কুরআনে বলা হয়েছে যে, আইঊব (আঃ) বিপদগ্রস্থ হয়ে সবর করেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন এবং তাকে বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করেন। তাঁকে তাঁর সম্পদ ও সন্তান ফিরিয়ে দেন।[1]

আইঊব (আঃ)-এর বালা-মুসিবত বা বিপদাপদের প্রকৃতি, ধরন, বিবরণ, সময়কাল, তাঁর স্ত্রীর নাম, আত্মীয় স্বজনের নাম ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো বর্ণনা কুরআন কারীম বা সহীহ হাদীসে নেই। এ বিষয়ক যা কিছু বলা হয় সবই মূলত ইসরাঈলীয় রেওয়ায়াত। অধিকাংশ বিবরণের মধ্যে লাগামহীন কাল্পনিক বর্ণনা রয়েছে। বিভিন্ন মুফাস্সির এ বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। বিশেষত, ওয়াহ্ব ইবনু মুনাবিবহ, কা’ব আল-আহবার প্রমুখ তাবিয়ী আলিম, যারা ইহূদী ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইহূদীদের ধর্মগ্রন্থ ও তাদের মধ্যে প্রচলিত কাহিনী সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন তাঁরাই এ সকল গল্প ‘গল্প’ হিসেবে বলেছেন।[2]

এগুলোকে গল্প হিসাবে বলা যেতে পারে, কিন্তু কখনোই সত্য মনে করা যাবে না। বিশেষত এ সকল গল্পে আইয়ূব (আঃ)-এর রোগব্যাধির এমন কাল্পনিক বিবরণ রয়েছে যা একজন নবীর মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কোনো সহীহ হাদীসে বর্ণিত হলে আমরা তা গ্রহণ করতাম ও ব্যাখ্যা করতাম। কিন্তু যেহেতু কোনো সহীহ হাদীসে এ বিষয়ে কিছুই বর্ণিত হয় নি এবং এগুলো ইসরাঈলীয় বর্ণনা ও গল্পকারদের গল্প, সেহেতু এগুলো পরিত্যাজ্য। এ বিষয়ে দরবেশ হূত (১২৭৬ হি) বলেন, ‘‘আইয়ূব (আঃ)-এর গল্পে বলা হয় যে, আল্লাহ তাঁর উপরে ইবলিসকে ক্ষমতাবান করে দেন। তখন ইবলিস তাঁর দেহের মধ্যে ফুঁক দেয়। এতে তাঁর দেহ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়। এমনকি তার শরীরের মাংস পচে যায় ও পোকা পড়তে থাকে ... ইত্যাদি। এগুলো গল্পকাররা বলেন এবং কোনো কোনো মুফাস্সির উল্লেখ করেছেন। ... এ সকল কথা সবই নির্ভেজাল জাল, মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। যে-ই একথা বলুন বা উদ্ধৃত করুন না কেন, তাঁর মর্যাদা যত বেশিই হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না। এ সকল কথা আল্লাহর কিতাবে বলা হয় নি এবং তাঁর রাসূলের () কোনো হাদীসেও তা বর্ণিত হয় নি। এমনকি কোনো যয়ীফ বা বাতিল সনদের হাদীসেও তা বর্ণিত হয় নি। এ সবই সনদ বিহীন বর্ননা..।’’[3]

[1] সূরা (২১) আম্বিয়া: ৮৩-৮৪ আয়াত; সূরা (৩৮) সাদ: ৪১-৪৪ আয়াত।

[2] ইবনু কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া ১/২৩০-২৩৬; আবূ শুহবাহ, আল-ইসরাইলিয়্যাত, পৃ. ২৭৫-২৮২।

[3] দরবেশ হূত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ২৮৪।