হাদীসের নামে জালিয়াতি শুভাশুভ, সাজসজ্জা, পানাহার ও বিবিধ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

রাসূলুল্লাহ () কখনো লাল দস্তরখান ব্যবহার করেছেন বা করতে উৎসাহ দিয়েছেন বলে কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীসে দেখা যায় না। এ বিষয়ে অনেক বানোয়াট কথা প্রচলিত। যেমন: ‘‘হযরত রাসূল মকবুল () ... লাল দস্তরখান ব্যবহার করা হতো। ... যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানে আহার করে তার প্রতি লোকমার প্রতিদানে একশ’ করে ছাওয়াব পাবে এবং বেহেস্তের ১০০ টি দরজা তার জন্য নির্ধারিত হবে। সে ব্যক্তি বেহেস্তের মধ্যে সব সময়ই ঈসা (আঃ) ও অন্য নবীদের হাজার হাজার সালাম ও আশীর্বাদ লাভ করবে....। এরপর হযরত কসম খেয়ে বর্ণনা করলেন, কসম সেই খোদার যার হাতে নিহিত আছে আমার প্রাণ; যে ব্যক্তি লাল দস্তরখানে রুটি খাবে সে এক ওমরা হজ্বের ছাওয়াব পাবে এবং এক হাজার ক্ষুধার্থকে পেট ভরে আহার করানোর ছাওয়াব পাবে। সে ব্যক্তি এত বেশী ছাওয়াব লাভ করবে যেন আমার উম্মতের মধ্যে হাজার বন্দীকে মুক্ত করালেন...।’’ এভাবে আরো অনেক আজগুবি, উদ্ভট ও বানোয়াট কাহিনী ও সাওয়াবের ফর্দ দেয়া হয়েছে।[1]

উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ () দস্তরখান ব্যবহার করতেন। তবে তা ব্যবহার করার কোনো নির্দেশ বা উৎসাহ তাঁর থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয় নি। দস্তরখান ছাড়া খাদ্যগ্রহণের বিষয়ে তিনি কোনো আপত্তিও করেন নি। আমরা দস্তরখান বিষয়ে যতটুকু গুরুত্ব প্রদান করি, অনেক ফরয বা হারামের বিষয়ে সেরূপ গুরুত্ব প্রদান করি না। এছাড়া রাসূলুল্লাহ () দস্তরখান ব্যবহার করতেন বলতে আমরা বুঝি যে, তিনি আমাদের মত দস্তরখানের উপর থালা, বাটি ইত্যাদি রেখে খানা খেতেন। ধারণাটি সঠিক নয়। তাঁর সময়ে চামড়ার দস্তরখান বা ‘সুফরা’ ব্যবহার করা হতো এবং কোনো থালা, বাটি, গামলা ইত্যাদি ছাড়াই সরাসরি ‘সুফরা’র উপরেই সরাসরি খেজুর, পনির, ঘি ইত্যাদি খাদ্য রেখে খাওয়া হতো।[2]

[1] শায়খ মুঈন উদ্দীন চিশতী, আনিসুল আরওয়াহ, পৃ. ৩০-৩১।

[2] বুখারী, আস-সহীহ ৫/২০৫৯।