পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি যে, মিথ্যা ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত উভয় প্রকারের হতে পারে। উভয় ধরনের মিথ্যা বা ভুল থেকে হাদীসকে রক্ষার জন্য সাহাবায়ে কেরাম কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তাঁদের যুগে কোনো সাহাবী মিথ্যা বলতেন না এবং নির্ভুলভাবে হাদীস বলার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি করতেন না। তবুও তাঁরা হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর কোনো ভুল হতে পারে সন্দেহ হলেই তাঁর বর্ণনাকে তুলনামূলক নিরীক্ষার (معارضة ومقابلة وموازنة) মাধ্যমে যাচাই করে তা গ্রহণ করতেন। তুলনামূলক নিরীক্ষার প্রক্রিয়া ছিল বিভিন্ন ধরনের:
১. বর্ণিত হাদীস অর্থাৎ বাণী, নির্দেশ বা বর্ণনাকে মূল নির্দেশদাতার নিকট পেশ করে তার যথার্থতা ও নির্ভুলতা (Accuracy) নির্ণয় করা।
২. বর্ণিত বাণী, নির্দেশ বা বর্ণনা (হাদীস)-কে অন্য কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তির বর্ণনার সাথে মিলিয়ে এর যথার্থতা ও নির্ভুলতা নির্ণয় করা।
৩. বর্ণিত বাণী, নির্দেশ বা বর্ণনা (হাদীস)-কে বর্ণনাকারীর বিভিন্ন সময়ের বর্ণনার সাথে মিলিয়ে এর যথার্থতা ও নির্ভুলতা নির্ণয় করা।
৪. বর্ণিত হাদীসটির বিষয়ে বর্ণনাকারীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে বা শপথ করিয়ে বর্ণনাটির যথার্থতা বা নির্ভুলতা নির্ধারণ করা।
৫. বর্ণিত বাণী, নির্দেশ বা হাদীসটির অর্থ কুরআন ও হাদীসের প্রসিদ্ধ অর্থ ও নির্দেশের সাথে মিলিয়ে দেখা।
এ সকল নিরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা হাদীস বর্ণনাকারী হাদীসটি সঠিকভাবে মুখস্থ রাখতে ও বর্ণনা করতে পেরেছে কিনা তা যাচাই করতেন। হাদীসের পরিভাষায় একে ‘ضبط’ বিচার বলা হয়। বাংলায় আমরা (ضبط) অর্থ ‘বর্ণনার নির্ভুলতা’ বা ‘নির্ভুল বর্ণনার ক্ষমতা’ বলতে পারি।
সাহাবীগণের যুগ থেকে পরবর্তী সকল যুগে হাদীসের ‘বর্ণনার নির্ভুলতা’ ও বিশুদ্ধতা নির্ধারণে এ সকল পদ্ধতিতে নিরীক্ষাই ছিল মুহাদ্দিসগণের মূল পদ্ধতি। আমরা জানি যে, বিশ্বের সকল দেশের সকল বিচারালয়ে প্রদত্ত সাক্ষ্যের যর্থার্থতা ও নির্ভুলতা নির্ণয়ের জন্যও এ পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। কোনো বর্ণনা বা সাক্ষ্যের বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতা নির্ণয়ের জন্য এটিই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। আমরা এখানে সাহাবীগণের যুগের কিছু উদাহরণ আলোচনা করব।