওয়া বলেন, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি আয়েশা (রা) থেকে, তিনি আবূ বাকর (রা) থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে...।
এ হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী ‘আমর ইবনু যিয়াদ’-ক মুহাদ্দিসগণ জালিয়াত ও হাদীস চোর বলে সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। এজন্য ইবনু আদী, যাহাবী, ইবনুল জাওযী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করেছেন। ইমাম সুয়ূতী এ হাদীসকে শুক্রবারে কবর যিয়ারত বিষয়ক হাদীসের সমার্থক বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আব্দুর রাঊফ মুনাবী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর প্রতিবাদ করে বলেন, প্রথমত, উভয় হাদীসের মধ্যে অর্থগত পার্থক্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, উভয় হাদীসের সনদেই জালিয়াত রাবী রয়েছে। জাল হাদীসের ক্ষেত্রে একাধিক হাদীসের সমন্বিত অর্থ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে না।[2]
[2] ইবনু আদী, আল-কামিল ৫/১৫১; ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/৪১৩; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ৫/৩১৬; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/৪৪০; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/৩৭৩; মুনাবী, ফাইদুল কাদীর ৬/১৪১; আলবানী, যায়ীফাহ ১/১২৬-১২৮; যায়ীফুল জামি, পৃ. ৮০৮।
প্রচলিত বিভিন্ন পুস্তকে রয়েছে: ‘‘কবরস্থানে যেয়ে সূরা ইখলাস ১১ বার পাঠ করে মৃত ব্যক্তিগণের রূহের উপর বখশিয়া দিলে সে ব্যক্তি কবরস্থানের সমস্ত কবরবাসীর সম সংখ্যক নেকী লাভ করবে’’। মূলত কথাটি একটি জাল হাদীসের প্রচলিত অনুবাদ। জাল হাদীসটিতে বলা হয়েছে:
مَنْ مَرَّ بِالْمَقَابِرِ فَقَرَأَ (قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ) إِحْدَى وَعِشْرِيْنَ مَرَّةً ثُمَّ وَهَبَ أَجْرَهُ لِلأَمْوَاتِ أُعْطِيَ مِنَ الأَجْرِ بِعَدَدَ الأَمْوَاتِ
‘‘যদি কেউ গোরস্থানের নিকট দিয়ে গমন করার সময় ২১ বার ‘সূরা ইখলাস’ পাঠ করে তার সাওয়াব মৃতগণকে দান করে তবে মৃতগণের সংখ্যার সমপরিমাণ সাওয়াব তাকে প্রদান করা হবে।’’
মুহাদ্দিসগণ একমত যে, হাদীসটি জাল।[1]
সাধারণের মধ্যে প্রচলিত আছে যে, মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে শয়তান তার পিতামাতার রূপ ধরে আগমন করে এবং তাকে বিভিন্ন ওয়াসওয়াসার মাধ্যমে বিপথগামী করার চেষ্টা করে। ইমাম সুয়ূতী, ইবনু হাজার মাক্কী প্রমুখ মুহাদ্দিস উল্লেখ করেছেন যে, এ বিষয়ে কোনো কথা কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি।[1]