কুরআনের অনেক আয়াতে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, শহীদগণ মৃত নন, তারা জীবিত ও রিয্ক পাচ্ছেন। নবীগণের বিষয়ে কুরআন কারীমে কিছু না বলা হলেও সহীহ হাদীসে তাঁদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছে। আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
الأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءُ فِيْ قُبُوْرِهِمْ يُصَلُّون
‘‘নবীগণ তাঁদের কবরের মধ্যে জীবিত, তাঁরা সালাত আদায় করেন।’’ হাদীসটির সনদ সহীহ।[1]
অন্য একটি যয়ীফ সনদের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لاَ يُتْرَكُوْنَ فِيْ قُبُوْرِهْمْ بَعْدِ أَرْبِعِينَ لَيْلَةً وَلَكِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ بَيْنَ يَدَيِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يُنْفَخَ فِيْ الصُّوْرِ
‘‘নবীগণকে ৪০ রাতের পরে তাঁদের কবরের মধ্যে রাখা হয় না; কিন্তু তারা মহান আল্লাহর সামনে সালাতে রত থাকেন; শিংগায় ফুঁক দেয়া পর্যন্ত।’’
হাদীসটির বর্ণনাকারী আহমাদ ইবনু আলী আল-হাসনবী মিথ্যাবাদী ও জালিয়াত বলে পরিচিত। এজন্য কোনো কোনো মুহাদ্দিস একে মাউযূ বলে গণ্য করেছেন। অন্যান্য মুহাদ্দিস এ অর্থের অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে একে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।[2]
বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মি’রাজের রাত্রিতে মূসা (আঃ)-কে নিজ কবরে সালাত আদায় করতে দেখেছেন এবং ঈসা (আঃ)-কেও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। আল্লামা বাইহাকী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ দর্শনকে উপরের হাদীসের সমর্থনকারী বলে গণ্য করেছেন।[3]
কোনো কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি কোনো কোনো পূর্ববর্তী নবীকে হজ্জ পালনরত অবস্থায় দেখেছেন। এ সকল হাদীসকেও কোনো কোনো আলিম নবীগণের মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের নিদর্শন বলে গণ্য করেছেন। ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, এ দর্শনের বিষয়ে কাযী ইয়ায বলেন, এ দর্শনের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে। একটি ব্যাখ্যা হলো, নবীগণ শহীদগণের চেয়েও মর্যাদাবান। কাজেই নবীগণের জন্য ইন্তিকালের পরেও এরূপ ইবাদতের সুযোগ পাওয়া দূরবর্তী কিছু নয়। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, তাঁরা জীবিত অবস্থায় যেভাবে হজ্জ করেছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তার সূরাত দেখানো হয়েছে। কেউ বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ওহীর মাধ্যমে যা জানানো হয়েছে তাকে তিনি দর্শনের সাথে তুলনা করেছেন...।[4]
রাসূলুল্লাহর (ﷺ) ইন্তিকাল পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বিশেষভাবে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلا رَدَّ اللَّهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلامَ
‘‘যখনই যে কেউ আমাকে সালাম করে তখনই আল্লাহ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, যেন আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি।’’[5]
অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন :
مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِيْ سَمِعْتُهُ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ مِنْ بَعِيْدٍ أُعْلِمْتُهُ
‘‘কেউ আমার কবরের কাছে থেকে আমার উপর দরুদ পাঠ করলে আমি শুনতে পাই। আর যদি কেউ দূর থেকে আমার উপর দরুদ পাঠ করে তাহলে আমাকে জানান হয়।’’[6]
হাদীসটির একটি সনদ খুবই দুর্বল হলেও অন্য আরেকটি গ্রহণযোগ্য সনদের কারণে ইবনু হাজার, সাখাবী, সুয়ূতী প্রমুখ মুহাদ্দিস এ সনদটিকে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন।[7]
আউস () বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ .... فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاةِ فَإِنَّ صَلاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلاتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرَمْتَ أَيْ يَقُولُونَ قَدْ بَلِيتَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمْ السَّلام
‘‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার।... কাজেই, এ দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পাঠ করবে, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হবে।’’ সাহাবীগণ বলেন : ‘‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনি তো (কবরের মাটিতে) বিলুপ্ত হয়ে যাবেন, মিশে যাবেন, কী-ভাবে তখন আমাদের দরুদ আপনার নিকট পেশ করা হবে? তিনি বলেন: ‘‘মহান আল্লাহ মাটির জন্য নিষিদ্ধ করেছেন নবীদের দেহ ভক্ষণ করা।’’[8]
আরো অনেক সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে যে, ফিরিশতাগণ সে সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কবর মুবারাকে পৌঁছিয়ে দেবেন। আম্মার বিন ইয়াসির (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত:
إِنَّ اللهَ وَكَّلَ بِقَبْرِيْ مَلَكاً أَعْطَاهُ أَسْمَاعَ الْخَلاَئِقِ، فَلاَ يُصَلِّي عَلَيَّ أَحَدٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِلاَّ أَبْلَغَنِيْ بِاسْمِهِ وَاسْمِ أَبِيْهِ: هَذاَ فُلاَنُ بْنُ فُلاَنٍ قَدْ صَلَّى عَلَيْكَ
‘‘আল্লাহ আমার কবরে একজন ফিরিশতা নিয়োগ করছেন, যাকে তিনি সকল সৃষ্টির শ্রবণশক্তি প্রদান করেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত যখনই কোনো ব্যক্তি আমার উপর সালাত (দরুদ) পাঠ করবে তখনই ঐ ফিরিশতা সালাত পাঠকারীর নাম ও তাঁর পিতার নাম উল্লেখ করে আমাকে তাঁর সালাত পৌঁছে দিয়ে বলবে : অমুকের ছেলে অমুক আপনার উপর সালাত প্রেরণ করেছে।’’
হাদীসটি বাযযার, তাবারানী ও আবুশ শাইখ সংকলন করেছেন। হাদীসের সনদে পরস্পর বর্ণনাকারী রাবীদের মধ্যে দুজন রাবী দুর্বল। এজন্য হাদীসটি যয়ীফ। তবে এ অর্থে আরো কয়েকটি দুর্বল সনদের হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর সামগ্রিক বিচারে নাসিরুদ্দীন আলবানী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ হাদীসটিকে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করছেন।[9]
উপরের হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে ওফাত পরবর্তী জীবন দান করা হয়েছে। এ জীবন বারযাখী জীবন, যা একটি বিশেষ সম্মান ও গায়েবী জগতের একটি অবস্থা। এ বিষয়ে হাদীসে যতটুকু বলা হয়েছে ততটুকুই বলতে হবে। হাদীসের আলোকে আমরা বলব, এ অলৌকিক জীবনে তাঁর সালাত আদায়ের সুযোগ রয়েছে। কেউ সালাম দিলে আল্লাহ তাঁর রূহ মুবারাককে ফিরিয়ে দেন সালামের জবাব দেয়ার জন্য। কবরের নিকট কেউ সালাম দিলে তিনি তা শুনেন, আর দূর থেকে সালাম দিলে তা তাঁর কাছে পৌঁছানো হয়। বাকি বিষয় আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে হবে। উম্মাতের জানার প্রয়োজন নেই বলেই রাসূলুল্লাহ ﷺ বাকি বিষয়গুলো বলেন নি।
কিন্তু এ বিষয়ে অনেক মনগড়া কথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নামে বলা হয়। এ সকল কথা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বলা হয়। মুমিনের উচিত গাইবী বিষয়ে কুরআন-হাদীসের উপর সর্বাত্মকভাবে নির্ভর করা এবং এর অতিরিক্ত কিছুই না বলা। গায়েবী জগৎ সম্পর্কে আমরা শুধুমাত্র ততটুকু কথা বলব, যতটুকু রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে বলে গিয়েছেন। বাকি বিষয় আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে হবে। এর বাইরে কিছু বলার অর্থই হলো: প্রথম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) নামে আন্দাযে মিথ্যা কথা বলা। দ্বিতীয়, আমরা দাবি করব যে, গায়েবী বিষয়ে আমাদের জানা জরুরি এমন কিছু বিষয় না শিখিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ চলে গেছেন, ফলে এখন আমাদের যুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে তা জানতে হচ্ছে।
[2] দাইলামী, আল-ফিরদাউস ১/২২২; ৩/৩৫; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৮৭; সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/২৮৫; আলবানী, যয়ীফুল জামি, পৃ. ২০৫।
[3] বাইহাকী, হায়াতুল আম্বিয়া, পৃ. ৭৭-৮৫।
[4] ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৮৭।
[5] আবূ দাউদ, আস-সুনান ২/২১৮। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।
[6] বাইহাকী, হায়াতুল আম্বিয়া ১০৩-১০৫ পৃ. সাখাবী, আল-কাউলুল বাদী ১৫৪ পৃ.।
[7] সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/২৮৩; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/৩৩৫; দরবেশ হূত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ২১৬; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ২/৪১০; আলবানী, যায়ীফুল জামি, পৃ. ৮১৭, যায়ীফাহ ১/৩৬৬-৩৬৯।
[8] নাসাঈ, আস-সুনান ৩/৯১; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৩৪৫, ৫২৪; আবূ দাউদ, আস-সুনান ১/২৭৫, ২/৮৮।
[9] মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৩৮৮; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ১০/১৬২; সাখাবী, আল-কাওলুল বাদী, পৃ. ১৫৩-১৫৫; আলবানী, আস-সহীহা ৪/৪৩-৪৫, নং ১৫৩০।
এ সকল বানোয়াট কথার মধ্যে অন্যতম হলো, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও নবীগণের ইন্তিকাল পরবর্তী এ বারযাখী জীবনকে পার্থিব বা জাগতিক জীবনের মতই মনে করা। এ ধারণাটি ভুল এবং তা কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীগণের রীতির পরিপন্থী। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও সূফী মুহাম্মাদ ইবনুস সাইয়িদ দরবেশ হূত ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ওফাতের পরের ঘটনাগুলো হাদীসগ্রন্থগুলোতে পাঠ করলেই আমরা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে কখনোই জাগতিক জীবনের অধিকারী বলে মনে করেন নি। খলীফা নির্বাচনের বিষয়, গোসলের বিষয়, দাফনের বিষয়, পরবর্তী সকল ঘটনার মধ্যেই আমরা তা দেখতে পাই। তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর পরামর্শ, দোয়া ও অনুমতি ছাড়া তাঁরা কিছুই করতেন না। কিন্তু তাঁর ওফাতের পরে কখনো কোনো সাহাবী তাঁর কবরে দোয়া, পরামর্শ বা অনুমতি গ্রহণের জন্য আসেন নি। সাহাবীগণ বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন, যুদ্ধবিগ্রহ করেছেন বা বিপদগ্রস্ত হয়েছেন। কখনোই খুলাফায়ে রাশেদীন বা সাহাবীগণ দলবেঁধে বা একাকী রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কবর মুবারাকে যেয়ে তাঁর কাছে দোয়া-পরামর্শ চান নি।
আবু বকর (রা)-এর খিলাফত গ্রহণের পরেই কঠিনতম বিপদে নিপতিত হয় মুসলিম উম্মাহ। একদিকে বাইরের শত্রু, অপরদিকে আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, সর্বোপরি প্রায় আধা ডজন ভন্ড নবী। মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের সংকট। কিন্তু একটি দিনের জন্যও আবু বকর (রা) সাহাবীগণকে নিয়ে বা নিজে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কবরের নিকট যেয়ে তাঁর কাছে দোয়া চান নি। এমনকি আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্যও কবর শরীফে সমবেত হয়ে কোনো অনুষ্ঠান করেন নি। কী কঠিন বিপদ ও যুদ্ধের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন আলী (রা)! অথচ তাঁর সবচেয়ে আপনজন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কবর শরীফে যেয়ে তাঁর কাছে দোয়া চান নি বা আল্লাহর কাছে দোয়ার জন্য কবর শরীফে কোনো অনুষ্ঠান করেন নি।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইন্তিকালের পরে ফাতিমা, আলী ও আববাস (রা) খলীফা আবূ বাক্র (রা)-এর কাছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার চেয়েছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে অনেক মতভেদ ও মনোমালিন্য হয়েছে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশার (রা) সাথে আমীরুল মুমিনীন আলীর (রা) কঠিন যুদ্ধ হয়েছে, আমীর মুয়াবিয়ার (রা) সাথেও তাঁর যুদ্ধ হয়েছে। এসকল যুদ্ধে অনেক সাহাবীসহ অসংখ্য মুসলিম নিহত হয়েছেন। কিন্তু এসকল কঠিন সময়ে তাঁদের কেউ কখনো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে পরামর্শ চান নি। তিনি নিজেও কখনো এসকল কঠিন মুহূর্তে তাঁর কন্যা, জামাতা, চাচা, খলীফা কাউকে কোনো পরামর্শ দেন নি। এমনকি কারো কাছে রূহানীভাবেও প্রকাশিত হয়ে কিছু বলেন নি। আরো লক্ষণীয় যে, প্রথম শতাব্দীগুলোর জালিয়াতগণ এ সকল মহান সাহাবীর পক্ষে ও বিপক্ষে অনেক জাল হাদীস বানিয়েছে, কিন্তু কোনো জালিয়াতও প্রচার করে নি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওফাতের পরে কবর শরীফ থেকে বা সাহাবীগণের মাজলিসে এসে অমুক সাহাবীর পক্ষে বা বিপক্ষে যুদ্ধ করতে বা কর্ম করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[1]
আব্দুল হাই লাখনবী বলেন, প্রচলিত জাল ও মিথ্যাগুলোর একটি:
إِنَّهُ ﷺ يَسْمَعُ صَلاَةَ مَنْ يُصَلِّيْ عَلَيْهِ وَإِنْ كَانَ نَائِياً مِنْ قَبْرِهِ بِلاَ وَاسِطَةٍ
‘‘যদি কেউ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর দরুদ পাঠ করে, তবে সে ব্যক্তি যত দূরেই থাক, তিনি কারো মাধ্যম ছাড়াই তা শুনতে পান।’’[1]
আব্দুল হাই লাখনবী বলেন: প্রচলিত আরেকটি জাল ও মিথ্যা কথা:
يَحْضُرُ ﷺ بِنَفْسِهِ فِيْ مَجَالِسِ وَعْظِ مَوْلِدِهِ عِنْدَ ذِكْرِ مَوْلِدِهِ وَبَنَوْا عَلَيْهِ الْقِيَامَ عِنْدَ ذِكْرِ الْمَوْلِدِ تَعْظِيْماً وَإِكْرَاماً
‘‘মাওলিদের ওয়াযের মাজলিসে তাঁর মাওলিদ বা জন্মের কথা উল্লেখের সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত হন। এ কথার উপরে তারা তাঁর মাওলিদের বা জন্মের কথার সময় সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য কিয়াম বা দাঁড়ানোর প্রচলন করেছে।’’[1]
উপরের দুটি কথাই সনদহীন, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা কথা। উপরন্তু এ কথা উপরে আলোচিত সহীহ হাদীসগুলোর সুস্পষ্ট বিরোধী।