হাদীসের নামে জালিয়াতি বেলায়াত, আওলিয়া ও ইলম বিষয়ক ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৭. ওলী-আল্লাহদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত সবই হারাম!

উপরের অর্থেই আরেকটি বানোয়াট কথা:

اَلدُّنْيَا حَرَامٌ عَلَى أَهْلِ الآخِرَةِ، وَالآخِرَةُ حَرَامٌ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا، وَالدُّنْيَا وَالآخِرَةُ حَرَامٌ عَلَى أَهْلِ اللهِ

‘‘আখিরাত-ওয়ালাদের জন্য দুনিয়া হারাম আর দুনিয়া-ওয়ালাদের জন্য আখিরাত হারাম। আর আল্লাহ-ওয়ালাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই হারাম।’’ (অর্থাৎ উভয়কে হারাম না করে আল্লাহওয়ালা হওয়া যায় না)

দাইলামী (৫০৯ হি) ‘ফিরদাউস’-এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। তাঁর পুত্র আবূ মানসূর দাইলামী (৫৫৮হি) তার ‘মুসনাদুল ফিরদাউস’ গ্রন্থে এর একটি সনদ উল্লেখ করেছেন। সনদের অধিকাংশ রাবীই একেবারে অজ্ঞাত পরিচয়। অন্যরা দুর্বল। এজন্য হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করা হয়েছে।[1]

এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, (১) আখিরাত-ওয়ালাদের জন্য দুনিয়া হারাম এবং (২) আল্লাহ-ওয়ালাদের জন্য দুনিয়া আখিরাত উভয়ই হারাম। এ কথা দুটি কুরআন কারীম ও অগণিত সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। মহান আল্লাহ ঠিক এর বিপরীত কথা বলেছেন। তিনি তাঁর প্রিয়তম রাসূল ও শ্রেষ্ঠতম আল্লাহ-ওয়ালা সাহাবীগণসহ সকল আল্লাহওয়ালা ও আখিরাত-ওয়ালাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সৌন্দর্য ও আনন্দ হারাম করেন নি বলে ঘোষণা করেছেন: ‘‘আপনি বলুন: আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যে সৌন্দর্য ও পবিত্র আনন্দ ও মজার বস্তগুলো বের (উদ্ভাবন) করেছেন তা হারাম বা নিষিদ্ধ করলো কে? আপনি বলুন: সেগুলো মুমিনদের জন্য পার্থিব জীবনে এবং কিয়ামতে শুধুমাত্র তাদের জন্যই।’’[2]

এরূপ একটি জাল কথা: ‘‘ঐ ব্যক্তি আমার প্রিয়তম যে আমাকেই চায় শাস্তির ভয়ে কিংবা পুরস্কারের আশায় নহে।... তাহা অপেক্ষা অপরাধী কে, যে দোজখের ভয়ে কিংবা বেহেশতের আশায় আমাকে অর্চ্চনা করে..।’’[3]

কুরআনে ‘আল্লাহওয়ালা’ ও ‘আখেরাতওয়ালা’দিগকে দুনিয়া ও আখিরাতের নেয়ামত প্রার্থনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সর্বদা এভাবে দোয়া করতেন। আর আখিরাতের নেয়ামত তো আল্লাহওয়ালা ও আখেরাতওয়ালাদের মূল কাম্য। আল্লাহওয়ালা হতে হলে, জান্নাতের নিয়ামতের আশা আকাঙ্খা বর্জন করতে হবে, এ ধারণাটি কুরআন ও হাদীসের সুষ্পষ্ট বিরোধী। কোনো কোনো নেককার মানুষের মনে এরূপ ধারণা আসতে পারে। তবে রাসূলুল্লাহ ও সাহাবীগণ সর্বদা জান্নাতের নিয়ামত চেয়েছেন, সাহাবীগণকে বিভিন্ন নিয়ামতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সর্বোপরি মহান আল্লাহ কুরআন কারীমে সর্বোচ্চ মর্যাদার নবী-ওলীগণ এবং সাধারণ ওলীগণ সকলের জন্য জান্নাতের নিয়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন।

[1] দাইলামী, আল-ফিরদাউস ২/২৩০; আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/৪৯৩; আলবানী, যায়ীফাহ ১/১০৫-১০৬।

[2] সূরা (৭) আ’রাফ: ৩১-৩২ আয়াত।

[3] আলহাজ্জ খান বাহাদুর আহছানউল্লা (ই. ফা. বা. ২য় সংস্করণ ২০১১) পৃষ্ঠা ৬৯।