ব্যাংকের সুদ কি হালাল সূচি ও বিবরন শাইখ মুশ্তাক আহমাদ কারীমী ১ টি

সূদকে জায়েয করার মানসে একটি যুক্তি এও পেশ করা হয় যে, ঋণ দিয়ে সূদ নেওয়ার কারবারটা ঠিক ‘বাইএ সালাম’ (THE PREPAYMENT) দাদন ব্যবসা বা পূর্বে মূল্য আদায় করে পরে পণ্য নেবার চুক্তি-ব্যবসা) এর মত।

কারণ এ কারবারে উভয় পক্ষের লাভ বর্তমান। আর তা এইভাবে যে, ঋণগ্রহীতা সূদের উপর অর্থ সংগ্রহ করে; যাতে সে নিজের অভাব ও প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। ওদিকে ঋণদাতা নিজের মূলধন অপেক্ষা বেশী টাকা গ্রহণ করে থাকে, আর তা হল সেই বিলম্ব দেওয়ার বিনিময়ে যা সে ঋণগ্রহীতাকে ঋণ-পরিশোধে দিয়ে থাকে। আর এরূপই হয়ে থাকে বাইএ সালামে।

কারণ, বাইএ সালামে তুলনামূলক কম মূল্য অগ্রিম আদায় করা হয়ে থাকে। যাতে পরে সেই আগাম কেনা ফসল দ্বারা অধিক মুনাফা লাভ করা সম্ভব হয়। আর এ ধরনের অগ্রিম চুক্তি ব্যবসাকে ইসলাম বৈধ নিরূপণ করেছে। এই ব্যবসার উপরেই সূদভিত্তিক কারবারকে কিয়াস করে ব্যাংকের সূদকে হালাল বলা হচ্ছে। কারণ উভয় প্রকার কারবারেই এই ধরনের লেনদেন ও অর্থ বিদ্যমান।

উক্ত যুক্তিপেশকারীদের যুক্তির জবাব এই যে, ‘বাইএ সালাম’ ও সূদভিত্তিক ঋণের মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। বিধায় এককে অপরের উপর কিয়াস (অনুমিতি) করা আদৌ সঠিক নয়। উভয় কারবারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নিম্নরূপঃ-

ক- ‘সালাম’ (THE PREPAYMENT) দাদন ব্যবসা বা পূর্বে মূল্য আদায় করে পরে পণ্য নেবার চুক্তি ব্যবসা) এক প্রকার ব্যবসা; যাতে মূল্য ও পণ্য উভয় পাওয়া যায়। এতে কেবল টাকা-পয়সারই কারবার হয় না। অর্থাৎ, টাকার পরিবর্তে টাকার বিনিময় হয় না। পক্ষান্তরে সূদভিত্তিক ঋণের (ব্যাংকের) কারবারে নগদ অর্থই সবকিছু। বরং নগদ অর্থই এর আসল উদ্দেশ্য। অর্থাৎ টাকার পরিবর্তে টাকার বিনিময় হয়; যা হাদীসের ভাষায় ‘রিবাল ফায্ল’।

খ- ‘সালাম’ ব্যবস্যয় ক্রেতা প্রত্যেক বারেই লাভবান হতে পারে না। কেননা, অধিকাংশ দেখা যায় যে, ক্রীতপণ্য নেবার সময় তার মূল্য পড়ে গেছে। আবার কখনো বেড়েও থাকে। সুতরাং ‘সালাম’ ব্যবসায় লাভের গ্যারান্টি থাকে না। তাছাড়া সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে যে সব আপদ-বিপদ ও লাভ-নোকসান সামনে আসে, তাও তাতে বিদ্যমান। কিন্তু সূদভিত্তিক ঋণের ব্যাপারটা ঠিক এর বিপরীত। এতে পূর্ব থেকেই লাভ ও মুনাফার গ্যারান্টি থাকে এবং কোন প্রকারের আপদ-বিপদ অথবা ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে না।

গ- ‘সালাম’ ব্যবসায় বাণিজ্য, কৃষিকার্য, শিল্পকর্ম প্রভৃতি আরো কল্যাণমূলক কর্মে এক ধরনের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা দান করা হয় এবং তা জীবন-তরীকে উন্নয়ন-পথে অগ্রসর করতে ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে প্রগতিশীল করতে বড় সহায়ক। পক্ষান্তরে সূদভিত্তিক ঋণের কারবারে এ কথা পাওয়া যায় না। উল্টা এতে বাজার-মন্দা সৃষ্টি হয়। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য কর্মের উন্নয়ন ব্যাহত হয় এবং এর ফলেই বাণিজ্যিক উদ্যম শীতল হয়ে নিশ্চল অবস্থায় পর্যবসিত হয়। (বিনা পরিশ্রমে টাকা এলে কে যাবে আর পরিশ্রম করতে?)

উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনায় একথাই প্রমাণিত হল যে, উক্ত যুক্তি উপস্থাপিত করেও সূদ হালালকারিগণ সরলমনা মানুষদের চোখে ধুলো দিচ্ছেন এবং তাদেরকে নোংরা, গর্হিত ও অসৎকর্মের দিকে দেদার আহ্বান করে যাচ্ছেন।