হাদীসের নামে জালিয়াতি আহল বাইত, সাহাবী-তাবিয়ী ও উম্মাত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

মুসলিম সমাজে অত্যন্ত প্রচলিত একটি ‘হাদীস’:

أَصْحَابِيْ كَالنُّجُوْمِ بِأَيِّهِمْ اقْتَدَيْتُمْ اهْتَدَيْتُمْ

‘‘আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রতুল্য, তাঁদের যে কাউকে অনুসরণ করলেই তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।’’

হাদীসটি আমাদের মধ্যে এত প্রসিদ্ধ যে, সাধারণ একজন মুসলিম স্বভাবতই চিন্তা করেন যে, হাদীসটি বুখারী, মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তা ও সকল হাদীগ্রন্থেই সংকলিত। অথচ প্রকৃত বিষয় হলো, সিহাহ সিত্তা তো দূরের কথা অন্য কোনো প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এ হাদীসটি নেই। যয়ীফ ও জালিয়াত রাবীগণের জীবনী গ্রন্থে, কয়েকটি ফিকহী গ্রন্থে ও অপ্রসিদ্ধ দুই একটি হাদীসের গ্রন্থে এ বাক্যটি এবং এ অর্থের একাধিক বাক্য একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক সনদেরই একাধিক রাবী জালিয়াত হিসেবে প্রসিদ্ধ অথবা অত্যন্ত দুর্বল এবং মিথ্যা বলায় অভিযুক্ত। এজন্য আবূ বাকর বায্যার আহমাদ ইবনু আমর (২৯২হি), ইবনু হায্ম যাহিরী আলী ইবনু আহমাদ (৪৫৬), যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ (৭৪৮হি) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ হাদীসটিকে জাল ও ভিত্তিহীন বলে গণ্য করেছেন।[1]

আশ্চর্যের বিষয় হলো, সাহাবীগণের মর্যাদা প্রমাণের জন্য আমরা এ ধরনের অনির্ভরযোগ্য হাদীসের উপর নির্ভর করি, অথচ কুরআনে অনেক স্থানে সুস্পষ্টভাবে তাঁদের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁদের মর্যাদার বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীস প্রসিদ্ধ হাদীসের গ্রন্থসমূহে সংকলিত রয়েছে।

[1] আবদ ইবনু হুমাইদ, আল-মুসনাদ, পৃ. ২৫০; ইবনু হায্ম, আল-ইহকাম ৬/২৪৪; ইবনুল মুলাক্কিন (৮০৪হি), খুলাসাতুল বাদরিল মুনীর ১/২৫০; যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ২/১৪১-১৪২, ৩৭৯, ৮/৭৩; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ২/১৩৭; সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৯-৫০; আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১৪৭; ইবন আবিল ইজ্জ হানাফী, শারহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যাহ পৃ: ৪৬৭-৪৭১, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিস যাঈফাহ ১/১৪৪-১৫২, নং ৫৮-৬১।