কুরআন কারীমে দু স্থানে ‘ইদরীস’ (আঃ)-এর উল্লেখ রয়েছে। একস্থানে এরশাদ করা হয়েছে: ‘‘এবং ইসমাঈল, এবং ইদরীস এবং যুল কিফ্ল সকলেই ধৈর্যশীলগণের অন্তর্ভুক্ত।’’[1] অন্যত্র বলা হয়েছে:
وَاذْكُـرْ فِي الْكِـتَابِ إِدْرِيسَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَبِيًّا وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا
‘‘এবং স্মরণ কর এ কিতাবের মধ্যে ইদরিসের কথা, সে ছিল সত্যনিষ্ঠ, নবী এবং আমি তাকে উন্নীত করেছিলাম উচ্চ স্থানে (মর্যাদায়)।’’[2]
হাদীস শরীফেও ইদরীস (আঃ) সম্পর্কে তেমন কোনো কিছু উল্লেখ করা হয় নি। তাঁর জন্ম, বংশ, পরিচয়, কর্মস্থল, ইত্যাদি সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় সবই ইসরাঈলীয় বর্ণনা বা গল্পকারদের বানোয়াট কাহিনী। বিশেষ করে আমাদের সমাজে প্রসিদ্ধ আছে যে, চার জন নবী চিরজীবী: খিযির ও ইলিয়াস (আঃ) পৃথিবীতে এবং ইদরীস ও ঈসা (আঃ) আসমানে। প্রচলিত আছে যে, ইদরীস (আঃ)-কে জীবিত অবস্থায় সশরীরের ৪র্থ বা ৬ষ্ঠ আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সেখানে জীবিত আছেন অথবা সেখানে তাঁর মৃত্যু হয় এবং এরপর আবার জীবিত হন....। এ সবই ইসরাঈলীয় রেওয়ায়াত। ঈসা (আঃ) ছাড়া অন্য কোনো নবীর জীবিত থাকা, জীবিত অবস্থায় আসমানে গমন ইত্যাদি কোনো কথা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কোনো সহীহ বা যয়ীফ সনদে বর্ণিত হয় নি।
আল্লাহ তাঁকে উচ্চ স্থানে উন্নীত করেছেন অর্থ তাঁকে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেছেন। যে মর্যাদার একটি বিশেষ দিক হলো আল্লাহ ইন্তেকালের পরে তাঁকে অন্য কয়েকজন মহান নবী-রাসূলের সাথে রূহানীভাবে আসমানে স্থান দান করেছেন। সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মি’রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আসমানে ৮ জন নবীর সাথে সাক্ষাত করেন। ১ম আসমানে আদম, ২য় আসমানে ইয়াহইয়া ও ঈসা, ৩য় আসমানে ইউসূফ, ৪র্থ আসমানে ইদরীস, পঞ্চম আসমানে হারূন, ৬ষ্ঠ আসমানে মূসা ও ৭ম আসমানে ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়।[3] শুধু ঈসা (আঃ) ব্যতীত অন্য সকল নবীকে এ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে স্বাভাবিক মৃত্যুর পরে।[4]
[2] সূরা (১৯) মরিয়ম: ৫৬-৫৭ আয়াত।
[3] বুখারী, আস-সহীহ ১/১৩৬, ৩/১১৭৩, ১২১৬-১২১৭, ১৪১০-১৪১১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৪৮-১৫০।
[4] ইবনু কাসীর, কাসাসুল আমবিয়া ১/ ৬১-৬২; দরবেশ হূত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ২৫।