‘সামা’ (সেমা) অর্থ ‘শ্রবণ’’। সাহাবী-তাবিয়ীগণের যুগে ‘সামা’ বলতে কুরআন শ্রবণ ও রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনী ও বাণী শ্রবণকেই বোঝান হতো। এগুলোই তাঁদের মনে আল্লাহ-প্রেম ও নবী-প্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করত। কোনো মুসলিম কখনই আল্লাহর প্রেমের জন্য গান শুনতেন না। সমাজের অধার্মিক মানুষদের মধ্যে বিনোদন হিসাবে গানবাজনার প্রচলন ছিল, কিন্তু আলিমগণ তা হারাম জানতেন। ২/১ জন বিনোদন হিসাবে একে জায়েয বলেছেন; কিন্তু কখনই এসকল কর্ম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে গণ্য হয় নি।
ক্রমান্বয়ে ‘সামা’ বলতে ‘গান-বাজনা’ বুঝানো হতে থাকে। আর গানের আবেশে উদ্বেলিত হওয়া ও নাচানাচি করাকে ‘ওয়াজদ’ অর্থাৎ ‘আবেগ, উত্তেজনা, উন্মত্ততা (passion, ardor) বলা হতো। এ ‘সামা’ বা সঙ্গীত ও ‘ওয়াজদ’ অর্থাৎ গানের আবেশে তন্ময় হয়ে নাচানাচি বা উন্মত্ততা ৫ম হিজরী শতাব্দী থেকে সূফী সাধকদের কর্মকান্ডের অন্যতম অংশ হয়ে যায়। সামা ব্যতিরেকে কোনো সূফী খানকা বা সূফী দরবার কল্পনা করা যেত না। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী (৫০৫হি) ও অন্য কোনো কোনো আলিম সূফীগণের প্রতি ভক্তির কারণে এরূপ গান বাজনা ও নর্তন কুর্দনকে জায়েয, শরীয়ত-সঙ্গত ও বিদ‘আতে হাসানা বলে দাবি করেছেন।[1]
এদিকে যখন সামা-সঙ্গীতের ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেল নেককার মানুষদের মাঝে তখন জালিয়াতগণ তাদের মেধা খরচের একটি বড় ক্ষেত্র পেয়ে গেল। তারা সামা, ওয়াজদ ইত্যাদির পক্ষে বিভিন্ন হাদীস বানিয়ে প্রচার করে। যেমন বলা হয়েছে: ‘‘হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন:
اَلسَّمَاعُ لِقَوْمٍ فَرْضٌ وَلِقَوْمٍ سُنَّةٌ وَلِقَوْمٍ بِدْعَةٌ، وَالْفَرْضُ لِلْخَوَاصِّ، وَالسُّنَّةُ لِلْمُحِبِّيْنَ وَالْبِدْعَةُ لِلْغَافِلِيْنَ
‘‘সামা কারো জন্য ফরয, কারো জন্য সুন্নাত এবং কারো জন্য বিদ‘আত। খাস লোকদের জন্য ফরয, প্রেমিকদের জন্য সুন্নাত এবং গাফিলদের জন্য বিদআত।’’[2]
এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে বানানো একটি ভিত্তিহীন মিথ্যা কথা, যা কোনো যয়ীফ বা জাল সনদেও বর্ণিত হয় নি। এছাড়া ইসলামী পরিভাষা বিষয়ে যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে তিনি জানেন যে, ফরয, সুন্নাত, বিদআত ইত্যাদি পরিভাষার এরূপ ব্যবহার কখনোই রাসূলুল্লাহ ﷺ করেন নি।
[2] সিররুল আসরার, পৃ. ৮৮-৮৯।