হাদীসের নামে জালিয়াতি মৃত্যু, জানাযা, দুআ, যিকর ইত্যাদি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, কবর যিয়াতের সময় রাসূলুল্লাহ () ‘‘আস-সালামু আলাইকুম দারা কাওমিন মু’মিনীন...’’ বা অনুরূপ বাক্য দ্বারা কবরবাসীকে সালাম প্রদান করতেন। এবং সালামের সাথেই সংক্ষিপ্ত কয়েকটি শব্দে দোয়া করতেন। তিনি সাহাবীগণকে এভাবে সালাম-দোয়া করতে শিক্ষা দিয়েছেন। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, একরাতে তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে হাত তুলে মৃতদের জন্য দোয়া করেন।[1]

এভাবে সালাম ও দোয়া ছাড়া কবর যিয়ারতের সময় কুরআন তিলাওয়াত বা কোনো সূরা পাঠের বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। কোনো কোনো ফকীহ যিয়ারতের পূর্বে আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস ইত্যাদি পাঠ করার কথা বলেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ক জাল হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে:

مَنْ زَارَ قَبْرَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدِهِمَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَرَأَ (عِنْدَهُ) "يس" غُفِرَ لَهُ (بِعَدَدِ كُلِّ آَيَةٍ أَوْ حَرْفٍ)

‘‘যদি কেউ তার পিতামাতা বা উভয়ের একজনের কবর শুক্রবারে যিয়ারত করে এবং (তার কাছে) সূরা ইয়াসীন পাঠ করে, তবে তাকে ক্ষমা করা হবে। (পঠিত আয়াত বা অক্ষরের সংখ্যায় তাকে ক্ষমা করা হবে)।’’

ইবনু আদী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটি সংকলন করেছেন। তাঁরা আমর ইবনু যিয়াদ নামক এক রাবীর সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ ব্যক্তি বলেন, আমাদেরকে ইয়াহইয়া ইবনু সুলাইম বলেন, আমাদেরকে হিশাম ইবনু উরওয়া বলেন, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি আয়েশা (রা) থেকে, তিনি আবূ বাকর (রা) থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ () থেকে...।

এ হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী ‘আমর ইবনু যিয়াদ’-ক মুহাদ্দিসগণ জালিয়াত ও হাদীস চোর বলে সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। এজন্য ইবনু আদী, যাহাবী, ইবনুল জাওযী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করেছেন। ইমাম সুয়ূতী এ হাদীসকে শুক্রবারে কবর যিয়ারত বিষয়ক হাদীসের সমার্থক বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আব্দুর রাঊফ মুনাবী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর প্রতিবাদ করে বলেন, প্রথমত, উভয় হাদীসের মধ্যে অর্থগত পার্থক্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, উভয় হাদীসের সনদেই জালিয়াত রাবী রয়েছে। জাল হাদীসের ক্ষেত্রে একাধিক হাদীসের সমন্বিত অর্থ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে না।[2]

[1] বিস্তারিত দেখুন: লেখকের অন্য বই, এহইয়াউস সুনান, পৃ. ৩৫৪-৩৫৫।

[2] ইবনু আদী, আল-কামিল ৫/১৫১; ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/৪১৩; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ৫/৩১৬; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/৪৪০; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/৩৭৩; মুনাবী, ফাইদুল কাদীর ৬/১৪১; আলবানী, যায়ীফাহ ১/১২৬-১২৮; যায়ীফুল জামি, পৃ. ৮০৮।