হাদীসের নামে জালিয়াতি ৯. জাল হাদীস চিহ্নিতকরণে বাঙালী আলিমগণ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

রুহুল আমিন লিখেন: ‘‘তিনি (তরিকতে রসুল-এর লেখক) উক্ত পুস্তকের ৬ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত কথাটি হাদিস বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন: (من لا شيخ له فشيخه الشيطان)- ‘‘যাহার পীর নাই তাহার পীর শয়তান’’। কিন্তু লেখক ইহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসে দেখিয়াছেন? ইহার সনদ কি? যতক্ষণ তিনি এই হাদিসের সনদ পেশ করিতে না পারেন ততক্ষণ উহা জাল হাদিস বলিয়া গণ্য হইবে।’’[1]

তিনি আরো বলেন: ‘‘কোরাণ, হাদিস, এলমে তাছাওয়ফে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ লেখক (وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ) (তাঁর দিকে অসীলা সন্ধান কর) আয়তটির অর্থে লিখিয়াছেন যে, পীর ধরা ফরজে আয়েন, যে ব্যক্তি পীরের নিকট মুরিদ না হইয়া মরিয়া যায় সে নিশ্চয় কাফের হইয়া মরে। পাঠক, পীর-শ্রেঠ মাওলানা শাহ অলিউল্লাহ দেহলবী (রহ) কওলোল জমিলের ১৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন (فاعلم أن البيعة سنة ...), অর্থ্যাৎ মুরিদ হওয়া সুন্নত । আরও লিখিয়াছেন (كان كالإجماع على أنها ليست بواجبة), অর্থ্যাৎ ‘‘মুরিদ হওয়া ওয়াজেব নহে, সুন্নত বলিয়া সমস্ত পীরও এমামগণের এজমা হইয়াছে।’’ আরও আছে যে (ولم ينكر أحد من الأئمة على تركها...), অর্থৎ দীন এসলামের এমামগণ মুরিদ না হওয়া ব্যক্তির উপর এনকার (আপত্তি) করেন নাই।... যে আয়াতে অছিলা চেষ্টা করার হুকুম করা হইয়াছে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তফসিরে বয়জবি ২/১৪৮ পৃষ্ঠায়, কবিরের ৩/৩৩৯ পৃষ্ঠায়, এবনে জরির ৬/১৩১/১৩২ পৃষ্ঠায়, মায়ালেম ও খাজেনের ২৩৯ পৃষ্ঠায় ও তফসিরে মাদারেকের ১/২১ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, ‘অছিলা’ শব্দের অর্থ ‘এবাদত, কোরবত ও নেকির কার্য্যকলাপ’। আয়তের মর্ম্ম এই যে, তোমরা এবাদতের কার্য্যগুলি কর। ইহাতে ‘পীর অনুসন্ধান’ কিরূপে সাব্যস্ত হইবে? ... দ্বিতীয়, যাহার পীর নাই, তাহার পীর শয়তান হইবে, লেখক ইহাকে হাদিস বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু ইহা হাদিস নহে। তবে লেখকের পীর গ্রহণ ফরজ হওয়ার দাবী ইহাতে কিরুপে সাব্যস্ত হইবে? ...’’[2]

[1] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, প্রাগুক্ত, পৃ. ২-৩।

[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাগমারির ফকিরের ধোকাভঞ্জন, পৃ. ৫১-৫৩।